ডেস্ক রিপোর্ট ◑ নববধূ-বরকে নিয়ে ফেরার পথে রাজশাহীর পদ্মায় নৌকাডুবির ঘটনায় এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় এখনও নববধূসহ অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন।
শুক্রবার (৬ মার্চ) সন্ধ্যায় মহানগরীর শ্রীরামপুর এলাকার বিপরীতে মধ্যপদ্মায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। সৌভাগ্যক্রমে নদী সাঁতরে পাড়ে উঠে প্রাণে বেঁচে গেছেন বর। বর্তমানে নদীতে উদ্ধার কাজ অব্যাহত রেখেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রাজশাহী সদর দফতরের ডুবুরি ইউনিট। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়াতে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে রাজশাহী সদর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বলছে- পদ্মা নদীতে বিয়ে বাড়ির দু’টি নৌকা ডুবে গেছে। দুই নৌকায় প্রায় ৩৮ জন যাত্রী ছিলেন। ঘটনার পর উদ্ধার করা হয়েছে ১৪ জনকে। এর মধ্যে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর মরিয়ম খাতুন নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন- প্রায় ২৪ জন। তারা শুক্রবার সন্ধ্যায় বরের বাড়িতে বৌ-ভাতের অনুষ্ঠান শেষে নববধূ নিয়ে ফিরছিলেন। ফিরোনি অনুষ্ঠানের জন্য বর-কনেসহ কনে পক্ষের লোকজন নদীর ওপারে চরখিদিরপুর থেকে ওপারে থাকা পবা উপজেলার ডাঙেরহাটে ফেরার পথে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় সৌভাগ্যক্রমে নদী সাঁতরে পাড়ে উঠে প্রাণে বেঁচে গেছেন বর আসাদুজ্জামান রুমন (২৫)। তিনি নদীর ওপারে থাকা চরখিদিরপুর গ্রামের মৃত ইনছার আলীর ছেলে। তবে এখনও নিখোঁজ রয়েছেন কনে সুইটি খাতুন পূর্ণিমা (২০)। তার বাড়ি রাজশাহী শহর সংলগ্ন পবা উপজেলার ডাঙেরহাট গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের শাহীন আলীর মেয়ে। বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) রুমন-সুইটির বিয়ে হয়।
এদিকে উদ্ধার হওয়া ১৪ জনের মধ্যে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ছয়জনের নাম জানা গেছে। এরা হলেন- খাদিমুল ইসলাম (২৩), রতন আলী (২৮) ও তার স্ত্রী বৃষ্টি খাতুন (২২), সুমন আলী (২৮) ও তার স্ত্রী নাসরিন বেগম (২২) এবং মেয়ে সুমনা আক্তার (৬)। এর মধ্যে খাদিমুল ছিলেন নৌকার মাঝি। আর রতন ও তার স্ত্রী বৃষ্টি খাতুন জীবিত উদ্ধার হলেও তাদের ছয় বছরের মেয়ে মরিয়ম খাতুন মারা গেছে। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বাবা-মায়ের সঙ্গে তাকে উদ্ধার করা হয়েছিল। আর মেয়েকে নিয়ে সাঁতরে উঠেছিলেন সুমন-নাসরিন দম্পতি।
এদিকে, শুক্রবার সন্ধ্যায় নৌকাডুবির পর আশপাশের অসংখ্য মানুষ এবং নিখোঁজদের স্বজনরা মহানগরীর শ্রীরামপুর থাকা জেলা প্রশাসকের ডাক বাংলোর সামনের ঘাটে ভিড় করেছেন। ঘটনাস্থলে রয়েছেন রাজশাহী জেলা প্রশাসন, নৌ-পুলিশ, মহানগর পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারাও। বিজিবির স্পিডবোট নিয়ে পদ্মানদীতে বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল নিখোঁজদের উদ্ধারের জন্য তাদের তল্লাশি অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। সীমান্ত এলাকা হওয়ায় তাদের সঙ্গে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরাও স্পিডবোট নিয়ে নদীতে নিখোঁজদের খুঁজছেন। নদীর ওপারে প্রস্তুত রয়েছে অ্যাম্বুলেন্সও।
