ডেস্ক রিপোর্ট ◑ দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে বিদেশফেরত সব যাত্রীকে কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এর পরও সরকারের নির্দেশ অমান্য করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদেশফেরত যাত্রীদের নিজ নিজ এলাকায় ঘুরে বেড়ানোর ঘটনা ঘটছে অহরহ। এমন পরিস্থিতিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত তথা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিদেশফেরত যাত্রীদের আটকের পর জরিমানাও করা হয়েছে। তবে এখনও ২০১৮ সালে প্রণীত ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮’ অনুযায়ী কাউকে সর্বোচ্চ অর্থদণ্ড এক লাখ টাকা জরিমানা বা ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়নি। এ জন্য করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঘটনায় আইন অমান্যকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের নির্দেশনা চেয়ে এরই মধ্যে হাইকোর্টে রিটও করেছে ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন।
রিটে বিশ্বব্যাপী চিহ্নিত করোনাভাইরাস সংক্রামক আইনে অন্তর্ভুক্ত করা এবং এই ভাইরাসের বিস্তারকে মহামারি ঘোষণা দেওয়াসহ হাইকোর্টের কাছে কয়েক দফা নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে। ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮’ অনুযায়ী, ভাইরাসজনিত সংক্রমণের ঘটনায় আইন লঙ্ঘন করলে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। একই আইনে সংক্রামক রোগ-সংক্রান্ত সব তথ্য গোপন এবং ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান ও নির্দেশ পালনে অসম্মতি জানালেও তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে উল্লেখ রয়েছে। এক্ষেত্রে কেউ যদি সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের আদেশ পালনে বাধা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বা অসম্মতি জানান, তবে তার তিন মাস কারাদণ্ড বা পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে। ইচ্ছাকৃত মিথ্যা বা ভুল তথ্য দিলে তিনিও দুই মাস কারাদণ্ড বা পঁচিশ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা মোকাবিলা এবং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের উদ্দেশ্যে ২০১৮ সালে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) নামে এই আইন প্রণয়ন করা হয়। বিভিন্ন জেলায় সংক্রামক আইন অনুসারে জরিমানা করার ঘটনায় পাওয়া তথ্যানুসারে, গত ১৭ মার্চ হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ অমান্য করায় মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় এক অস্ট্রেলিয়া প্রবাসীকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা, ঝিনাইদহে এক সিঙ্গাপুর প্রবাসীকে পাঁচ হাজার টাকা এবং ১৮ মার্চ শরীয়তপুরে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার ১৪ দিন না যেতেই বাজারে ঘোরাঘুরি করায় দুই ইতালিফেরত ব্যক্তিকে ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন স্থানীয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই ভাবে গত শুক্রবার সারাদেশে ২৭ প্রবাসীকে অর্থদে দি ত করা হয়।
করোনাভাইরাস নিয়ে হাইকোর্টে রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব সমকালকে বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীরা দেশে ফিরছেন। তাদের ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে সরকার; কিন্তু তারা অনেকেই তা মানছেন না। এ পর্যন্ত ছয় লাখের ওপর প্রবাসী দেশে ফিরেছেন। অথচ মাত্র ১৪ হাজার ব্যক্তি কোয়ারেন্টাইনে আছেন। প্রবাসীদের তালিকাও সরকারের কাছে নেই। এ কারণেই হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, হাইকোর্ট রিটের শুনানি নিয়ে এরই মধ্যে বিদেশফেরত যাত্রীদের এয়ারপোর্ট থেকেই সরাসরি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন; যাতে তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখা যায়। সরকারও বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। আশা করছি এসব পদক্ষেপ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘সংক্রামক রোগ আইনে (২০১৮-এর ৪(ঘ) ধারা) ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়াসহ ২৩ রোগকে সংক্রামক ব্যাধি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই তালিকায় করোনার নাম নেই। কারণ করোনাভাইরাসটি একেবারেই নতুন। অবশ্য ওই আইনে বলা আছে, নতুন কোনো সংক্রামক রোগ হলে বা পুরোনো রোগের সংক্রমণ হয় সেক্ষেত্রে সরকার সংক্রামক রোগ হিসেবে গেজেট জারি করবে। এ কারণে হাইকোর্টও ইতোমধ্যে করোনোকে সংক্রামক ব্যাধি হিসেবে গেজেট জারি করতে বলেছেন। আশা করছি, সরকার দ্রুত এই আদেশ প্রতিপালন করবে।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। দেশে এখন পর্যন্ত ২৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। সারাবিশ্বে মৃতের সংখ্যা সাড়ে ১১ হাজার ছাড়িয়েছে। আক্রান্ত আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ। স্বাভাবিকভাবে মানুষের মধ্যে এ ভাইরাস নিয়ে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা লোকসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-