ডেস্ক রিপোর্ট ◑ জসিম উদ্দিন রানার বয়স মাত্র ২০ বছর। কিন্তু এ বয়সেই তিনি ভয়ংকর সব কাজ করেছেন। গত পাঁচ বছরে তিনি প্রেমের ফাঁদে ফেলে অন্তত অর্ধশত কিশোরী ও নারীকে ধর্ষণ করেছেন। তাদের কারো কারো সঙ্গে সম্পর্ক গড়িয়েছিল বিয়ে পর্যন্তও। পরে কলহের জেরে তাদেরও হত্যা করেন তিনি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আলমের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় রানা যেখানে উঠে আসে কিশোরীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলা, পাতানো বিয়ে আর দ্বিতীয় স্ত্রী হত্যার নানা রোমহর্ষক বর্ণনা।
জসিম উদ্দিন রানা বরগুনা জেলার পাথরঘাটা থানার পদ্মা করমজাতলা এলাকার আব্দুল জলিলের ছেলে।
বৃহস্পতিবার রাতে পাতানো দ্বিতীয় স্ত্রী মাদারীপুরের সদর থানাধীন চরমুগুরিয়া এলাকার দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে সুরভী আক্তার হত্যা মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন এই জসিম উদ্দিন রানা। এরপরই বেরিয়ে আসে তার অপকর্মের এসব নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভোলাব তদন্ত কেন্দ্রের এস আই আবুল কালাম আজাদ জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার কাঞ্চন দক্ষিণ বাজার এলাকার মনির মাস্টারের বাড়ির ভাড়াটিয়া ও প্রাণ কোম্পানির এসআর জসিমউদ্দিন রানা তার স্ত্রী সুরভী আক্তারকে শ্বাসরোধে হত্যা করে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পুলিশ সোমবার রাতে জসিমউদ্দিন রানার নিজ বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটার থানাধীন পদ্মা করমজাতলা এলাকার অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে।
মঙ্গলবার দুপুরে আটক রানা নারায়ণগঞ্জ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আলমের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
স্বীকারোক্তিতে রানা জানায়, ১৫ বছর বয়স থেকেই তার বিকৃত যৌন লালসা ছিল। সে স্কুলজীবন থেকেই বিভিন্ন কিশোরীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করতো। এ কারণে এলাকা ছাড়া হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়াতো রানা। সে যেখানেই যেতো সে এলাকার বিবাহিত, বিধবা, বিপত্মীক অথবা কিশোরীদের কথার মায়াজালে ফেলে ধর্ষণ করতো।
গত ২০১৬ সালে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নোনদা এলাকার নান্নু মিয়ার মেয়ে নাজনীন বেগম প্রেমের টানে তার কাছে ছুটে এলে সে তাকে ঘরে তুলতে বাধ্য হয়। পরে নকল কাজি দিয়ে বিয়ের নাটক করে নাজনীনের সঙ্গে সংসার শুরু করে রানা। সে দাম্পত্যে পারভীন নামে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। গত বছর তাকে ফেলে পালিয়ে সাভার চলে আসে রানা। সেখানে মোবাইলে প্রেমের সম্পর্কের জেরে মাদারীপুরের সদর থানাধীন চরমুগুরিয়া এলাকার দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে সুরভী আক্তার তার কাছে ছুটে এলে আবারো নকল কাজি দিয়ে বিয়ে করে সংসার শুরু করে রানা। কিন্তু বিয়ের ব্যাপারটি রানার কয়েকজন প্রেমিকা টের পেয়ে যাওয়ায় সে ২ মাস আগে রূপগঞ্জে চলে আসে। এখানে প্রাণ কোম্পানির এসআর পদে চাকরি নিয়ে কাঞ্চন বাজারের মনির মাস্টারের বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস শুরু করে।
এদিকে তার পাতানো দ্বিতীয় স্ত্রী সুরভি নকল বিয়ে ও বহু নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি টের পেয়ে তাকে আসল কাবিন করতে চাপ দেয়। অন্যথায় তার পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলার হুমকি দেয় সুরভী। এতে ঘাবড়ে গিয়ে রানা স্ত্রী সুরভীকে বৃহস্পতিবার রাতে বাড়িতে পোলাও মাংস রান্নার করার জন্য অনুরোধ করেন। পরে রাতে খাবারের পর কোকাকোলার সঙ্গে নেশাজাতীয় ট্যাবলেট খাইয়ে সুরভীকে অচেতন করে রাতেই গলায় ওড়না পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করে। পরে লাশ ঘরে রেখে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে বরগুনায় পালিয়ে যায়। সুরভী মারা গেছে সেই খবর আবার সে শ্বশুর দেলোয়ার হোসেনকে মোবাইলে ফোন করে জানায়।
এ ঘটনায় সুরভীর বাবা বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্তে নেমে সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় বরগুনার পাথরঘাটার থানাধীন পদ্মা করমজাতলা এলাকায় জসিম উদ্দিন রানার নিজ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।
তদন্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আরো জানান, গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের রানা জানান যে গত চার বছরে তিনি ৪৮ জন নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। তাদের মধ্যে কাউকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে, কাউকে আবার টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছে। আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে দ্বিতীয় স্ত্রীকে খুনের বর্ণনা দিয়ে তার অপরাধের সবকিছু স্বীকার করেছেন রানা। তার দুই স্ত্রীর কারো কাছেই কোনো কাবিননামা নেই। মূলত দ্বিতীয় স্ত্রী তার একাধিক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের কথা জেনে যাওয়ায় এবং বিয়ের কাবিন করার জন্য চাপ দেয়ার কারণেই তাকে হত্যা করেছেন বলে জসিম জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন। এর পাশাপাশি আরো প্রায় অর্ধশত নারীকে প্রেমের ফাদেঁ ফেলে ধর্ষণের কথাও তিনি আদালতে স্বীকারোক্তি দেন।
রূপগঞ্জ থানার ওসি মাহমুদুল হাসান বলেন, স্ত্রীকে হত্যার দায় স্বীকার করে জসিমউদ্দিন রানা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। রানার অন্যান্য অপকর্মগুলোর ব্যাপারে আমরা তদন্ত করে খতিয়ে দেখছি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-