বার্তা২৪ ◑
তাদের পিতৃপ্রদত্ত মূল নাম চাপা পড়েছে বাহারি উপাধিতে। কারো পরিচয় ‘মাদক সম্রাট’, কেউ ‘ইয়াবা কিং’। কাউকে কাউকে মানুষ ভয়ে বলে ‘ত্রাস’। অনেকেই পরিচালনা করে সিন্ডিকেট। বিভিন্ন সেক্টর ও এলাকার গডফাদার তারা।
কারো অধীনে পরিচালিত হয় সীমান্তের চোরাচালান। কেউ কন্ট্রোল করে ইয়াবা ও মাদক ব্যবসা। দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল কারো কারো কব্জায়। পরিবহন সেক্টর মুঠোবন্দী করে রেখেছে কয়েকজন। নদী, পাহাড়, হাট-বাজার, বস্তি নিয়ন্ত্রণ করে গডফাদারদের কেউ কেউ। কারওয়ান বাজারসহ দেশের পণ্য ও বাজার দখল করে রেখেছে কেউ কেউ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে।
এদের নাম সবাই জানেন। অতীতে ছোট-বড় ঘটনায় হুঙ্কার দিয়ে মাঠে নেমেছে তারা। তাদের বিরুদ্ধে কিছু বললেই গর্জে উঠেছে। কোনো অভিযোগ করা হলে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে উড়িয়ে দিয়েছে। শত অপকর্মের পরেও কেউ তাদের টলাতে পারেনি। মোটেও ভাঙতে পারেনি গডফাদারদের সাম্রাজ্য। একচুল নড়ানো যায়নি সিন্ডিকেটের ভিত্তি। তাদের সম্পদ ও শক্তির কাছে সবাই যেন অসহায়।
সেই পরাক্রমশালী গডফাদাররা এখন কোথায়? করোনাভাইরাসের আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে থেমে গেছে তাদের বাতচিত। দেখা যাচ্ছেনা তাদের উপস্থিতি। তাদের কোনো উচ্চবাচ্য শুনতে পাচ্ছেনা কেউই। সাধারণ মানুষ তো বটেই, নিজস্ব বাহিনীর লোকজনও গডফাদারদের খোঁজ পাচ্ছেনা।
মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে, পরিবহন শ্রমিকদের পাশে বিপদের দিনে কেউ নেই। তাদের রুটি-রোজগার বন্ধ। অথচ এইসব শ্রমিকের মাথায় পা দিয়ে যারা গডফাদার হয়ে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, তাদের দেখা মিলছে না।
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব বিস্তার করার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানের ও বিভিন্ন সেক্টরের গডফাদার নামধারীরা বিরাট বিরাট শোডাউন করে মাঠ কাঁপিয়েছে। প্রশাসনকে চাপে রেখে নিজেদের আখের গুছিয়েছে। মিডিয়াকে নিত্য হুমকি-ধমকি দিয়েছে। তারা এখন শুধু নীরবই নয়, উধাও।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় মানুষ মরিয়া হয়ে লড়ছে। সিভিল প্রশাসন রাতদিন কাজ করছে। পুলিশ প্রশাসনের ঘুম নেই। ডাক্তার ও চিকিৎসাকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করছেন। এমন অবস্থায় হাজার হাজার কোটি টাকা ও অঢেল সম্পদ দখলকারী গডফাদারা একেবারেই নিশ্চুপ ও আত্মগোপনে ।
অথচ এই গডফাদাররা স্বাভাবিক সময়ে মানুষকে প্রতিনিয়ত শোষণ করেছে। হাতিয়ে নিয়েছে প্রচুর অর্থ, বিত্ত, সম্পদ। তাদের দখলে নদী, সরকারি ভূমি, বনাঞ্চল, রেলের জায়গা, খাস জমি। সবকিছু আয়ত্তে নিয়ে তারা নিজেদের নিরাপত্তা বিধান করে এই ঘোরতর জাতীয় দুর্যোগের সময়ে সটকে পড়েছে।
সন্দেহ নেই, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার তারা স্বমূর্তি ধারণ করে মাঠে নামবে। শুরু করবে ত্রাসের রাজত্ব, ক্ষমতার অপব্যবহার, লুটতরাজ ও সন্ত্রাস। মাফিয়ার মতো ছোবল মারবে এইসব গডফাদাররা।
আশ্চর্যের বিষয় হলো এটাই যে, বড় বড় গডফাদাররা সটকে গেলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট গডফাদার ও মাফিয়ার উদ্ভব হচ্ছে করোনা উপদ্রুত এহেন সঙ্কুল পরিস্থিতিতেও। গডফাদারদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে হাতের কাছে যা পাচ্ছে, তা-ই ছিনিয়ে নিচ্ছে তারা। তাদের থাবা পড়ছে ত্রাণের চালে। দরিদ্রদের দেওয়ার জন্য সরকার প্রদত্ত বস্তার বস্তা চাল পাওয়া যাচ্ছে তাদের কাছে। এমন মানবিক বিপর্যয় ও চরম বিপদের সময়ও এরা কেড়ে নিচ্ছে মানুষের খাবার।
করোনার বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে ছোট-বড় গডফাদার নামধারীদের অবৈধ সম্পদ ও অর্থ কাজে লাগানো হলে ক্ষুধার্ত মানুষ খাদ্য পেতো, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যসেবা কাঠামো উন্নত হতো। নিদেন পক্ষে তাদের টাকায় কিছুটা হিস্যা পেয়ে বিপদের দিনে কর্মী-সমর্থকরা কিছুটা হলেও সহায়তা পেতো। কিন্তু সেটা আদৌ সম্ভব হচ্ছেনা। কারণ, তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস যেমন অধরা ও অচেনা চেহারায় মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে আছে, মানুষকে শোষণকারী গডফাদার-মাফিয়ারাও তেমনি অধরা, অদেখা হয়ে থাকবে? করোনা নামক বিপদের সঙ্গে সঙ্গে গডফাদার-মাফিয়া উপদ্রবের বিরুদ্ধেও লড়াই চালানো যায়না? একই যুদ্ধে সম্মিলিতভাবে অবতীর্ণ হয়ে নির্মূল করা যায়না গণশত্রু করোনাভাইরাস ও গডফাদার-মাফিয়াদের?
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-