ডেস্ক রিপোর্ট ◑ কক্সবাজার লকডাউনের তিনদিন অতিবাহিত হয়েছে শনিবার। মধ্যবিত্ত ও আত্মসম্মানে অবিচল পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগে সময় পার করছেন। অনেকে জেলা প্রশাসনের হট লাইনে নক করেও সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।
শহর-গ্রামের প্রধান সড়কটি যান চলাচলে খোলা থাকলেও উপ-সড়ক গুলোর অনেকটাতে এখানো স্ব-উদ্যোগে ব্যারিকেড রয়েছে বলে দাবি করেছে স্থানীয় ভুক্তভোগীরা। অথচ জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনের নির্দেশনা, জরুরি প্রয়োজনে চলাচল বিঘ্নিত করে নিজ উদ্যোগে অভ্যন্তরীণ সড়কে ব্যারিকেড না দেয়ার। কিন্তু এসব জঞ্জালের কারণে জরুরি মুহূর্তে কোন যানবাহন যাতায়াত করতে পারছে না। হাসপাতালে নেয়া যাচ্ছেনা রোগীদের। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এ্যাম্বুলেন্স, জরুরি ওষুধ ও মেডিকেল পণ্য আনা নেয়া।
লকডাউনের পর থেকে শহরের চেয়ে গ্রামের চিত্র কঠিন হয়ে গেছে। সুবিধা-অসুবিধার কথা বিবেচনা না করেই, নিজেদের অপকর্ম জারি রাখতে যে যার ইচ্ছামতো লকডাউন দিচ্ছে। ফলে প্রায় প্রতিটি পাড়া, মহল্লা অবরুদ্ধ।
কক্সবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজে স্থাপিত ল্যাবে শনিবারেও ৮ জনের করোনা নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের ফলাফলও নেগেটিভ এসেছে বলে জানিয়েছেন মেডিকেলের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. অনুপম বড়ুয়া। ২ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া ল্যাবে শুক্রবার পর্যন্ত ১৩৭ জনের করোনা পরীক্ষার ফলও নেগেটিভ আসে।
শনিবার পর্যন্ত ১৪৫ জনের পরীক্ষার ফল নেগিটিভ আসে এবং ওমরাহ ফেরত ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজনের নমুনায় করোনার প্রাথমিক পজেটিভিটি পাওয়ার পর তারা এখন সুস্থ এবং আর কারো করোনা পজিটিভ সনাক্ত হয়নি বলে দাবি করেছেন কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান।
কক্সবাজারে ঘোষণা কৃত লকডাউন বাস্তবায়নে মাঠে কঠোরভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে সেনাবাহিনী ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান গাড়ি নিয়ে মাইকিং করেছে শনিবার সারাদিন। পাশাপাশি শহরের পাহাড়তলী রাহমানিয়া মাদ্রাসা মাঠে ১২০০ পরিবারে মানবিক সহায়তা বিতরণ করেছেন মেয়র। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে দরিদ্র, কর্মহীন পরিবারে সহায়তা পৌছে দিচ্ছে জেলা প্রশাসন। আবার নিজেদের উদ্যোগে খাবার পৌছে দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ।
কিন্তু, দৃশ্যমান এসবের পাশাপাশি, খাবার নিয়ে এখনো চরম দুর্ভোগে রয়েছেন বিভিন্ন এলাকার মধ্যবিত্ত বা আত্মসম্মানে চলতে চাওয়া কর্মজীবিরা। যারা বর্তমানে কর্মহীন বা এক ধরণের ছাটাই অবস্থায় রয়েছেন। এমন সব পরিবার তাদের লোকেশন জানালে বা দুর্ভোগের কথা জানালে জেলা প্রশাসন ভোগ্যপণ্য পৌছে দেয়ার কথা বললেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাহাড়তলীর ইসলামাবাদ এলাকার এক কর্মজীবী জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং মাইকিংয়ে প্রচার করা হয়েছিল, অভাবের কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসন কিংবা পুলিশ প্রশাসনের হটলাইনে কল বা এসএমএস দিলে দ্রুত সহায়তা পৌছে যাবে সংশ্লিষ্ট পরিবারে। কিন্তু গত ৮ তারিখে আমার ১০ সদস্যের পরিবারের দূর্ভোগের কথা উল্লেখ করে জেলা প্রশাসনের হটলাইন নাম্বারে এসএমএস দেয়া হলেও ১১ এপ্রিল বিকাল ৫টা পর্যন্তও কোন সহযোগিতা আসেনি।
একই ভাবে, শহরের রক্ষিত মার্কেট এলাকার আরেক ব্যক্তি জানান, ফজল মার্কেট এলাকায় ৫ খেটে খাওয়া মানুষের দুরাবস্থার কথা উল্লেখ করে তাদের নাম-মোবাইল নাম্বার ও পরিবারের সদস্য সংখ্যাসহ পুলিশ প্রশাসনের হটলাইনে এসএমএস করা হয় ৩০ মার্চ। ১১ এপ্রিল বিকাল ৫টা পর্যন্ত সেসব ব্যক্তিগণও কোন ধরণের সহযোগিতা পাননি। ভুক্তভোগীদের মতে, দলীয়-নির্দলীয় যত ত্রাণ দেয়া হয়েছে সেখানে গেলে কার পক্ষে এসেছি এবং টুকেন আছে কিনা জানতে চায়। কারো সাথে পরিচয় না থাকায় টুকে যোগাড় করা সম্ভব হয়না, ফলে ত্রাণও জুটেনি। কর্মহীন পরিবার-পরিজন নিয়ে অভুক্ত সময় যাচ্ছে।
যে কয়েকজনের সাথে মিডিয়াকর্মীদের যোগাযোগ আছে তারাই কেবল মনের আকুতিগুলো প্রকাশ করতে পারছেন, কিন্তু আরো অনেকে নিজের দুর্ভোগগুলো মনের ভেতর চাপিয়ে রেখে সময় পার করছেন।
লকডাউনের পরও পেটের দায়ে বাজারগুলো পুরোদমে সচল রয়েছে। হাত পাতা বা কখন সহযোগিতা অল্প আসবে তার জন্য অপেক্ষা না করে পরিবারের সদস্যদের মুখে আহার দিতে, বিকিকিনি করতে ঠিকই বাজারে আসছেন বিক্রেতারা। কক্সবাজার সদর উপজেলা গেইটের পান বাজারও নিয়ম মাপিক জমে উঠেছে শনিবারও। তবে যে যার মতোই নিরাপত্তা বজায় রেখেই সদায় সারতে চেষ্টা চালান বলে জানান ব্যবসায়ী আলী আকবর।
জেলা সদরের ঈদগাঁও, খুরুশকুল, চকরিয়া, পেকুয়া, রামু, উখিয়া, টেকনাফের অনেক এলাকায়ও একই চিত্র বলে দাবি করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, লকডাউন মানে এলাকায় ব্যারিকেড দিয়ে জটলা পাকিয়ে আড্ডা দেয়া নয়। নিজ নিজ অবস্থান থেকে দুরত্ব বজায় রেখে বাড়িতে অবস্থান করা। শৃঙ্খলালা বাহিনী পুরো জেলা চষে বেড়াচ্ছে। আমাদের কামনা প্রশাসনের শ্রমের বিনিময়ে সাধারণ মানুষগুলো নিরাপদ থাকুক, নিরাপদ থাকুক বাংলাদেশ। যারা নির্দেশনা মানবে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হটলাইনে নক করার পরও ত্রাণ না পাওয়ার বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, এমনটি হবার কথা নয়- কোথাও হয়তো গ্যাপ পড়ে গেছে। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-