ভাল নেই কক্সবাজারের হতদরিদ্র পরিবারগুলো

শাহীন মাহমুদ রাসেল ◑

প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনে থমকে গেছে সারা দেশের মতো কক্সবাজার জেলার শ্রমজীবী মানুষের দৈনিন্দন কর্ম। কর্মহীন হয়ে যাওয়ায় অলিগলি ফাঁকা ও জনশূণ্য অচেনা এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এ জেলায়।

এমতাবস্থায় গত কয়েকদিন আগে আচমকা জেলায় বয়ে গেল কাল বৈশাখী ঘূর্ণিঝড়। হঠাৎ করে শুরু হওয়া প্রায় আধাঘন্টা স্থায়ী প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়ে পিএমখালী ইউনিয়নের মধ্যম নয়াপাড়া ৫নং ওয়ার্ডের বাঁকখালী নদীর পাড়ে বসবাস করা পরিবারগুলোর ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। অনেকের ঘরবাড়ির ছাউনিও উড়িয়ে নিয়ে গেছে। এযেন মারার উপর খাড়ার ঘা। আবার অনেকে খোলা আকাশের নিচে দিনাতিপাত করছেন। কিন্তু এতো কিছুর পরও সরকারি-বেসরকারি কোন সহায়তা তো দুরের কথা কেউ খোঁজও নেয়নি বলে অভিযোগ ভোক্তভুগীদের।

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী এলাকার বাসিন্দা সৌদি ফেরত এক নারীর শরীরে করোনা ভাইরাস পজেটিভ পাওয়ার ঘটনায় কক্সবাজার শহরসহ পুরো জেলা লকডাউন ঘোষনা করে দেওয়া হয়েছে। পরে অবশ্যই ওই নারীর সুস্থ হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। প্রশাসনের লোকজনের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কাজ করছে সেনাবাহিনী পুলিশসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থার লোকজন।

এ আতঙ্কে থমথমে ভাব বিরাজ করছে। বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠ। নিত্যদিনের রোজগার কর্মব্যস্ত মানুষগুলোর চোখে মুখে শুধু দুশ্চিন্তার ছাপ। তাদের চিন্তা কিভাবে চলবে সংসার। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে হতদরিদ্র মানুষের মধ্যে সরকারি ত্রান সামগ্রী পেলেও পিএমখালী ইউনিয়নের বাঁকখালী নদীর পাড়ে বসবাস শতাধিক পরিবার। এই পরিবারগুলোর জীবন-জীবিকা নির্ভর করে পরিবহন শ্রমিক ও কৃষিসহ বিভিন্ন স্থানে রিকাশা চালানো। জীবিকার তাগিদে কাজের সন্ধ্যানে বিভিন্ন স্থানে ঘুরাঘুরি করে রিকশা চালালেও করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে মিলছে না যাত্রী।

সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সদর উপজেলার কক্সবাজার-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পাশে বাংলাবাজার জামে মসজিদের সামনে ৩-৪জন রিকশা নিয়ে বসে রয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেই এখনো ত্রাণ সামগ্রী পায়নি।

মধ্যম নয়াপাড়া গ্রামের রিকশা চালক নবী হোসেন জানান, সারাদিনে মাত্র ১৭০ টাকা আয় করেছি। রিকশার জমা দিতে হবে আড়াইশ টাকা। তবে সংসারে চারজন জন সদস্য। এ সামন্য টাকা রোজগারে সংসার চলবে না। করোনায় এতদিন বাড়িতে বসে বসে কাটিয়েছি। ঘরে খাবারের ব্যবস্থা নেই বলে দুইদিন ধরে রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। করোনার আগে প্রতিদিন ৫শত থেকে ৭শত টাকা আয় করতে পারতাম। এখন তা হচ্ছে না।

সিএনজি চালক আব্দুল্লাহ জানান, তিনি টাউনে সিএনজি চালান। লকডাউনে পরিবহন বন্ধ থাকায় সিএনজি চালাতে যেতে পারছেনা। করোনায় আকটা পড়ে বাড়িতে বসে বসে খাচ্ছেন। ঘরে যে চাউল আছে আর দুইদিন সংসার চলবে। কি হবে এই দুশ্চিন্তায় দিশেহারা। এখনো পর্যন্ত ত্রান পায়নি। তবে নাম লিখে নিয়েছে। পাবো।

রিকশা চালক আব্দুর রহিম জানান, লকডাউনে বাড়ি থেকে বের হতে পারিনা। দুইদিন ধরে ঘরে খাবার নাই। সংসারে ৩জন সদস্য। খাবারের জন্য রিকশা চালায়। পুলিশ দেখলেই ভয়ে পালিয়ে যাই। সংসার না চললেও ত্রান দিতে কেউ আসেনি। দুই বেলার খাবার ব্যবস্থা থাকলে রিকশা নিয়ে বের হইতাম না। টিভিতে দেখে করোনা ভাইরাসে ভয় করে। নিরুপায় হয়ে রিকশা নিয়ে রাস্তায়। না খেয়ে মরার চেয়ে করোনায় মরে যাওয়া অনেক ভাল। এ বলে কেদে ফেলেন আলতাছ।

স্থানীয় ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল হুদা বলেন, তাদের দুঃখ-দূর্দশার কথা সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে বলা হয়েছে। তারা শিগগিরই ত্রাণ সহায়তা পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন এই জনপ্রতিনিধি।

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ মাহমদুল্লাহ মারুফ বলেন, যারা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের তালিকা তৈরী করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষের জন্য দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় প্রত্যেক পরিবারকে ১০ কেজি চালসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।

তিনি আরোও বলেন, এর সংখ্যা পর্যায়ক্রমে আরো বৃদ্ধি করা হবে। করোনায় কেউ না খেয়ে থাকবে না। হতদরিদ্র মানুষের পাশে সরকারের পক্ষে উপজেলা প্রশাসন সর্বধা রয়েছে। কোনো এলাকায় যদি ত্রাণ না পেয়ে থাকেন ওই এলাকার মানুষ ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ত্রাণ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করবেন।

আরও খবর