বৈশ্বিক মহামারি করোনায় লকডাউনে প্রায় পুরো বিশ্ব। এরই মাঝে বছর ঘুরে আবারও আগমন করলো সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজান। মাহে রমজানে সিয়াম পালন করা প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিম নর-নারীর ওপর ফরজ। সিয়াম শুধু অবশ্য পালনীয় ইবাদতই নয়, বরং আত্মিক উন্নতি ও নৈতিক উৎকর্ষ সাধনেও সিয়ামের ভূমিকা অনন্য।
রমজান রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। এ মাস মুমিনের জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে বিশেষ উপহার। সাহরি, ইফতার, তারাবি, কোরআন তিলাওয়াত ও দান-সদকার মাধ্যমে অনন্য হয়ে উঠে পবিত্র এ মাস। এবারে আমরা পেতে যাচ্ছি সম্পূর্ণ ভিন্ন এক রমজান। কতটা দুর্যোগ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে আমরা কেউ তা জানি না। তাই এই বছরের রমজানকে যথাযথ মূল্যায়ন করে তাকওয়া অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। মূলত সিয়ামের উদ্দেশ্যই হলো তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে আত্মিক পরিশুদ্ধি লাভ করা। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।’ -সূরা বাকারা: ১৮৩
করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশের মানুষ এখন গৃহবন্দী। অনেকেরই উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। বিপাকে পড়েছেন সমাজের দরিদ্র জনগোষ্ঠী। তাই অনেকেই সামান্য খাবারের আশায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছুটছেন বিত্তবানদের দুয়ারে দুয়ারে। কেউ সাহায্য পাচ্ছেন, আবার কেউ বঞ্চিত হয়ে ঘরে ফিরছেন। অনেকেই আছেন, যারা পেটে খাবার না থাকলেও লজ্জায় কারও কাছে হাত পাততে পারেন না। আমাদের উচিত এ মানুষগুলোকে খুঁজে বের করা। তাদের প্রতি সহানুভূতি ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া। তাদের সাহরি ও ইফতারের ব্যবস্থা করা। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মানুষ তারা, যারা মানুষকে খাওয়ায়।’ -মুসনাদে আহমদ
মূলত সিয়াম সাধনার মাধ্যমেই মানুষের পশু প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে নৈতিকতা ও আত্মিক উন্নতি সাধন সম্ভব। সিয়াম পালনের মাধ্যমে যদি অন্তরে আল্লাহভীতি ও আত্মশুদ্ধি অর্জন করা না যায় তবে নিছক উপবাস দ্বারা কী ফায়দা হতে পারে?
মাহে রমজানে সালাতুত তারাবি একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। যদিও মসজিদে সালাতুত তারাবি আদায়ের জন্য আমাদের হৃদয় ব্যাকুল, তবুও এ পরিস্থিতিতে আমাদের ঘরেই নামাজ আদায় করতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের করুণায় ঘরের নামাজেই মসজিদে নামাজ আদায়ের সওয়াব পাওয়া যাবে। রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘কোনো বান্দা যদি কোনো নেক কাজ নিয়মিত পালন করে। আর কোনো রোগ বা ভ্রমণের কারণে সে আমল করতে না পারে তাহলেও ওই আমলের সওয়াব তার আমলনামায় যোগ হতে থাকবে।’ -সুনানে আবু দাউদ
রোজা-তারাবির পাশাপাশি পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের প্রতিও আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। পরিবারের যারা কোরআন তেলাওয়াত করতে জানে না, তাদের শেখার ব্যবস্থা করতে হবে।
সিয়াম একজন ব্যক্তির ওপর বিভিন্ন আচরণগত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। মিথ্যা কথা বলা, পরনিন্দা, পরচর্চা, ধোঁকা দেওয়া, প্রতারণা করা, হিংসা-বিদ্বেষ, অশ্লীলতা- এসব কর্মকাণ্ড এমনিতেই নিষিদ্ধ। কিন্তু সিয়াম পালনকালে এগুলো পরিহারের চর্চা হয় অনেক বেশি। এ মর্মে রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করেও মিথ্যা কথা বলা, পরনিন্দা ও অন্যান্য পাপাচার থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারলো না তার পানাহার পরিত্যাগ করা আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ -সহিহ বোখারি
মাহে রমজান আমাদের সবার জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসুক। আমাদের চিন্তা-ভাবনা, কর্ম ও আচরণ উজ্জ্বল হয়ে উঠুক মাহে রমজানের শিক্ষায়। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে এ তাওফিক কামনা করছি। আমিন!
মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী: প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-