কক্সবাজার সদরের সাবেক সেই এসিল্যান্ড নাজিম উদ্দিন সর্ম্পকে চাঞ্চল্যকর তথ্য

ডেস্ক রিপোর্ট ◑

কুড়িগ্রামের স্থানীয় সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে শুক্রবার মধ্যরাতে বাড়ির দরজা ভেঙ্গে ধরে এনে সাজা দেয় জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট।

আরিফুলের স্ত্রীর ভাষ্যমতে, প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করে ফৌজদারী অপরাধে নেতৃত্ব দেয় কক্সবাজার সদর উপজেলার সাবেক এসিল্যান্ড ও কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের এল এ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব নাজিম উদ্দিন।

এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নাজিম উদ্দিন সর্ম্পকে চাঞ্চল্যকর তথ্য আসতে থাকে। জেলা প্রশাসনের এই কর্মকর্তার এধরণের কাজ নতুন নয়। এর আগের কর্মস্থল কক্সবাজারে একইভাবে তার হাতে নির্যাতনের শিকার হন মুক্তিযোদ্ধা, বৃদ্ধ, সংবাদিকসহ সাধারণ মানুষ। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। তদন্ত করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার অজিত দেব। অভিযোগের ভিডিও থাকলেও নিজ ক্যাডারের জুনিয়র ব্যাচের সহকর্মীর কোনো অপরাধ পাননি এই তদন্ত কর্মকর্তা।

জানতে চাইলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, নাজিম উদ্দিন কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে কর্মরত ছিল। আমি তাকে অল্প সময় পেয়েছি। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলায় বদলী করা হয়েছিল। এর বেশী আমি এখন বলতে পারছি না।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, আমরা সবার কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছি। প্রতিবেদনের খসড়া এসেছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন আসলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

খোজ নিয়ে জানাগেছে, ২০১৪ সালে প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করে যশোরের মনিরামপুরের নাজিম উদ্দিন। কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) হিসেবে যোগদানের পরপরই বেপরোয়া হয়ে উঠেন।

২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

ভিডিওতে দেখা যায়, শার্টের কলার ধরে ষাটার্দ্ধো একজন বৃদ্ধকে টানাহ্যাঁচড়া করে নিয়ে আসছেন নাজিম উদ্দিন। যার উপর হামলে পড়েছেন সেই বৃদ্ধ হলেন কক্সবাজার শহরের কলাতলীর মৃত কবির আহমদের পুত্র মোহাম্মদ আলী ওরফে নফু মাঝি। ঘটনাটি ওই বছরের মে মাসের শেষ দিকে হলেও ২০১৮ সালের ২৪ নভেম্বর রাতে প্রকাশ পায়। সাথে সাথে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি বিভিন্ন পেইজে হাজার হাজার শেয়ার হয়। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর কক্সবাজারে তোলপাড় শুরু হয়। বিশেষ করে প্রশাসনে ওই কর্মকর্তাকে নিয়ে চলে নানা আলোচনা-সমালোচনা। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।

এছাড়াও তাকে স্যার সম্বোধন না করায় কক্সবাজারের স্থানীয় পত্রিকার এক সাংবাদিকের সাথে অপ্রীতিকর আচরণের অভিযোগ ওঠে। পরে ওই সাংবাদিক জেলা প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ করেন।

কক্সবাজারের স্থানীয়রা জানান, নির্বিচারে ঘুষ গ্রহণ, হুমকি-ধমকি দেয়া, ভ্রাম্যমান আদালতে সাজা দেয়ার হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায়, সেবা প্রার্থীদের হয়রানি, ভূমি অফিসে ফাইল আটকে ঘুষ গ্রহণ, দুর্ব্যবহার, অসদাচরণ, সরকারি জমিতে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণে সহায়তা, উচ্ছেদ অভিযানের নামে সাধারণ মানুষকে ধরে এনে বড় অঙ্কের উৎকোচ আদায়, অভিযানে নারী পুরুষের গায়ে হাত তোলা, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, সাধারণ মানুষসহ নানা শ্রেণী পেশার লোকজনকে মিথ্যা অজুহাতে নাজেহাল করা এবং ভূমিদস্যুদের সাথে আঁতাত করে সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত বিভিন্ন পয়েন্টের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা বেদখল ও বহুতল ভবনসহ নানা অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলার সুযোগ করে দেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অল্প দিনেই নানা সমালোচনার জন্ম দেন তিনি।

অযাচিত সব আচরণের কারণে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথেও একাধিকবার বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। তার এমন আচরণে জেলা প্রশাসনকে সুধীজনদের নিয়ে ঘরোয়া সমঝোতা বৈঠকও করতে হয়েছে। তার এসব অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে জেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তাকেও হিমশিম খেতে হয়েছে।

এসকল অভিযোগের পর তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। দায়িত্ব দেয়া হয় নাজিম উদ্দিনের এক ব্যাচ সিনিয়র ৩১ ব্যাচের কর্মকর্তা অজিত দেবকে। অভিযোগের ভিডিও থাকলেও জুনিয়র ব্যাচের সহকর্মীর কোন অপরাধ খুজে পাননি তদন্ত কর্মকর্তা অজিত দেব।

জানতে চাইলে তৎকালীন কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও বর্তমানে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অজিত দেব বলেন, নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগের তদন্ত আমি করেছিলাম। তদন্তের বিষয়ে আমি আর কিছু বলতে পারব না।

আরও খবর