আন্তর্জাতিক ডেস্ক ◑
রাস্তায় গাড়ি-ঘোড়া নেই, কল-কারখানাও সব বন্ধ। তারপরও ধোঁয়াশায় ছেয়ে আছে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর। অনেকের ধারণা, সপ্তাহখানেক ধরে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা করোনাভাইরাসে মৃতদের মরদেহ পোড়ানোর কারণেই এই ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশন ঘোষণা দিয়েছে, করোনাভাইরাসে যারা মারা যাচ্ছে, তাদের মরদেহ অবশ্যই পুড়িয়ে ফেলতে হবে। এ কারণে দিনরাত কাজ করতে হচ্ছে শেষকৃত্যে নিয়োজিত কর্মীদের। তারা বিভিন্ন হাসপাতাল, বাড়িঘর থেকে করোনাভাইরাসে মৃতদের মরদেহ সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলছেন।
ইউন নামে উহানের এক শ্মশানকর্মী জানান, তারা প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০টি মরদেহ পোড়াচ্ছেন। গত ২৮ জানুয়ারি থেকে তিনি ও তার প্রায় সব সহকর্মীই সপ্তাহে সাতদিন ২৪ ঘণ্টাই কাজ করছেন। এমনকি সামান্য বিশ্রাম নেয়ার জন্য বাড়ি ফেরারও সময় পাচ্ছেন না কেউ। পরিস্থিতি সামাল দিতে শিগগিরই আরও লোকবল দরকার বলেও জানান তিনি।
ফলে একটানা মরদেহ পোড়ানোর কারণেই শহরজুড়ে ধোঁয়াশা ছড়িয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে চলতি সপ্তাহে উহানের বায়দূষণ ‘বিপজ্জনক’ মাত্রায় দেখা গেছে। শহরটিতে ২০১২ সালেও এমন বায়ুদূষণ হয়েছিল। তবে এবার কল-কারখানা, গাড়ি-ঘোড়া বন্ধ থাকায় মরদেহ পোড়ানো ছাড়া এর দ্বিতীয় কোনও কারণ নেই বলে মনে করা হচ্ছে।
বুধবার প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে মারা গেছেন অন্তত ৭০ জন। এ নিয়ে চীনের মূল ভূখণ্ড ও এর বাইরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬৪ জন। চীনে নতুন করে আরও ২ হাজার ৯৮৭ জনসহ মোট ২৭ হাজার ৩৭৮ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বিশ্বের ২৮টি দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।
বুধবার মৃত ৭০ জনের সবাই হুবেই প্রদেশের। এ নিয়ে প্রদেশটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৫৪৯ জনে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হুবেই প্রদেশে ১৪ হাজার ৩১৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৭৫৬ জনের অবস্থা গুরুতর।
চীনের মূল ভূ-খণ্ডের বাইরে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন দু’জন। মঙ্গলবার হংকংয়ে ৩৯ বছর বয়সী এক ব্যক্তি প্রাণ হারান। তিনি কিছুদিন আগেই করোনাভাইরাসের উৎসস্থল চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ফিরেছিলেন। এর আগে, গত সপ্তাহে ফিলিপাইনে মারা যান উহানফেরত আরও একজন।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। মহামারির আশঙ্কায় বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যেই চীন থেকে নিজ দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হওয়া এ ভাইরাস ঠেকাতে চীন-ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপানসহ বেশ কয়েকটি দেশ।
সূত্র: ডেইলি এক্সপ্রেস, ডেইলি মেইল
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-