মনতোষ বেদজ্ঞ :
কক্সবাজার জেলায় একদিনেই চার জন করোনা আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে তিন জন মহেশখালীর উপজেলার বাসিন্দা এবং একজন টেকনাফ উপজেলার বাসিন্দা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অনুপম বড়ুয়া। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আক্রান্ত ৪ জনের মধ্যে ২ জন ঢাকা থেকে ও দুই জন নারায়নগঞ্জ থেকে ফিরেছেন সম্প্রতি।
মহেশখালীর শাপলাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, করোনায় আক্রান্ত হিসেবে সনাক্ত হওয়া শাপলাপুরের মুকবাকি গ্রামের আবু হানিফ ও মুরুংকাটা গ্রামের রায়হান পোশাক শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন ঢাকায়। সম্প্রতি তারা বাড়ি ফিরেন এবং বাড়িতেই বসবাস করেন। আশংকার বিষয় হলো, আক্রান্ত আবু হানিফের পিতা বশির আহমদ শাপলাপুর বাজারে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। তিনি বিগত এক সপ্তাহে অসংখ্য মানুষের সংস্পর্শে এসেছেন।
অপরদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, করোনায় আক্রান্ত বড় মহেশখালী ইউনিয়নের মিয়াজিপাড়[ গ্রামের সাদিয়া হালিমার বাপের বাড়ি নারায়গঞ্জে। কয়েকদিন আগে তিনি নারায়গঞ্জ থেকে মহেশখালীর শ্বশুর বাড়িতে ফিরেছেন। আক্রান্ত অপরজন টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের মারিশবনিয়া গ্রামের মোহাম্মদ হোসেন আম ব্যবসায়ী। তিনিও সম্প্রতি নারায়নগঞ্জ থেকে ফিরেছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
মহেশখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বাবুল আজাদ জানান, ‘মহেশখালীর ৩ জন করোনা আক্রান্ত হিসেবে সনাক্ত হওয়ার পর সেই ৩ জনের বাড়ি এবং আশপাশের বাড়িগুলো লকডাউন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মহেশখালীবাসীকে নিরাপদ রাখতে আমরা রাতদিন পরিশ্রম করছি। নাওয়া-খাওয়ার পর্যন্ত ঠিক নেই। মানুষকে এতো বুঝাচ্ছি, কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। এবার হলেও অন্তত মহেশখালীবাসীর আরও সতর্ক হওয়া উচিত, ঘরে থাকা উচিত।’
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা টিটু চন্দ্র শীল সাংবাদিকদের জানান, টেকনাফের কিছু আম ব্যবসায়ী ও সুপারী ব্যবসায়ী প্রায় সময় নারায়গঞ্জ আসা-যাওয়া করতেন। সম্প্রতি নারায়নগঞ্জ থেকে টেকনাফে ফেরা তেমন কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে এবং হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য কঠোরভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। করোনা আক্রান্ত হিসেবে সনাক্ত হওয়া মোহাম্মদ হোসেন আম ব্যবসায়ী। তার বাড়ি এবং আশপাশের বাড়িগুলো লকডাউন করা হয়েছে।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অনুপম বড়ুয়া জানান, রোববার কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবে ৬৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪ জনের রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়া গেছে। শনিবার কক্সবাজার সদর হাসপাতাল, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরসহ জেলার উপজেলা ও পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ফ্ল্যু সেন্টার থেকে ৭৩ জন সন্দেহভাজন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।
এনিয়ে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবের পরীক্ষায় ৫ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেল। আগে পাওয়া একজন করোনা আক্রান্ত রোগী হলেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু এলাকার কুলাল পাড়ার আবু ছিদ্দিক।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ ডা. অনুপম বড়ুয়া বলেন, কক্সবাজার ল্যাবে প্রতিদিন ৯৬ জন রোগীর নমুনা পরীক্ষার সুযোগ থাকলেও উপজেলা পর্যায় পর্যাপ্ত পরিমাণ নমুনা আসছে না। তবে রোববার অনেক বেশি নমুনা পাওয়া যায়।
তিনি জানান, রোববার পরীক্ষা করা ৬৩টি নমুনার প্রতিবেদন ঢাকায় আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। ওখান থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-