ডেস্ক রিপোর্ট ◑ বাণিজ্য ও বিনিয়োগে উদ্যোক্তাদের আন্তর্জাতিক সক্ষমতা তৈরি হয়েছে অনেক আগেই। অনেক উদ্যোক্তা দেশের বাইরে বিভিন্ন দেশে শিল্প খাতে বিনিয়োগ করেছেন। দেশে বিনিয়োগের সুযোগ কম থাকায় কয়েকটি বড় শিল্প গ্রুপ বিদেশে বিনিয়োগে সরকারের কাছে অনুমতি চায়। এসব উদ্যোক্তা দেশেই আরও বিনিয়োগ করতে পারেন।
তবে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে প্রায় অপরিহার্য একটা গভীর সমুদ্রবন্দরের অভাবে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে এখনও প্রত্যাশিত গতি নেই। বিদেশি বিনিয়োগও নিরুৎসাহিত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ এই বন্দর সংকট। বিশ্বব্যাংকের সহজে ব্যবসা করার বৈশ্বিক সূচকে (ইজ অব ডুয়িং বিজনেস) পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণও বন্দর সংকট। এই পরিপ্রেক্ষিতে দেশে প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করছে সরকার।
কক্সবাজারের মহেশখালীতে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে এ মাসেই। প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান সরকারের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা জাইকা। প্রকল্পের ব্যয় পর্যালোচনাসহ কারিগরি ও অন্যান্য সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে সংস্থার পক্ষ থেকে।
২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় গতকাল মঙ্গলবার এই প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী এবং একনেকেরও চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।
গভীর সমুদ্রবন্দরের অভাবে এখন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ফিডার ভ্যাসেলে (ছোট জাহাজে) পণ্য বোঝাই কনটেইনার যায় সিঙ্গাপুর গভীর সমুদ্রবন্দর অথবা হংকং বন্দরে। মালয়েশিয়ার কেলাং এবং শ্রীলংকার কলম্বো গভীর সমুদ্রবন্দরও ব্যবহার হয় রপ্তানি গন্তব্য বুঝে। এতে রপ্তানি বাণিজ্যে অতিরিক্ত সময় ব্যয় ২০ থেকে ২৫ দিন। প্রতিযোগিতামূলক দরে মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন সত্ত্বেও রপ্তানি বাণিজ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে লিড টাইম। অর্থাৎ, ক্রেতার কাছে রপ্তানি আদেশ পাওয়ার পর পণ্য পৌঁছানোর মাঝখানের সময়টা। গভীর সমুদ্রবন্দর উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে এই লিড টাইম কমবে অন্তত ২৫ দিন। এতে বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দেওয়া সহজ হবে।
সরকারের এই সিদ্ধান্তকে যুগান্তকারী উল্লেখ করে স্বাগত জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরসহ মোট নয়টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয় একনেকে। এসব প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। প্রকল্পগুলো হচ্ছে- লেবুখালী-রামপুর-মির্জাগঞ্জ সংযোগ সড়ক নির্মাণ, কচুয়া-বেতাগী-পটুয়াখালী-লোহালিয়া-কালাইয়া সড়কের ১৭তম কিলোমিটারের পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ফায়ারিং রেঞ্জের আধুনিকায়ন, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা কার্যালয় নির্মাণ, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন, বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন, জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার পাকেরদহ ও বালিজুরি এবং বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার জামথল এলাকা যমুনা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা ও ঢাকা স্যানিটেশন ইমপ্রুভমেন্ট।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-