নীতিশ বড়ুয়া, রামু ◑
বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নেওয়া মরনঘাতি করোনা ভাইরাস সংক্রমন, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে কক্সবাজারের রামু উপজেলা নিবার্হী কর্মকতার্ প্রণয় চাকমার দায়িত্বশীল কর্মতৎপরতা উপজেলার সর্বমহলে প্রশংসিত হয়ে উঠেছেন।
এ ভাইরাস সংক্রমন রোধ ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা সৃষ্টি, প্রবাস ফেরত ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা, দ্রব্যমূল্যের কৃত্রিম সংকট ও উর্দ্ধগতি নিয়ন্ত্রণে বিগত দু’সপ্তাহ ধরে তিনি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় অভিযান অব্যাহত রেখেছেন নিবেদিত প্রাণ এ ইউএনও।
জানা গেছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি আতংকে পরিনত হওয়ার সাথে সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা রামু উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের সকল হাট-বাজার, বাস স্টেশন, গ্রামীন জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান ও বিভিন্ন সড়ক-উপসড়কে মাইকিং করে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতামূলক বার্তা প্রচার শুরু করেন।
এছাড়া গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং হোম কোয়ারেন্টাইন আইন অমান্যকারী বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের জরিমানা এবং সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহন করেন।
১৯ মার্চ থেকে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও স্টেশনে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধিকারি দোকানদার, কোচিং সেন্টারের মালিক ও বিদেশ ফেরত বক্তিরা হোম কোয়ারেন্টাইন আইন না মানার অভিযোগে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে অর্থদন্ডে দন্ডিত করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা।
এ সময় তিনি বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের যত্রতত্র ঘোরাফেরা না করে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দেন এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি না করার কঠোর নিদের্শনা দেন।
২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে ইউএনও প্রণয় চাকমা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের সব কটি ইউনিয়নেই ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালান। ওইদিন তিনি নিজে গাড়ি চালিয়ে পুরো উপজেলায় করোনা ভাইরাস সংক্রমরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও আড্ডা-জমায়েত বন্ধে প্রচারনা চালান।
রামু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নোবেল কুমার বড়–য়া জানান, রামু উপজেলা নিবার্হী অফিসার প্রণয় চাকমা অত্যন্ত পরিশ্রমী একজন কর্মকর্তা। তিনি করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে সার্বক্ষনিক খোঁজ খবর নিচ্ছেন এবং উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালনসহ উপজেলার প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছেন।
রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম জানান, ইউএনও প্রণয় চাকমা রামুতে যোগদানের পর থেকেই রাত-দিন রামুবাসীর জন্য নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এমন নিষ্ঠাবান-কর্মঠ ও মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন ইউএনও রামুবাসী অতীতে খুব কম পেয়েছে। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় তিনি রামুতে যে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন তাও নজিরবিহীন। তাঁর কর্মকান্ডে মনে হচ্ছে তিনি কেবল ইউএনও নন, রামু উপজেলার একজন সচেতন অভিভাবকও।
কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি, রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু জানান, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার শুরু থেকেই সতর্ক অবস্থানে ছিলো। সিভিল প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে জনসচেতনতা মূলক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিলেন। সেক্ষেত্রে রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রনয় চাকমা একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। রামু উপজেলার জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে এবং করোনা ভাইরাস বিস্তাররোধে তিনি নানামুখী কর্মকান্ড শুরু থেকে প্রতিনিয়ত অব্যাহত রেখেছেন। তিনি দিবারাত্রি নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ইউএনও কে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা দিয়ে যাওয়ার জন্য জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা, রামুর সাংবাদিক ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাজাহান আলী জানান, রামুর ইউএনও প্রণয় চাকমা একজন দক্ষ সরকারি অফিসার হিসেবে প্রতিনিয়ত মানুষের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। রামুর কচ্ছপিয়া-গর্জনিয়া, ঈদগড় এর মতো দূর্গম এলাকায় তিনি প্রতিনিয়ত ছুটে গিয়ে মানুষকে কাংখিত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। যা প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে সবাই অবগত। একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে প্রণয় চাকমার এমন কর্মকান্ডে তিনি নিজেও গর্বিত। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রণয় চাকমা অসামান্য অবদান রেখে যাচ্ছেন। এডিএম মো. শাজাহান আলী করোনা পরিস্থিতির কারনে কর্মহীন, দরিদ্র মানুষের জন্য প্রণয় চাকমা বলিষ্ঠ ভূমিকা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ।
কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল জানান, ইউএনও প্রণয় চাকমা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে রামুবাসীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। একজন সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে জনগণ যেটুকু আশা করে, তিনি তার চেয়ে আরো বেশী সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছেন। এমপি কমল ইউএনও কে সহযোগিতা করার জন্য সচেতন নাগরিকদের আহবান জানান।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণয় চাকমা জানান, রামুতে যোগদানের পর থেকে সরকারি প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারি হিসেবে অর্পিত দায়িত্ব পালন করছি মাত্র। করোনা পরিস্থিতিতেও সরকারি নির্দেশনা মতে কাজ করে যাচ্ছি। সারাদেশের ইউএনও-এসিল্যান্ডসহ সরকারি কর্মকর্তারা যেভাবে কাজ করছে আমিও সেভাবে কাজ করছি। বেশী কিছু করছি বলে মনে হয়না।
চলমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় এনএসআই প্রতিনিধি, অনেক জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি, পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ অনেকে সার্বিক সহাযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন।
এজন্য তিনি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। ইউএনও আরো বলেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে সাধারণ মানুষ আতংকিত। রামু উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে রিক্সা চালক, শ্রমিক, খেটে খাওয়া মানুষ, অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের অনেকেই আর্থিক সংকটে পড়তে পারে। সংকটময় এ মুহুর্তে তাদের সাহায্যে সরকারের পাশাপাশি সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসা দরকার। তিনি করোনা সংক্রমন রোধে সবাইকে বাড়িতে অবস্থান করারও অনুরোধ জানান।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-