ইমাম খাইর ◑
বঙ্গোপসাগর থেকে উদ্ধার ৩৯৬ রোহিঙ্গা মিয়ানমারের একটি ট্রলারে ৫৮ দিন পর্যন্ত ভাসমান ছিল। এই সময়ে তারা অভুক্ত, অসুস্থতা, টেনশন, ক্ষুধায় কংকালসার প্রায়।
৩৯৬ রোহিঙ্গা বিভিন্ন ক্যাম্প হতে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে সমুদ্রে পাড়ি জমায়। কিন্তু মালয়েশিয়া সমুদ্র সীমানায় পৌঁছলেও ঢুকতে পারে নি। দেশটির কোস্ট গার্ড তাদেরকে বাংলাদেশের দিকে ফেরত দেয়।
পরবর্তীতে তারা মায়ানমারে প্রবেশের চেষ্টা করলে মায়ানমার নৌবাহিনী তাদের আটক করে বাংলাদেশের দিকে পাঠায়।
একটি ছোট্ট ট্রলারে ১৫০ জন পুরুষ, ১৮২ জন মহিলা ও ৬৪ জন শিশু ৫৮ দিন পর্যন্ত কিভাবে ভাসমান অবস্থায় সময় পার করেছে, তা কল্পনাতীত। উদ্ধার হওয়ার পর তারা যেন একটি নতুন জীবন পেয়েছে।
কথাগুলো উদ্ধার হওয়া জুনাইদ ও জুবাইরের।
ভিকটিমদের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) এসব তথ্য দিয়েছেন কোস্ট গার্ড পূর্ব জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা এম হায়াত ইবনে সিদ্দিক (লেঃ বিএন)।
বুধবার (১৫ এপ্রিল) দিবাগত রাত ৯টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডে মেরিন ড্রাইভ রোডের পশ্চিম পার্শ্বে জাহাজপুরা ঘাট এলাকা মিয়ানমারের একটি ট্রলার থেকে তাদের উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড।
বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) তাদের ইউএনএইচসিআরের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
এম হায়াত ইবনে সিদ্দিক জানান, বাহারছড়া জাহাজপুর ঘাট থেকে কিছু দূরে একটি ফিশিং ট্রলার ভাসমান অবস্থায় রয়েছে- এই তথ্যের ভিত্তিতে অভিযানে গিয়ে ফিশিং ট্রালারটিকে উদ্ধার করে ঘাটে নিয়ে আসে কোস্ট গার্ড।
এ সময় ট্রলারটিতে ৩৯৬ রোহিঙ্গা মায়ানমার নাগরিকদেরকে পাওয়া যায়। পরবর্তীতে পুলিশ ও বিজিবির সহায়তায় তাদেরকে ঘিরে রাখা হয় এসময় উদ্ধারকৃত রোহিঙ্গা মায়ানমার নাগরিকদের খাবার প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসা ও সেবা প্রদান করে।
উদ্ধারকৃত এক জনের সাথে কথা বলে তারা জেনেছে, বিগত ৫৮ দিন যাবৎ ট্রলারটি সাগরে ভাসছিল। উদ্ধারকৃত রোহিঙ্গা মায়ানমার নাগরিকরা বিভিন্ন ক্যাম্প হতে মালয়েশিয়া যাবার উদ্দেশ্যে সমুদ্রে পাড়ি জমায়। কিন্তু মালয়েশিয়া সমুদ্র সীমানায় গেলে মালয়েশিয়ান কোস্ট গার্ড তাদের আটক করে। পরে তাদেরকে আটক করে কিছু খাবার, পানি ও জ্বালানী প্রদানপূর্বক বাংলাদেশের দিকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়।
পরবর্তীতে তারা সেখান থেকে চলে এসে মায়ানমারে প্রবেশের চেষ্টা করলে মায়ানমার নৌবাহিনী তাদের আটক করে বাংলাদেশের দিকে পাঠিয়ে দেয় বলে জানায় উদ্ধারকৃত একজন রোহিঙ্গা নাগরিক।
রোহিঙ্গাদের কয়েকজন জানিয়েছে, যাত্রাকালে তাদের সংখ্যা ৫১৫ জন ছিল। অসুস্থতা ও অভুক্ত থাকার দরুন ১১৯ জনের সলিল সমাধি হয়েছে গভীর সাগরে।
এদিকে ইউএনএইচসিআরের একটি সুত্র জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের বহনকারী জাহাজটি মালয়েশিয়ায় আটক করা হয়েছিল। পরে রোহিঙ্গাসহ জাহাজটিকে বাংলাদেশের দিকে ফেরত পাঠায় তারা। মালয়েশিয়া ফেরত উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে বেশীরভাগই অসুস্থ রয়েছেন। কোয়ারেন্টাইনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হবে তাদের। তারা দীর্ঘদিন সাগরে অনাহারে ছিল। আর বিশ্বজুড়ে চলমান করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে তাদেরকে ট্রানজিট পয়েন্টের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-