মনজুর মেম্বার ও কমিউনিটি পুলিশের সহযোগিতায় ৫ রোহিঙ্গা যুবতী উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক ◑

দালালচক্রের বিভিন্ন প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া পাড়ি দিতে গিয়ে ২০১৩-২০১৪ সালে কয়েক হাজার বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা সাগরে ডুবে মারা যায়। সেই যাত্রায় এখনও নিখোঁজ রয়েছেন কয়েক হাজার যুবক।

কিন্তু প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও অভিযানের কারণে সে সময় মানবপাচার প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। তবে সম্প্রতি আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে মানবপাচারকারী চক্র। এবার তাদের টার্গেট প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা।

কক্সবাজারের উখিয়ায় বিভিন্ন পথ ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে মানবপাচারের ঘৃর্ণ্য অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে একটি দালাল চক্র। তবে তাদের সেই অপচেষ্টা প্রতিরোধ করার জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ কমিউনিটি পুলিশের সদস্যরা সদা প্রস্তুত রয়েছে।

সেই সূত্র ধরে উখিয়া থানার অন্তর্গত মরিচ্যা বাজার এলাকা থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া রোহিঙ্গা নারীদের স্থানীয় ইউপি সদস্য এম মনজুর আলম ও কমিউনিটি পুলিশের ওয়ার্ড সভাপতি যুবনেতা গিয়াস উদ্দিন, সহ-সভাপতি আবুল কালাম ও সম্পাদক জামাল উদ্দিনের দূরদর্শিতায় ক্যাম্প পালানো ৫ রোহিঙ্গা যুবতীকে উদ্ধার উখিয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।

তথ্যসূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের তথ্য অনুযায়ী শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে রোহিঙ্গা পাচারের খবর পেয়ে স্থানীয় মেম্বার এম. মনজুর আলম, কমিউনিটি পুলিশের গিয়াস উদ্দিন,আবুল কালাম ও জামাল উদ্দিন পূর্ব নির্ধারিত কাজ ফেলে মরিচ্যা বাজারে অবস্থান করে কক্সবাজারমুখী সিএনজি গতিরোধ করে তাদের উদ্ধার করে উখিয়া থানা পুলিশকে খবর দিলে দ্রুত পুলিশের একটি দল এসে উদ্ধারকৃত রোহিঙ্গাদের থানায় নিয়ে যায়।

উদ্ধার হওয়া যুবতীরা হলেন, থাইংখালী জামতলী ক্যাম্পের মৃত হোসেন আহমদের মেয়ে শফিকা, মৃত শামসুর মেয়ে সুফেয়া, মৃত আবদুল হকের মেয়ে সাবেকুন নাহার, মৃত মোঃ হোসেনের মেয়ে নুর ফয়েজ ও কামাল হোসেনের মেয়ে তসলিমা।

তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায়, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মালয়েশিয়া ফাঁড়ি দিতে আসা বেশীর ভাগ রোহিঙ্গা যুবতীরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মালয়েশিয়া থাকা অবিবাহিত যুবকদের সাথে তাদের বিয়ে ঠিক করার পর। জীবন সংঙ্গীকে কাছে পাওয়ার জন্য এই পথ বেঁচে নিয়েছে। কারণ রোহিঙ্গা বৈধ পথে বিদেশ ফাঁড়ি দেওয়ার কোন সুযোগ নেই।

এসব নারীর অনেকেই জানিয়েছেন, বিয়ে করে সংসার পাতার আশায় তাঁরা সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চিন্তা করেছিলেন। সেখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গা যুবকদের সঙ্গে অনেকেরই বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যাওয়ার খরচ বহন করছেন ওই যুবকেরাই।

স্থানীয় ইউপি সদস্য এম মঞ্জুর আলম বলেন, মানবপাচার ও মাদক মুক্ত এলাকা গড়তে চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ আলমের নির্দেশনায় আমি নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছি, যদিও কাজটি বেশ কঠিন, তবে আমার বিশ্বাস আমার এলাকার মানুষ আমার কাজে পূর্ণ সহযোগিতা করবেন। আর আমার এলাকার অসৎ ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলছি, সব ধরনের অসৎ ব্যবসা বন্ধ করে দাও, মাদক সেবনকারীদের বলব নিজেদের সংশোধন কর, না হলে যত শক্তিশালী হও রক্ষা পাবে না, আর যারা এখনো মানবপাচার, মাদক ব্যাবসায়ী ও মাদক সেবিদের প্রশ্রয় দাও তাদের উদ্দেশ্যে বলব, নিজের লাভের জন্য এসবের সাথে সম্পৃক্ত কোন ব্যাক্তিকে আশ্রয় দিও না, অন্যতায় আশ্রয় দাতারাও রক্ষা পাবে না, পুলিশ প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ, মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হলে এমন ব্যবস্থা করুন, যাতে কোন মানুষ মাদক ব্যবসার কথা চিন্তা করলে ভয়ে রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটাতে হয়।

আমার ব্যাক্তিগত একটি ঘোষনা: যদি কোন ব্যক্তি মাদক ও মানবপাচারকারীদের ধরিয়ে দিতে পারেন তাহলে আপনার নাম গোপন রেখে আমার পক্ষ থেকে পুরস্কার দেব। পরিশেষে সবার কাছে আমার বিনীত অনুরোধ আসুন সবাই মিলে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষা করি।

তিনি আরো বলেন, মানবপাচারের মত ঘৃণ্য কাজ মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে কোন ধরনের আপোষ নয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করছেন।

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মর্জিয়া আক্তার মর্জি জানান, আটক তরুণীদের নিজ নিজ ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

উল্লেখ, পর্যটন নগরী কক্সবাজার থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় অনলাইন গণমাধ্যম ‘কক্সবাজার জার্নাল ডটকমে’ প্রকাশিত ‘রোহিঙ্গা পাচারের নয়া পথ মরিচ্যা গোয়ালিয়া রোড’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এই পর্যন্ত ৭ রোহিঙ্গা যুবতী উদ্ধার করা হয়।

আরও খবর