মনতোষ বেদজ্ঞ ◑
করোনার ক্রমবর্ধমান সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে পুরো কক্সবাজার জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: কামাল হোসেন এ ঘোষনা দেন। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত লকডাউনের আওতায় থাকবেন এ জেলার বাসিন্দারা। তবে জরুরি পরিষেবা যেমন চিকিৎসা, খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ এই নির্দেশনার আওতামুক্ত থাকবে।
অসামরিক প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘লকডাউন আজ থেকেই কার্যকর হবে। লকডাউনের কারনে এই জেলা থেকে কেউ বাইরে যেতে পারবে না। বাইরে থেকে কেউ কক্সবাজারে আসতে পারবে না। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া আন্ত:উপজেলা গমনাগমনও বন্ধ থাকবে। নির্দেশনা অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেগুলো জরুরী সেবা আছে, খাদ্য, ওষুধ, উৎপাদন চালু থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে করোনা সংক্রমনের ঝুঁকি রয়েছে। করোনা রোগী যেহেতু সনাক্ত হয়েছে এখানে। তিনি সুস্থ হয়েছেন কিন্তু তার সংস্পর্শে যারা এসেছিলেন তারা এখনও আছে। বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কারনেও আমাদের ঝুঁকি রয়েছে। তাদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। আমাদের পাশ্ববর্তী জেলা চট্টগ্রামেও করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছে। এইসব মিলিয়ে আমরা মনে করছি যে ঝুঁকি আছে। ঝুঁকি থেকে কক্সবাজারকে মুক্ত রাখতে লকডাউন ঘোষনা করা হয়েছে।’
এদিকে কক্সবাজার প্রবেশ ও কক্সবাজার থেকে বের হওয়া ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সেনাবাহিনী। ইতিমধ্যে কক্সবাজারের প্রধান সব প্রবেশ পথে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পাশাপাশি সেনা টহল জোরদার করা হয়েছে সকল উপজেলায়। জরুরী সেবাদানকারী যানবাহন ব্যতীত সব ধরনের যানবাহনের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আজ থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এমন নির্দেশনা বলবত থাকবে। আইন অমান্যকারীদের আর্থিক জরিমানা এমনকি প্রয়োজনে গ্রেপ্তার করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
একই রকম পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায়। সেনাবাহিনী এবং পুলিশের অতিরিক্ত চেকপোস্ট স্থাপনের মাধ্যমে সীমিত করা হয়েছে সকল ধরনের যান চলাচল। অতি প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা, চিকিৎসা ও ত্রাণ সংক্রান্ত গাড়ি ব্যতীত কোন ধরনের গাড়ি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশ করতে দেয়া বা বের হতে দেয়া হচ্ছে না।
সেনাবাহিনীর রামু সেনানিবাস সূত্রে জানা গেছে যে, আরআরসি কমিশনের স্টিকার বা লিখিত অনুমোদন ব্যতীত দেশি, বিদেশি এনজিও বা ব্যক্তিবর্গের ক্যাম্পে প্রবেশ/বাহির সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এদিকে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবে বুধবার ২৪ জনের করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করা হয়। সকলের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। এ নিয়ে গত ৮ দিনে একই ল্যাবে ৭৩ জনের করোনা পরীক্ষা হলো। সবগুলো পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারি অধ্যাপক (ট্রপিক্যাল মেডিসিন ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ) ডাঃ মোহাম্মদ শাহজাহান।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসসন সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ পর্যন্ত করোনা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন একজন নারী। ঢাকার কয়েকত-মৈত্রী হাসপাতলে চিকিৎসা শেষে তিনি গত ৫ এপ্রিল সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন। জেলায় এ পর্যন্ত ৫১৭ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইন এবং ২৩ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। কোয়ারেন্টাইন হতে এ পর্যনন্ত ৪৫২ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। গত ১ মার্চ থেকে কক্সবাজার জেলায় বিদেশ থেকে এসেছেন ২ হাজার ২ জন প্রবাসী। তাদের মধ্যে ১ হাজার ২১ জন প্রবাসীর ঠিকানা ও অবস্থান সনাক্ত করেছে জেলা প্রশাসন।
কোভিড-১৯ চিকিৎসায় প্রস্তুতি :
জেলার ৮টি সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র বা হাসপাতালে মোট শয্যা রয়েছে ৫৪১টি। এর মধ্যে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ১৬২টি শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব চিকিৎসাকেন্দ্র মোট ১৩৯ জন ডাক্তার ও ১৯৫ জন নার্স দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালগুলোতে ১ হাজার ২৪৫ পিস ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী বা পিপিই বিতরণ করা হয়েছে এবং ২ হাজার ৫৬১ পিস পিপিই মজুদ রয়েছে।
জেলায় ২৯টি বেসরকারি হাসপাতালে মোট শয্যা রয়েছে ৮৪২টি এবং কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত রয়েছে ১০৬টি। বেসরকারি হাসপাতালসমূহে মোট ১০৭ জন ডাক্তার ও ৮০ জন নার্স কর্মরত রয়েছেন। বেসকারি হাসপাতাল সমূহে মোট ১ হাজার ২৮৫ পিস ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী বা পিপিই মজুদ রয়েছে এবং ৩১৫টি পিপিই ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির জরুরী চিকিৎসায় স্থানান্তরের জন্য ১১টি পৃথক অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা করা হয়েছে।
চিকিৎসা কেন্দ্রসমূহে আইসোলেশন ব্যবস্থা না থাকলেও রামু উপজেলায় নবনির্মিত হাসপাতালের একটি নতুন ভবনে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট আইসোলেশন ইউনিট এবং চকরিয়া উপজেলায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট আরও একটি আইসোলেশন ইউনিট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জেলায় সরকারি সহায়তা পরিস্থিতি :
কোভিড-১৯ এর কারনে কর্মহীন হয়ে পড়া অতিদরিদ্র দিনমজুর শ্রেণির মানুষের জরুরী প্রয়োজনে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার জেলা কক্সবাজার জেলায় ৪২৫ মেটিক টন চাল ও নগত ২০ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা মজুদ ছিল মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত। জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে ৩৪ হাজার পরিবারের কাছে ৪৯০ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা ও ৬ হাজার ৬০০ পরিবারকে ১৪ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-