অনলাইন ডেস্ক ◑ পারভেজের বয়স ১৭। এর আগেও সে জেল খেটেছে। সে জানতো, বয়স কম হওয়ার তার সাজা কম হবে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তার বাবাসহ অন্য আসামিদের বাঁচাতে চেয়েছিল সে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। গাজীপুরের শ্রীপুরে একই পরিবারের চার জনকে হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এদের মধ্যে পারভেজের বাবাও রয়েছে।
তবে দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার সিদ্ধান্ত পারভেজ নিজেই নিয়েছিল, নাকি পরিবারের সদস্যদের চাপে পড়ে বাধ্য হয়েছিল, তা নিশ্চিত জানাতে পারেননি তদন্ত কর্মকর্তারা।
পারভেজ ছাড়াও এ ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা হলো, কাজিম উদ্দিন (৫০), হানিফ (৩২), বশির (২৬), হেলাল (৩০), এলাহি মিয়া (৩৫)। মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) দুপুর থেকে বুধবার (২৯ এপ্রিল) সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে কাজিম উদ্দিন হলো পারভেজের বাবা।
এর আগে ২৬ এপ্রিল রাতে শ্রীপুর উপজেলার আবদার এলাকা থেকে পারভেজকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে গ্রেফতার করে গাজীপুর জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। একাই চারটি খুন করেছে বলে সোমবার (২৭ এপ্রিল) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে পারভেজ।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ এপ্রিল গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজার (আবদার) এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে প্রবাসী রেদোয়ান হোসেন কাজলের স্ত্রী স্মৃতি আক্তার ফাতেমা (৩৮), বড় মেয়ে সাবরিনা সুলতানা নুরা (১৬), ছোট মেয়ে হাওয়ারিন (১৩) ও প্রতিবন্ধী ছেলে ফাদিলের (৮) গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
চার জনকে হত্যা ও ধর্ষণের অপরাধ থেকে বাবা কাজিম উদ্দিনসহ অন্যদের বাঁচানোর জন্য পারভেজ নিজেই চার জনকে হত্যার দায় নিয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে পারভেজ ও গ্রেফতার হওয়া পাঁচ ব্যক্তি সবাই চার খুনের সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক লে. কর্নেল মো. সারওয়ার-বিন-কাশেম।
বুধবার (২৯ এপ্রিল) বিকালে র্যাব সদর দফতরে আয়োজিত অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সারওয়ার-বিন-কাশেম। আসামিদের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আসামিরা সবাই মাদকসেবী। কাজিম পেশায় রিকশাচালক, হানিফ পোশাক শ্রমিক, বশির অটোরিকশাচালক, হেলাল ভাঙারি বিক্রেতা, এলাহি শ্রমিক। তারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় চুরি ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধ করে আসছিল। ভিকটিমদের বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় নিয়মিত জুয়া, মাদক সেবন ও আড্ডা দিতো তারা।’
ভিকটিম স্মৃতি আক্তার ফাতেমার স্বামী মালয়েশিয়া থেকে ২০-২২ লাখ টাকা পাঠিয়েছে। এমন ধারণা থেকে ওই বাড়িতে ডাকাতির পরিকল্পনা করে কাজিম ও হানিফ। এরপর অন্য আসামিদের ডেকে নিয়ে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান র্যাব কর্মকর্তা।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সারওয়ার-বিন-কাশেম বলেন, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৩ এপ্রিল রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাড়ির পেছনে সবাই জড়ো হয়। প্রথমে পারভেজ ভেন্টিলেটর দিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। এছাড়া, হানিফ ভবনের পাশে থাকা মাদারগাছ ও পাইপ বেয়ে ছাদে ওঠে এবং সিঁড়ির ঢাকনা খুলে বাড়ির ভেতরে ঢোকে। এরপর বাড়ির পেছনের ছোট গেটটি খুলে দেওয়ার পর বাকিরা ভেতরে প্রবেশ করে।’
অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, আসামিরা বাড়ির ভেতরে ঢোকার পর প্রথমে স্মৃতি আক্তার ফাতেমার ঘরে যায়। বিদেশ থেকে তার কাছে আসা টাকাগুলো দিতে বলে আসামিরা। এত টাকা নাই জানিয়ে ৩০ হাজার টাকা আসামিদের হাতে তুলে দেন ফাতেমা। তার স্বর্ণালঙ্কারগুলোও ছিনিয়ে নেয় আসামিরা। এ সময় বাড়ির অন্য কক্ষগুলোও তছনছ করে তারা। মা স্মৃতি আক্তার ফাতেমাসহ দুই মেয়েকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে আসামিরা। এরপর তাদের গলাকেটে হত্যা করা হয়। ছোট ছেলে ফাদিল (৮) কথা বলতে পারে না, সে প্রতিবন্ধী। তাকে হত্যা করবে কিনা এ নিয়ে প্রথমে দ্বিমত তৈরি হয় আসামিদের মধ্যে। পরবর্তীতে কোনও সাক্ষী রাখা যাবে না—এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকেও হত্যা করা হয়।
র্যাব জানায়, গ্রেফতার হওয়া ছয় জন ছাড়াও এই হত্যা ও ধর্ষণের সঙ্গে আরও কয়েকজন জড়িত রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-