শাহীন আবদুর রহমান
——————————
কেউ কেউ বলছিলেন, পরীক্ষা ঠিক নাই, মেশিন টেস্ট করা দরকার! কেউ কেউ বললেন, ভাল রোগীকে খামোখা করোনা বানিয়ে নিরর্থক হয়রানি করা হয়েছে। ভাল কথা।
আমরা জ্ঞানী ব্যক্তিদের নানাবিধ মতামত প্রত্যক্ষ করলাম। যদিও তাদের কেউই ডাক্তার নন, এপিডেমিওলজিস্ট তো ননই। তবুও মনে মনে ভাবছিলাম, আমাদেরটা ভুল হোক, তাদের কথাই সত্যি হোক।
না। সেটা হয়নি। বাংলাদেশে করোনা আমদানির ৪১ তম দিনে এবং কক্সবাজারে আমদানির ২৪ তম দিনে আজ ৬৩ স্যাম্পলের মধ্যে ৪ জন পজিটিভ। জানিনা তারা এখনো বিশ্বাস করেন কিনা। তা জানার খুব একটা প্রয়োজন ও নাই। কারণ তাদের বিশ্বাসে আর কিছুই এসে যায়না। খেলা অলরেডি শুরু হয়ে গেছে। চোখ বন্ধ করে তো আর প্রলয় বন্ধ করা যায় না!
বলাই বাহুল্য, কক্সবাজারে এই করোনা কিন্তু ভিন্ন পথে এসেছে। এই করোনার আমদানি হয়েছে ট্রাক এবং এম্বুলেন্স এর মাধ্যমে। কেউ ধর্মীয় সফর শেষ করে ফেরত এসেছেন, কেউ রুগী সেজে ফেরত এসেছেন, কেউ এসেছেন ব্যবসায়িক কাজ করে। উপলক্ষ বা মাধ্যম যাই হোক ঘটনা যা ঘটার তা তো ঘটে গেছে।
এখন উপায় কি তাহলে?
হা হুতাশ করব? পারস্পরিক দোষারোপ করব? নাকি সাহসিকতার সাথে মোকাবেলা করব?
আমার মতে মোকাবেলা করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ, The show is already on! খেলা অলরেডি শুরু হয়ে গেছে।
প্রশ্ন হলো, কিভাবে মোকাবেলা করব? উত্তর হলো, বিশ্বাস।
শুধুমাত্র বিশ্বাস করতে হবে যে, করোনা বলে কিছু আছে, এটা ডাক্তার কিংবা মিডিয়ার সৃষ্টি নয়। এটা দেখা যায় না সত্যি, কিন্তু দৃশ্যমান অনেক অস্ত্র বা হিংস্র জানোয়ারের চেয়েও অনেকগুন বেশি শক্তিশালী। এই বিশ্বাস বা একিন মনের মধ্যে গেঁথে নিতে হবে। তাহলেই মন এবং শরীরের সমস্ত সিস্টেম একটিভেটেড হয়ে যাবে। একটা পজিটিভ ভয় কাজ করবে। যে পজিটিভ ভয় করোনা পজিটিভ হওয়া থেকে আমাদের বাঁচাতে সহায়তা করবে। চক্রবৃদ্ধি হারে এই করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া থেকে বাঁচাতে সহায়তা করবে।
আমাদের মনে তখন নাড়া দিবে যে, পুলিশ প্রশাসনকে ফাঁকি দেয়া, লুকোচুরি খেলা মানে নিজেকেই ফাঁকি দেয়া, করোনার সাথে কাবাডি খেলা। আমরা তখনই বুঝতে পারবো যে, দল বেধে চায়ের দোকানে আড্ডা দেয়া মানে করোনার সাথে আড্ডা দেয়া। আমাদের তখনই বিশ্বাস হবে ঈমানী জজবায় উদ্দীপ্ত হয়ে কোরআন হাদিস রিয়্যালিটি উপেক্ষা করে শ’খানেক লোক নিয়ে মসজিদে যাওয়া মানে গোটা এলাকার জানাজা পড়ে ফেলা। ডাক্তারের কাছে হিস্ট্রি গোপন করা মানে নিজেই সপরিবারে হিস্ট্রি হয়ে যাওয়া।
শুধু এটুকু বিশ্বাস মনে জাগ্রত করতে হবে। আর কিছু না। তখন আর লকডাউন করা লাগবেনা, গলা ফাটিয়ে চিতকার করার দরকার হবে না। টেনেও আর ঘরের বাইরে বের করা যাবে না।
হন্তারক এর কাছ থেকে হয়তোবা কায়দা কানুন করে বাঁচানো যায়। কিন্তু কেউ আত্মহত্যা করতে চাইলে তাকে বাঁচানো খুব কঠিন। করোনা আপনার দোরগোড়ায়। তাই সিদ্ধান্ত আপনার। আপনার নিরাপত্তার জন্যেই আমরা বাইরে অবস্থান করছি। কেউ হাসপাতালে, কেউ রাস্তায়, কেউ জনপদে। শুধু আপনাকে নিরাপদ রাখার জন্যে, আপনার হয়ে অদৃশ্য দানবের সাথে যুদ্ধ করার জন্যে।
তাই এখনই সময়, সিদ্ধান্ত নেবার। আপনার জন্যে, আমাদের সবার জন্যে নিরাপদে ঘরে অবস্থান করার। এই যুদ্ধে আমাদের জিততেই হবে। কারণ যুদ্ধে হার মানে মৃত্যু। একটি দুটি নয়, অগণন মৃত্যু, মৃত্যুর মিছিল।
লেখক ◑
ডা. শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী
প্রধান জরুরি বিভাগ ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার।
জেলা সদর হাসপাতাল,কক্সবাজার
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-