উপকূল এখনও অরক্ষিত, বেহাল বেড়িবাঁধ

বাংলা নিউজ ◑
আজ ভয়াল ২৯ এপ্রিল। এর মধ্যে কেটে গেলো ২৯ বছর। চট্টগ্রামের উপকূলের ওপর দিয়ে ১৯৯১ সালের এই দিনে বয়ে যাওয়া প্রলংকরী ঘূর্ণিঝড়ের কথা এখনও ভুলেননি উপকূলবাসী।

উপকূলের অধিবাসীরা জানান, কালবৈশাখীর এই সময়টাতে আকাশে মেঘ দেখলেই উপকূলীয় ইউনিয়নের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশংকায় নিজেদের জানমাল ও ঘরবাড়ি রক্ষা করা নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়।

জানা গেছে, আনোয়ারা, সন্দ্বীপ, বাঁশখালী, মিরসরাই, সীতাকুণ্ড ও কর্ণফুলী উপজেলার ৫৮টি ইউনিয়ন দুর্যোগের ঝুঁকিতে আছে। সাগর ও নদী তীরবর্তী এসব ইউনিয়নের মধ্যে কিছু অংশে বেড়িবাঁধ নির্মিত হলেও বাঁধের আওতায় না আসায় অনেক এলাকা এখনও অরক্ষিত।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত পতেঙ্গা ও হালিশহর, আনোয়ারা উপজেলার পোল্ডার নম্বর-৬২ (পতেঙ্গা), পোল্ডার নম্বর-৬৩/১এ এলাকায় একটি প্রকল্প চলমান আছে। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২০ কোটি টাকা।

আনোয়ারা, মিরসরাই, বাঁশখালী, সীতাকুণ্ড ও সন্দ্বীপ উপজেলায় ৫টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এর মধ্যে উপকূলীয় সন্দ্বীপ, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই উপজেলায় পোল্ডার নম্বর ৬১/১, ৬১/২ ও ৭২ অংশে ভাঙন প্রতিরোধ ও নিষ্কাশন এবং সেচ ব্যবস্থা উন্নয়নে একটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৫ কোটি টাকা।

মিরসরাই উপজেলায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের লক্ষ্যে ‘চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা) বন্যা নিয়ন্ত্রণ সড়ক কাম বেড়িবাঁধ প্রতিরক্ষা এবং নিষ্কাশন’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটির আওতায় প্রয়োজনীয় অবকাঠামোসহ ২২.৫০০কিলোমিটার সুপার ডাইক নির্মাণের ফলে প্রায় ১১ হাজার ৬২৭ একর এলাকায় বিভিন্ন ধরনের শিল্প কল-কারখানা, অবকাঠামো, অফিস প্রভৃতি স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা।

অরক্ষিত বাঁশখালী উপকূল।বাঁশখালীতে পোল্ডার নম্বর-৬৪/১এ, ৬৪/১বি ও ৬৪/১সি এর সমন্বয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মিত হচ্ছে। ব্যয় বাড়িয়ে ও প্রকল্প সংশোধন করে ৩৬টি প্যাকেজের মধ্যে ৩৪টি প্যাকেজের কাজ চলমান রয়েছে। বাকি দুটি গ্রুপের কাজও সম্প্রতি কাজ শুরু হয়েছে। এ প্রকল্পের ব্যয় হচ্ছে ২৯১ কোটি টাকা।

সন্দ্বীপ উপজেলার পোল্ডার নম্বর-৭২ এর ভাঙনপ্রবণ এলাকায় স্লোপ প্রতিরক্ষার অংশ হিসেবে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯৭ কোটি টাকা।

জানা যায়, সন্দ্বীপের মুছাপুর, মগধরা, মাইটভাঙ্গা, সারিকাইত, আজিমপুর, উড়িরচর অংশ দিয়ে বর্ষা মৌসুমে প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানি প্রবেশ করে। এসব এলাকার সাড়ে ৩ লাখ মানুষ এখনও দুর্যোগ ঝুঁকিতে আছে।

সীতাকুণ্ডের ছলিমপুর, ভাটিয়ারি, সোনাইছড়ি, কুমিরা, বাঁশবাড়িয়া, মুরাদপুর, বাড়বকুণ্ড, সৈয়দপুরের প্রায় ৩০ কিলোমিটার সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা অরক্ষিত। অবশ্য সম্প্রতি বাঁশবাড়িয়া অংশে কিছু কিছু এলাকায় কাজ হয়েছে।

এছাড়া মিরসরাই উপজেলার সাহেরখালী, হাইতকান্দির অংশবিশেষ, ওসমানপুর, মঘাদিয়া, কাটাছড়া, মায়ানী ইউনিয়ন দুর্যোগ ঝুঁকিতে আছে।

বাঁশখালীর সাগর ও শঙ্খ নদীর তীর ঘেঁষে থাকা ৮টি ইউনিয়ন দুর্যোগ ঝুঁকিতে আছে। এরমধ্যে সাগর উপকূলে চারটি ও নদীর তীরবর্তী দুইটি ইউনিয়নের কিছু কিছু অংশে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ হলেও এখনও ছনুয়া, কাথরিয়া, খানখানাবাদ, গন্ডামারার অনেক এলাকা অরক্ষিত।

আনোয়ারার জুঁইদন্ডী, রায়পুর, বারাশত ইউনিয়নও দুর্যোগ ঝুঁকিতে আছে। প্রতিবছর জোয়ারের পানি প্রবেশ করে বিশাল এলাকা পানিতে ডুবে যায়। পাউবোর প্রকল্প কাজ শেষ না হওয়ায় এ উপজেলা এখন দুর্যোগের ঝুঁকিতে আছে।

পাউবো দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শামসুল করিম জানান, ‘আমার মেয়াদকালীন সময়ে সবগুলো উপজেলায় দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। অধিকাংশ এলাকায় কাজও হয়েছে।’

আরও খবর