- পাহাড় খেকো ও বালুদস্যুদের আস্তানায় এসিল্যান্ডর অভিযান
এ কে এম ইকবাল ফারুক,চকরিয়া ◑
কক্সবাজারের চকরিয়ায় পাহাড় খেকো ও বালুদস্যুদের আস্তানায় অভিযান চালিয়েছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তানভীর হোসেন। বুধবার (১১ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের পঁহরচান্দা ও বিকাল ৩টায় পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের মাতামুহুরী নদীর বেতুয়া বাজার পয়েন্টে এ পৃথক অভিযান চালানো হয়। এ সময় অভিযানের খবর পেয়ে পাহাড় খেকো ও বালুদস্যুরা পালিয়ে গেলেও ঘটনাস্থল থেকে একটি এস্কেভেটর জব্দ ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত ৩টি ড্রেজার ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়৷
জানা যায়, চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের পঁহরচান্দা এলাকায় বন বিভাগের মালিকানাধীন বিশাল আকারের একটি পাহাড় রয়েছে। এটি পর্যায়ক্রমে সাবাড় করতে ইতোমধ্যে সকল পরিকল্পনা সম্পন্ন করে স্থাণীয় নাসির উদ্দিন কোম্পানীর নেতৃত্বে একটি প্রভাবশালী পাহাড়খেকো চক্র। তারই অংশ হিসেবে পাহাড়খেকো চক্রটি স্থাণীয় প্রশাসনের অগোচরে গত এক সপ্তাহ ধরে পাহাড় কাটার পর বুধবার (১১ মার্চ) বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসলে চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তানভীর হোসেনের নেতৃত্বে পরিবেশ অধিদপ্তর লোকজন তাৎক্ষনাৎ ওইস্থানে অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় পাহাড়কাটা বন্ধ ও ঘটনাস্থল থেকে একটি এস্কেভেটর জব্দ করে তা স্থানীয় ইউপি সদস্যের জিম্মায় দেওয়া হয়। অভিযান চলাকালীন সময়ে পঁহরচান্দা মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকায় বন বিভাগের পাহাড় কেটে বাড়ি নির্মানের খবর পেয়ে পরে ওই জায়গায় অভিযান পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তানভীর হোসেন ও পরিবেশ অধিদপ্তর লোকজন। এসময় পাহাড় কেটে বাড়ি নির্মানের কাজ বন্ধ করে দেন তঁারা। অভিযানের খবর পেয়ে পাহাড় খেকো ও বাড়ি নির্মানকারীরা পালিয়ে যাওয়ায় কাউকেই ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে বিকাল ৩টার দিকে পূর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নের মাতামুহুরী নদীর বেতুয়া বাজার পয়েন্টে অভিযান চালিয়ে মাতামুহুরী নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনের দায়ে ৩টি ড্রেজার মেশিন জব্দ করে পরে সেগুলো ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে ওইস্থানেও বালুদস্যুদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
বরইতলী ইউনিয়নের পঁহরচান্দা এলাকার স্থানীয় কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, বনবিভাগের মালিকাধীন বিশাল আকৃতির পাহাড়টি কাটছিলেন ওই এলাকার জনৈক নাসির উদ্দিন কোম্পানীর নেতৃত্বে একটি প্রভাবশালী পাহাড়খেকো চক্র। তারা গত এক সপ্তাহ ধরে দিবা রাত্রি এস্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে ডাম্পার (পিকআপ) ভর্তি করে বিভিন্ন জায়গায় মাটি বিক্রি করে আসছিলো। বুধবার উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তাদের সব পরিকল্পনা ভন্ডুল হয়ে যায়। তবে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সাময়িকভাবে পাহাড়কাটা বন্ধ হলেও আদৌ রাঘববোয়ালদের হাত থেকে পাহাড়টি রক্ষা পাবে কিনা তা নিয়ে তাদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে।
অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তানভীর হোসেন বলেন, বরইতলী ইউনিয়নের পঁহরচান্দা এলাকায় অবৈধভাবে পাহাড় কেটে মাটি লুট ও বাড়ি নির্মানের খবর পেয়ে বুধবার (১১ মার্চ) দুপুরে ওই এলাকায় অভিযান চালানো হয়। পরে পৃথকস্থানের পাহাড়কাটা বন্ধ করা হয়। এসময় অভিযানের খবর পেয়ে পাহাড় খেকো ও বাড়ি নির্মানকারীরা পালিয়ে গেলেও ঘটনাস্থল থেকে একটি এস্কেভেটর জব্দ করে পরে তা স্থাণীয় ইউপি সদস্যের জিম্মায় দেওয়া হয়। সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরও বলেন, পূর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নের মাতামুহুরী নদীর বেতুয়া বাজার পয়েন্টে মাতামুহুরী নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে এদিন বিকাল ৩টার দিকে ওই এলাকায় আবারো অভিযান চালানো হয়। অভিযানের সময় বালু উত্তোলনকারীরা পালিয়ে গেলেও তাদের অবৈধ বালু উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত ৩টি ড্রেজার মেশিন জব্দ করে পরে সেগুলো ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়।
অভিযানে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের এডি সংযোক্তা দাশ গুপ্তা, পরিদর্শক মাহাবুবুল ইসলাম ও চকরিয়া থানা পুলিশসহ উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের পঁহরচান্দা ও পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের মাতামুহুরী নদীর বেতুয়া বাজার পয়েন্টে পৃথক অভিযানের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে ব্যবস্থা গ্রহনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-