কক্সবাজারে কর্মহীন মানুষের মাঝে সেনা বাহিনীর খাদ্য সামগ্রী বিতরণ

কক্সবাজার জানার্ল রিপোর্ট ◑
কক্সবাজার শহরে অসহায়, কর্মহীন, দরিদ্র জনসাধারণের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশন।
বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়।

এরপর কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, কলাতলী এলাকা ও ফিশারিঘাট এলাকায় জনসচেতনতা কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি তত্ত্বাবধানে শতাধিক দুস্থ ও খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষের মধ্যে চাল, ডাল, আলু, লবণ ও তেলসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

সেনা সদস্যদের জনসচেতনতা তৈরীর লক্ষ্যে পরিচালিত নানাবিধ কর্মকাণ্ড তদারকির লক্ষ্যে এ সময় জিওসি ১০ পদাতিক ডিভিশন ও এরিয়া কমান্ডার কক্সবাজার এরিয়া মেজর জেনারেল মোঃ মাঈন উল্লাহ চৌধুরী নেতৃত্বে ত্রাণ সকর্মসূিচতে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে.কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমদ, জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন, ২ পদাতিক ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আলীমুল আমীন, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনসহ সামরিক এবং বেসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ত্রাণ বিতরণ শেষে সাগরপাড় সংলগ্ন আর্মি ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্টের জলতরঙ্গে অনুষ্ঠিত করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত কনফারেন্সে যোগদান করেন তারা।

জিওসি’র নেতৃত্বে জনসচেতনতা মূলক কর্মকান্ডের পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন স্থানে অসহায় ও দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে বিচ্ছিন্নভাবে ত্রাণ বিতরণ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে তাদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

কক্সবাজার ডিসি অফিসের সামনে জুতা সেলাই করে জীবিকা নিবার্হ করা নির্মল শীল জানান, গত ছয়দিন সে ঘরবন্দি। এসময়ে জমানো টাকা ও খাবার শেষ হয়ে যাওয়ায় পরিবারের সদস্যদের কথা চিন্তা করে আজ কাজে বের হয়েছেন। সেনা সদস্যদের ঝটিকা ত্রাণ বিতরনের সময় সে এক প্যাকেট ত্রাণ পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে যায়।
অশ্রুসজল চোখে সে এ প্রতিবেদককে জানায়, তার মতো হতদরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষদের এভাবে সহযোগিতা করলে তারা দুর্যোগ কেটে না যাওয়া পর্যন্ত আর বাইরে বেরোবে না।

একই অভিপ্রায় ব্যক্ত করল রিকশাচালক মজনু আলী। তিন ছেলেমেয়ে ও বউ নিয়ে তার সংসার পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের একটি গ্রামে। শহরে রিকশা চালিয়ে দুই পয়সা ভাল আয় রোজগারের জন্য একটি মেসে কষ্ট করে থাকেন।

জমানো টাকা থেকে গত ৬-৭ দিন কেটে গেলেও পেটের তাগিদে আজকে বাধ্য হয়ে রিক্সা নিয়ে বের হয়েছেন। কিন্তু আশানুরূপ যাত্রী না থাকায় যখন হতাশাগ্রস্থ বোধ করছিলেন তখনই সেনাবাহিনীর ত্রাণ পেয়ে তার মুখে খুশির হাসি বয়ে যায়। এ প্রতিবেদককে তিনি জানান, আগামী ১০ দিন তিনি আর বাসার বাইরে বের হবেন না।

‘আপনার সুস্থতাই আমাদের কাম্য’- এই মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী গত ২৪ মার্চ থেকে কক্সবাজার জেলা এবং বৃহত্তর চট্টগ্রামের আটটি উপজেলায় রামু সেনানিবাসের সদস্যরা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জনসচেতনতা তৈরিতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতার লক্ষ্যে দিন-রাত কাজ করে চলেছেন।

এরই ধারাবাহিকতায় বিগত কয়েকদিন ধরে এই জনপদের অসচ্ছল, খেটে খাওয়া ও দরিদ্র মানুষদের মাঝে রামু সেনানিবাসের তত্ত্বাবধানে ত্রাণ বিতরণের মাধ্যমে সমাজের অসহায় ও দিনমজুর মানুষের জীবনে স্বচ্ছতা আনা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সাধারণ মানুষদের বাসায় অবস্থান নিশ্চিত করা, বিনা প্রয়োজনে বাইরে চলাচলরত ব্যক্তিদের ফুল দিয়ে ঘরে ফেরানোর উদ্যোগ গ্রহণ, শহর-গ্রামের বিভিন্ন স্থানে হাত ধোয়ার বেসিন স্থাপন এবং করোনা প্রতিরোধে নানা ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম বেগবান করার মধ্য দিয়ে রামু সেনানিবাসের সদস্যরা ইতিমধ্যে সব শ্রেণীর মানুষের ভালোবাসা ও আস্থা অর্জন করেছেন। জনকল্যাণে সেনাবাহিনীর গৃহীত এ ধরনের কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে রামু সেনানিবাস সূত্র হতে জানা যায়।

আরও খবর