আহমদ গিয়াস ◑
করোনা সতর্কতার কারণে সারাদেশের মানুষ ঘরবন্দী, কিন্তু সাগরে চলছে উৎসব! গত ৩ সপ্তাহ ধরে করোনার কারণে দেশের প্রায় সব খাত স্থবির ও লক্ষ লক্ষ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়লেও সচল রয়েছে মৎস্য খাত। ফলে স্বস্তিতে রয়েছে কক্সবাজারের জেলে সমাজ।
বর্তমানে কক্সবাজারের অর্ধলক্ষাধিক জেলে উৎসবের আকারে সাগরে মাছ ধরছে বলে জানায় ট্রলার মালিক সমিতি।
কক্সবাজার জেলা বোট মালিক সমিতি জানায়, করোনা সতর্কতার কারণে মাছধরার উপর নিষেধাজ্ঞা না থাকায় প্রতিদিনই সাগর থেকে মাছ ধরে ফিরছে ট্রলারগুলো। ফলে বাজারে অন্য পণ্যের সংকট হলেও মাছের কোন সংকট নেই।
শহরের ফিশারীঘাটস্থ মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী বলেন, ইলিশ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞার পর থেকে টানা গত ৫ মাস ধরেই সাগরে নিয়মিত ইলিশসহ কমবেশি অন্যান্য প্রজাতির মাছ ধরা পড়ছে। আর এসব মাছ কক্সবাজারের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও সরবরাহ করা হচ্ছে। ফিশারীঘাট থেকে আজ শনিবারও ৩টি ট্রাকে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে প্রায় ২০ মে.টন ইলিশ সরবরাহ করা হয়েছে।
জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ বলেন, শনিবার সাগর থেকে অন্তত ৪০ মেট্রিক টন মাছ ধরা পড়েছে, যার অর্ধেকই ঢাকা পাঠানো হয়েছে।
বর্তমানে কক্সবাজারের অর্ধলক্ষাধি:ক জেলে সাগরে উৎসবের আকারে মাছ ধরছে। ভিন্ন পেশার বেকার হয়ে পড়া লোকজনও জেলে পেশার দিকে ঝুঁকছে।
করোনার প্রভাবে লকডাউনের কারণে বাস স্টেশন, মার্কেট, জংশন, এমনকি রাস্তায় লোকজনের চলাফেরা একেবারে কম থাকলেও মৎস্য অবতরণকেন্দ্রগুলো রয়েছে বেশ জমজমাট। এমনকি শত শত মানুষের কোলাহলপূর্ণ জটলায়ও রূপ নিচ্ছে। এতে উদ্বিগ্ন খোদ মৎস্য ব্যবসায়ীরাও।
মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা জটলা না করার জন্য বার বার তাদের সতর্ক করলেও তারা শুনছে না। এই অবস্থায় আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে দিয়ে প্রয়োজনে তাদের বাধ্য করব।
কক্সবাজার ফিশিং বোটি মালিক সমিতি জানায়, কক্সবাজারে মাছ ধরার ছোট বড় ৫ সহস্রাধিক যান্ত্রিক বোট রয়েছে। এরমধ্যে বড় নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট নৌকায় ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকে। আবার কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে মাত্র ২ জন জেলে। নৌকাগুলোর মধ্যে ইলিশ জালের বোটগুলো গভীর বঙ্গোপসাগরে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো উপকূলের কাছাকাছি মাছ ধরে। বিহিন্দি জালের বোটগুলো মূলত ছোট প্রজাতির মাছ ধরে, যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচকাড়া’ (পাঁচ প্রকারের) মাছ বলা হয়। এছাড়া ককশিটের বোটগুলো প্রতিদিন ২ থেকে ৩ বার পর্যন্ত সাগরে মাছ ধরতে যায়।
এদিকে কক্সবাজারে টানা ৫ মাসের রেকর্ড সংখ্যক সময় ধরে সাগরে মাছ ধরা পড়ার ঘটনাটি ইলিশ সংরক্ষণে নেয়া সরকারের নিষেধাজ্ঞার ফসল বলে মনে করেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম খালেকুজ্জামান।
তিনি বলেন, ইলিশের প্রজনন মৌসুমে অন্যান্য অনেক মাছও প্রজনন করে। তাই ইলিশ সংরক্ষণের কারণে বঙ্গোপসাগরে ইলিশের পাশাপাশি অন্যান্য মাছেরও প্রাচূর্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ২/৩ বছর পর থেকে বঙ্গোপসাগরে কখনও মাছের অভাব হবে না বলেও মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, মৎস্য সেক্টর সরকার খোলা রেখেছেন। কিন্তু জেলে বা মৎস্য ব্যবসায়ীরা এর অপব্যবহার করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-