মং রাজার বিয়েতে রাজসিক আয়োজন

রাজসিক আয়োজনেই বিয়ের পর্ব সারলেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মং সার্কেল চিফ বা রাজা। রাজা সাচিং প্রু চৌধুরী বিয়ে করেছেন নিজের শহর খাগড়াছড়ির পানখাইয়া পাড়ার পূর্বপরিচিত পছন্দের পাত্রী উখেংচিং মারমাকে। বিয়েতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে নানা ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় এবং চলে শুক্রবার ভোররাত পর্যন্ত। প্রথা অনুযায়ী রাজপরিবারের বিয়েতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রজা ও সম্মানীয় ব্যক্তিবর্গের সামনে বর ও কনের যৌথ উপস্থিতি এবং রাজ আপ্যায়ন।

শুক্রবার দুপুরে জেলা শহরের অদূরে মং রাজবাড়িতে অন্তত ১০ হাজার মানুষকে আপ্যায়ন করা হয়। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে অগণিত মানুষের পদচারণায় মুখর ছিল ওই অনুষ্ঠান। ব্রিটিশ আমলে প্রবর্তিত পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্কেল চিফ বা রাজা প্রথায় উত্তরাধিকার সূত্রে এই পদে আসীন হয়ে থাকেন। এই সার্কেলের তিন রাজার মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ হলেন রাজা সাচিং প্রু চৌধুরী। এখন তার বয়স ৩৫ বছর।

বিয়ের পরপরই উখেংচিংকে রানী হিসেবে বরণ করা হয়। রানী উখেংচিং মারমা পানখাইয়া পাড়া এলাকার অংক্যজাই মারমা ও সুইনাইচিং মারমার মেয়ে। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্ট থেকে গ্রাজুয়েশন করেছেন তিনি। পরে আমেরিকার মিনেসোটা ইউনিভার্সিটি থেকে ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে বিশ্বখাদ্য কর্মসূচির অধীনে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করছেন।

রাজা সাচিং প্রু চৌধুরীর বিয়েতে শুক্রবার পার্বত্যমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি, খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার শরণার্থী টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, রাঙামাটির এমপি দীপংকর তালুকদার, নারী সাংসদ বাসন্তী চাকমা, সাবেক সচিব ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, সচিব সুদত্ত বিকাশ চাকমাসহ তিন পার্বত্য জেলার সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা ছাড়াও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরাও যোগ দেন।

২০০৮ সালের অক্টোবরে সড়ক দুর্ঘটনায় রাজা পাইহ্লাপ্রু চৌধুরীর মৃত্যু হলে অল্প বয়সে রাজ্যভার গ্রহণ করেন বর্তমান রাজা সাচিং প্রু চৌধুরী। তিনি ঢাকার স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলবি করেছেন। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে রাজা সাচিং প্রু সবার ছোট। দীঘিনালা, মহালছড়ি ও লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার কিছু অংশ ছাড়া প্রায় পুরো খাগড়াছড়ি জেলা মং সার্কেলের আওতাধীন। ১৮৭০ সালে মং সার্কেল, চাকমা সার্কেল ও বোমাং সার্কেল নামে পার্বত্য চট্টগ্রামে তিনটি পৃথক রাজা প্রথার সূচনা হয়।

আরও খবর