আহমদ গিয়াস ◑
করোনা সতর্কতায় লকডাউনের কারণে নির্জীব কক্সবাজার শহরের পর্যটন এলাকা। সৈকতও জনমানব শূণ্য। আর এ নির্জন সৈকতই হয়ে ওঠেছে এখন প্রকৃতির রাজ্য।
সৈকতের উদ্ভিদগুলো এখন বিনাবাধায় ডালপালা মেলছে, সেখানে নেমেছে নানা জাতের পাখির ঢল। ঢেউয়ের গর্জন আর পাখির কলকাকলী ধ্বনির মাঝে এখন প্রকৃতির এক অন্য রকম অনুরনন।
করোনা লকডাউনে কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্রগুলো গত ১৮ মার্চ থেকে যেন মৃত্যুপুরী। লাখো মানুষের বিচরণে যে সৈকত ছিল সদা জনারণ্য; তা এখন জনমানব শূণ্য। কিন্তু সৈকতের এ নজিরবিহীন নির্জনতার পক্ষকাল পার হওয়ার আগেই ডানা মেলতে শুরু করেছে প্রকৃতির রাজ্য। এখন নির্জন সৈকতে গেলেই ধরা পড়ে প্রকৃতির রাজ্যের বাসিন্দাদের অবাধ রাজত্ব। এ স্বতন্ত্র বাস্তুরাজ্যের উদ্ভিদগুলো এখন নানা জাতের পাখি আর প্রাণীর বসবাসের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে চলেছে। আর সেই পরিবেশ পেয়ে দলে দলে ফিরে আসছে এক সময় হারিয়ে যাওয়া পাখিসহ অন্যান্য সমুদ্র উপকূলীয় প্রাণীগুলো।
আর ফিরে আসা পাখির মধ্যে শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কক্সবাজার সৈকতের দরিয়ানগর বড়ছড়া খালের মোহনায় শত শত গঙ্গা কবুতর দেখা যায়। স্থানীয়ভাবে ‘গঙ্গা কৈতর’ নামে পরিচিত এ পাখিটি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও নদী উপকূলে একক প্রজাতি হিসাবে সবচেয়ে বেশি দেখা যেত। কিন্তু আমাদের দেশীয় জাতের এ পাখিটি পরিবেশ থেকে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।
তবে প্রতিবছর শীতের আগে ও বসন্তকালের শেষদিকে কিছু সময়ের জন্য পাখিটিকে দরিয়ানগর বড়ছড়া খালের মোহনায় বিচরণ করতে দেখা গেলেও এবারের নির্জনতায় তাদের প্রাণোচ্ছ্বাস অন্য ধরনের।
কক্সবাজার শহরের প্রাচীন বাসিন্দা, চেম্বার সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, মাত্র কয়েক দশক আগেও কক্সবাজার শহর ও বাঁকখালী নদীতীরে ঝাঁকে ঝাঁকে গঙ্গা কবুতর দেখা যেত। কিন্তু এখন দেখা যায় না বললেই চলে।
দরিয়ানগর বার্ড ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমদ বলেন, একসময় যেখানে জেলে সেখানেই গঙ্গা কৈতর দেখা যেত। এদের একেকটি দল অতিথির দলের চেয়েও অনেক বড়। তবে কয়েকডজন পাখির ছোট দলও দেখা যায়, যেগুলো সাধারণত ফিশিং বোটের পিছু নিত। সৈকতের জীববৈচিত্র ধ্বংস হওয়ার কারণে এগুলোর সংখ্যা আশংকা জনক হারে কমে গেছে।
শুধু সৈকত নয়, সৈকতের চেয়েও আরো বহুগুণ পাখি এখন বাসা তৈরি করেছে সৈকত সংলগ্ন পাহাড়ের খাড়া ঢাল ও পাহাড়ী বনাঞ্চলে। নানা রঙের ও জাতের পাখির কলতানে মুখরিত হয়ে ওঠেছে লোকালয়ও।
কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগরের প্রস্তাবিত অভয়ারণ্যের পাহাড়ের ঢালে গর্ত খুঁড়ে ডিম পেড়ে বাচ্চা ফুটিয়েছে কয়েক প্রজাতির পাখি। প্রজননের জন্য এখন নতুন করে ফিরেছে সুঁইচোরা, ঘুঘু, বুলবুলি, দোয়েল, হাড়িচাচা, মাছরাঙা ও শালিক।
পাহাড়ে বাসা তৈরির জন্য সুঁইচোরার গর্ত খোঁড়ার দৃশ্য এখন বেশ উপভোগ্য।
কক্সবাজার শহরের সর্বদক্ষিণ প্রান্তে মেরিন ড্রাইভ ও সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন দরিয়ানগর এলাকার পাহাড়ে বানরের বিচরণও দেখা যায়। এছাড়া কয়েক বছর আগে সৈকতে আহত হরিণের বিচরণও দেখা গেছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-