অনলাইন ডেস্ক ◑ সড়ক দুর্ঘটনায় মা-বাবাকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেলো যমজ দুই অবুঝ শিশু। ঠিকভাবে হাটতে না পারা দেড় বছরের শিশু দুটিকে দেখার জন্য বৃদ্ধ দাদা-দাদি ছাড়া আর কেউই রইল না। শিশু দুটিকে নিয়ে দাদা-দাদি যেমন পড়েছেন বিপাকে, তেমনি তাদের ভবিষ্যৎও এখন অন্ধকার। মা-বাবার খোঁজে কেঁদে কেঁদে শয্যাশায়ী শিশু দুটি।
বলছি, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নূরপুর ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের নোমান মিয়ার (২৫) কথা। বৃদ্ধ মা-বাবা, স্ত্রী ও যমজ দুই কন্যা শিশুকে নিয়ে ছোট সংসার তার। অভাব অনটনের মধ্যেই দিনযাপন করলেও সুখের অভাব ছিল না তার সংসারে। কিন্তু সেই সুখ কপালে সইল না। একটি দুর্ঘটনায় ভেঙে তছনছ হয়ে গেলো সাজানো সংসারটি।
ঘটনাটি চলতি মাসের ২০ মার্চের। ওই দিন দুপুরে অসুস্থ স্ত্রী জেসমিন আক্তারকে (২২) নিয়ে ডাক্তার দেখাতে সিএনজি অটোরিকশাযোগে হবিগঞ্জ শহরের আসছিলেন নোমান মিয়া। পথিমধ্যে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নূরপুর এলাকায় পৌঁছলে একটি যাত্রীবাহী বাস তাদের বহনকৃত সিএনজিকে ধাক্কা দেয়। এতে দুমড়ে-মুচড়ে যায় সিএনজিটি। ঘটনাস্থলেই মারা যায় নোমান মিয়া। গুরুত্বর অবস্থায় তার স্ত্রী জেসমিন আক্তারকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) বিকেলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনিও।
বর্তমানে মা-বাবাকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে কোলের দুই যমজ শিশু। এখনও তারা জানে না তাদের মা-বাবা আর কোনদিন ফিরবেন না। কোলে নিয়ে আর আদর করবে না। বাবা-মায়ের জন্য দিনরাত কেঁদে কেঁদে শিশু দুটি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এখন শিশু দুটি দেখার জন্য একমাত্র বৃদ্ধ দাদা-দাদি ছাড়া আর কেউ রইল না। কিন্তু দাদা-দাদি নিজেরাই ঠিকভাবে চলতে পারেন না, আবার আর্থিক অবস্থাও একেবারেই খারাপ। ফলে শিশু দুটিকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন বৃদ্ধ দম্পতিটি।
শিশু দুটির দাদা আব্দুল মোতালিব বলেন, আমরা দুইজন বৃদ্ধ মানুষ। আমরা নিজেরাই নিজেদের খেয়াল রাখতে পারি না। এই অবুঝ দুটি শিশুর কি করে দেখা-শুনা করব? তাছাড়া আমাদের টাকা পয়সাও নেই। খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে নাতিরা। তাদের কান্না থামাতে পারছি না। তারা শুধু মা-বাবকে খুঁজছে।
এ বিষয়ে নূরপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য মো. ওয়াহিদুর রহমান বলেন, শিশু দুটির দিকে তাকানো যায় না। এখনও তারা কিছুই বুঝতে শিখেনি। এরমধ্যে মা-বাবাকে হারিয়ে এতিম হয়ে গেল। তাদের দেখা-শোনার জন্য একমাত্র দাদা-দাদি ছাড়া আর কেউ নেই। পরিবারটির আর্থিক অবস্থাও একদম ভালো না। বিভিন্ন জায়গা থেকে সহযোগিতা সংগ্রহ করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।
আর নূরপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মুখলিছ মিয়া বলেন, ঘটনাটি নিয়ে আমরা খুবই মর্মাহত। পরিবারটিও অত্যন্ত অসহায় হওয়ায় সরকারি সহায়তার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়ের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি। পাশাপাশি আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকেও কিছু সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি।
শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, দুর্ঘটনা কবলিত বাসটিকে আটক করা হয়েছে। তবে নিহতের পরিবার বাসের বিরুদ্ধে কোন মামলা দায়ের করেনি। তবে স্থানীয় চেয়ারম্যান বলেছিলেন শিশু দুটির ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে বাস মালিকের সঙ্গে আলোচনা করে কিছু একটা করার জন্য। দু’এক দিনের মধ্যে বাস মালিকের সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে নিয়ে বসা হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-