ঘটনাস্থলে থাকা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের রাজশাহী সদর দফতরের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আব্দুর রউফ বাংলানিউজকে জানান, শুক্রবার রাত ৭টা ৯ মিনিটে জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ থেকে এ নৌকাডুবির ঘটনা জানানো হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যেই তারা বেরিয়ে পড়েন। তবে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তারা কাউকে উদ্ধার করতে পারেননি। যারা উদ্ধার হয়েছেন তারা কেউ সাঁতরে উঠেছেন আবার কেউ বালুবাহী ট্রলারে উঠে কোনো রকমে বেঁচে এসেছেন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রাজশাহী সদর দফতরের উপ-পরিচালক আবদুর রশীদ বলেন, তাদের ডুবুরি ইউনিটে মোট পাঁজন সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন নৌবাহিনীর একটি ট্রেনিংয়ে রয়েছেন। আর একজন রয়েছেন ছুটিতে। দুইজন সদস্য অবশিষ্ট রয়েছেন। তাদের দিয়েই বর্তমানে পদ্মানদীতে নিখোঁজদের উদ্ধারে অভিযান চলছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) একটি ডুবুরি ইউনিট রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। তারা ভোরের মধ্যে এসে পৌঁছাবে। এর আগ পর্যন্ত তাদের ডুবুরি ইউনিট নিখোঁজদের তল্লাশি অভিযান অব্যাহত রাখবেন। যদিও জীবিত অবস্থায় এখন নিখোঁজদের উদ্ধার হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
দুর্ঘটনা কীভাবে ঘটেছে জানতে চাইলে স্থানীয়দের বরাত দিয়ে আবদুর রশীদ জানান, দু’টি নৌকাই পাশাপাশি যাচ্ছিলো। হঠাৎ বাতাসে ডুবচরের সঙ্গে ধাক্কা লেগে প্রথম নৌকাটি তলা ফেটে ডুবে যায়। এসময় দ্বিতীয় নৌকাটি প্রথম নৌকার সঙ্গে ধাক্কা গেলে ডুবে যায়। এমন সময় পাশ দিয়ে যাওয়া একটি বালুবাহী ট্রলারে উঠে ১৪ জন প্রাণে বেঁচে যান। এদের মধ্যে থেকে এক শিশুকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক জানিয়েছেন, এ নৌকাডুবির ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্ধার কাজ মনিটরিং করা হচ্ছে। যাদের উদ্ধার করা হয়েছে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে এরই মধ্যে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া বিআইডব্লিউটিএর একটি ডুবুরি ইউনিট রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। তারা ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছালে যৌথভাবে উদ্ধার তৎপরতা চালাবে। যতদূর সম্ভব নিখোঁজ প্রত্যেককেই উদ্ধারের জন্য তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এ সময় নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার করে দেওয়ার ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক। এছাড়া আহতদের প্রত্যেকের চিকিৎসা ব্যয় বহনের ঘোষণা দেন।
শুক্রবার রাত সোয়া ১০টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। এ সময় তিনি নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজদের উদ্ধার কাজ সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন। নৌকাডুবিতে এক শিশু নিহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেন। এছাড়া পদ্মানদীতে নিখোঁজদের উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেন।
এছাড়া রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন খবর পাওয়ার পর পরই ঘটনাস্থলে যান। তিনি তার নিজ এলাকার লোকজনকে ধৈর্যসহকারে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আহ্বান জানান। রাতের অনেকটা সময় অবস্থান করে উদ্ধার কাজের তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করেন নিজেই। এছাড়া নিহত শিশু ও নিখোঁজদের পরিবারের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-