বাম্পার ফলনে উখিয়ায় লাউ চাষিদের মুখে হাসির ঝিলিক

এম.এস রানা, উখিয়া ◑

স্বাদের লাউ বানাইলি মোরে বৈরাগী, লাউয়ের আগা খায়লাম ডগা গো খায়লাম, লাউ দিয়া বানাইলাম ডুক ডুকি। গ্রাম বাংলার এ গান টি কম বেশি সবার কাছেই বেশ পরিচিত।
লাউ শীতকালীন সবজি হলেও এখন বার মাসই পাওয়া যায়। দেশের অনেক অঞ্চলে এটাকে কদু নামে চেনে বেশি। এ মৌসুমে লাউয়ের বাম্পার ফলন হয়েছে। হরেক রকম লাউয়ে ভরে গেছে।
উখিয়া উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাট বাজার। লাউ ফলনে কৃষকের মূখে হাসির ঝিলিক দিলেও বাজারে গিয়ে তা নিমিষেই মলিন হয়ে যাচ্ছে বাজারের দর শুনে।
উখিয়া মরিচ্যা বাজারে লাউ নিয়ে আসা চাষি নাজির হোছন বলেন, পার্বত্য এলাকা বরই তলী থেকে ২০ টি লাউ নিয়ে বাজারে এসেছে গাড়ি ভাড়া পড়েছে ১২০ টাকা, লাউ বিক্রি করে পেয়েছি সাড়ে ৩ শত টাকা মাত্র সাথে একটি দিন শেষ।
উৎপাদনের খরচের তুলনায় লভ্যাংশ আসেনা, তবে তিনি বিগত বছরে লাউ চাষে অনেকটা লাভের মুখ দেখেছিল। ছোট সাইজের একটি লাউ পাইকারী বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০/১২ টাকায়, বড় সাইজের একটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ১৫/২০ টাকা মাত্র। তবে খুচরা বাজারে এর দাম অনেক দোকানে দ্বিগুন।
মরিচ্যা বাজারের পাইকারী ক্রেতা আবদুস সালাম বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর বাজারে পাওয়া যাচ্ছে প্রচুর। দাম বেশ নাগালের মধ্যে হওয়াতে কাষ্টমারদের আগ্রহ বেশি। আমরা জেলা শহরসহ বিভিন্ন জেলায় বাজারে  এসব লাউ বিক্রি করা হবে।                                     

দাম যায় হউক না কেন লাউ আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় সবজি যা অনেকের কাছেই প্রিয় একটি খাবার। লাউ সাধারণত শীতকালে বসতবাড়ির আশপাশে চাষ হয় তবে এখন প্রায় সারা বছরই লাউ চাষ করা হয়। লাউ একই সঙ্গে সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর একটি সবজি।

কারণ লাউয়ে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান ও পানি থাকার পাশাপাশি এতে উপকারি ফাইবার থাকে। লাউ মাছের তরকারি হিসেবে, লাবড়া, নিরামিষ, ভাজি, বড়া কিংবা সালাদ হিসেবেও খাওয়া যায়। এছাড়া লাউয়ের পাতা ও ডগা শাক হিসেবে খাওয়া যায়। কম ক্যালরির খাবার হিসেবে লাউ আদর্শ খাবার।

লাউয়ে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার থাকে এবং খুবই কম ক্যালোরি ও ফ্যাট থাকে যা ওজন কমাতে অত্যন্ত সহায়ক। রক্তের কোলেস্টেরল কমতেও সাহায্য করে লাউ। তাছাও লাউ এ কলেস্টেরল এর পরিমাণ শূন্য যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এতে বিদ্যমান ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ হার্টের জন্যে খুবই স্বাস্থ্যকর।

ক্যালরির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও লাউ যথেষ্ট উপকারী। লাউয়ে প্রচুর পরিমাণে দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় ফাইবার এবং পানি থাকে। দ্রবণীয় ফাইবার খাবার সহজে হজম করতে সাহায্য করে এবং হজম সংক্রান্ত সকল সমস্যা যেমন- কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ফাঁপা ও এসিডিটির সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। যাদের পাইলসের সমস্যা আছে তাদের জন্য লাউ খাওয়া অনেক উপকারী। গরমের কারণে বা ঘামের সময় আমাদের শরীর থেকে যে পানি বের হয়ে যায় লাউ সেটার অনেকটাই পূরণ করে ফেলে।

লাউ এ মূল উপাদান হলো পানি(৯৬%) তাই লাউ খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। তাই গরমের সময় লাউ খাওয়া উপকারী বিশেষ করে যারা প্রখর সূর্যতাপে কাজ করেন তাদের হিটস্ট্রোক প্রতিরোধে সাহায্য করে লাউ। এর পাতা রান্না বা ভর্তা করে খেলে মস্তিষ্ককে ঠান্ডা রাখে এবং ঘুমের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। এই সবজি দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ইনসমনিয়া বা নিদ্রাহীনতা দূর করে পরিপূর্ণ ঘুমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

লাউ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে পেট পরিষ্কার রাখে, ফলে মুখে ব্রণ ওঠার প্রবণতাও কমে যায় অনেকটাই। ত্বকের ভেতর থেকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে লাউ, যাদের ত্বক তৈলাক্ত তাদের ত্বকের তৈলাক্ততার সমস্যা অনেকটাই কমে যায় লাউ খেলে। তাছাড়া লাউয়ের প্রচুর পরিমাণে পানি পস্রাবের জ্বালা পোড়ার সমস্যা এবং পস্রাবের হলদে ভাব দূর করে, তাই যাদের এইসব সমস্যা আছে তাদের নিয়মিত লাউ খাওয়া উচিত।

এছাড়া ডায়রিয়া, উচ্চমাত্রার জ্বর এবং অন্য কোন স্বাস্থ্যসমস্যার কারণে শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে বের হয়ে  যাওয়া পানির প্রতিস্থাপনে সাহায্য করে লাউ এবং ডায়াবেটিসের রোগীদের অত্যধিক তৃষ্ণা কমাতেও সাহায্য করে। এছাড়াও জন্ডিস ও কিডনির সমস্যার সমাধানেও উপকারী ভূমিকা রাখে লাউ

আরও খবর