বিশেষ প্রতিবেদক ◑
টেকনাফ শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নয়াপাড়া ও শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্প। এই ক্যাম্পের চারপাশে রয়েছে পাহাড়ি জনপদ। পাহাড়ি এই রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে সক্রিয় ৪-৫টি সংঘবদ্ধ ডাকাত দল। তার মধ্যে আবদুল হাকিম ও জকির গ্রুপ অন্যতম।
তারা পাহাড়ে অবস্থান করে মাদক ছাড়াও ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এসব অপরাধে তথ্য আদান প্রদান, অস্ত্র ও মাদক মজদুসহ খাদ্য সরবরাহ করছে ক্যাম্পের কিছু মাঝিরা। ইতিমধ্যে তাদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা। তবে সরকারি বাহিনীদের এ অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ ও দূর্নাম রতাতে মাঝিরা অপপ্রচারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে র্যাব-১৫, সিপিসি-১ টেকনাফ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মির্জা শাহেদ মাহতাব বলেন, ‘ক্যাম্পের কিছু মাঝিদের কারনে রোহিঙ্গা শীর্ষ ডাকাতদের ধরা সম্ভব হচ্ছে না। কেননা মাঝিরা ডাকাতদের তথ্য আদান প্রদানসহ খাদ্য সরবরাহের সহতায় দিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি অভিযানে যাওয়া আগে তাদের কাছে খবর পৌছে যাচ্ছে । এতে খুব সহজে পার পেয়ে যাচ্ছে তারা। এসব কিছু মাঝিদের তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে। সেগুলো গোয়েন্দরা তদন্ত করে আইনি প্রদক্ষেপ নেওয়া হবে। ’
তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ গত বুধবার শীর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাত দলের সাথে পাহাড়ে গোলাগুলিতে ক্যাম্পের মাঝি মো. ইলিয়াছ ওরফে ডাকাত ইলিয়াছ নিহত হয়েছে। তাই এ অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ডাকাত দলের ইনন্ধে ক্যাম্পের কিছু মাঝি অপপ্রচারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অপরাধীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে। এছাড়া চলতি বছরের গেল জানুয়ারি মাসে র্যাবের হাতে ৩ লাখ ইয়াবাসহ ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। তার মধ্যে ৫ জন রোহিঙ্গা।
আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর একাধিক সুত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে ডাকাত দলের যারা সক্রিয় রয়েছে তারা হলো- জাকির ডাকাত, কামাল, খায়রুল আমিন, নুর আলী, আমান উল্লাহ, মাহমুদুল হাসান, হামিদ, রাজ্জাক, বুল ওরফে বুইল্লা, রফিক, মাহনুর ওরফে ছোট নুর। তারা একাধিক দলে ভাগ হয়ে নানা অপরাধ করছে। তাদের মূল নেতা হিসেবে রয়েছে আবদুল হাকিম জকির ও সালমান-শা গ্রুপ। এদিকে সর্বশেষ গত সোমবার রাতে নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক দোকানির কাছে চাঁদা দাবি করে জকির ডাকাত। চাঁদা দিতে রাজি না হলে, জকির ডাকাতরা গুলি বর্ষণ করে। এতে শিশুসহ ১৩ জন রোহিঙ্গা গুলিবিদ্ধ হন।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, ‘শালবন ক্যাম্প অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বেশ কয়েক দফা ওই ক্যাম্পে অভিযান চালাতে গিয়ে হামলার মুখে পড়েছে র্যাব। কেননা অভিযানের আগে ডাকাত দলের কাছে অভিযানের খবর পৌছে যাচ্ছে। ক্যাম্পের কিছু অসাধু মাঝিরা অর্থ লোভে ডাকাতদের সহযোগিতা করছে। সর্বশেষ গত বছর ডিসেম্বরে রোহিঙ্গা ডাকাত দলের গুলিতে দুই র্যাব সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। এমন কি সন্ধ্যার পর ক্যাম্প এলাকায় ঢুকতেও ভয় পান অনেকে।’
রোহিঙ্গাদের অনেকে জানিয়েছে, ক্যাম্পের অনেক মাঝি ডাকাতদের সঙ্গে ঘনিষ্ট সর্ম্পক রয়েছে। ফলে মাঝিদের বাহিরে গিয়ে কিছু বলা ও করার সুযোগ থাকে না তাদের। পাশাপাশি পাহাড়ি ডাকাতদের ভয়ে তারা তাদের ইচ্ছার কথা প্রকাশ করতে পারে না। তাছাড়া স্বদেশে ফেরার কথা বললে তাদের হত্যা করার হুমকি দেওয়া হয়। যার ফলে স্বদেশে ফেরার আগ্রহ দেখাতেও ভয় পায় সাধারণ রোহিঙ্গারা।
টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলম বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নানা অপরাধের কারণে এই অঞ্চলের মানুষ এখন চরম বিপদে। কক্সবাজারের ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার মধ্যে স্থানীয়রা এখন সংখ্যালঘু। বিশাল ক্যাম্পে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষেও সম্ভব হচ্ছে না। দিনের বেলায় যেমন তেমন, রাত নামলেই রোহিঙ্গা ক্যাম্প যেন এক আতঙ্কের জনপদ।’
র্যাব-১৫-এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ বলেন, ‘যতই দিন যাচ্ছে, রোহিঙ্গারা বিভিন্ন অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে। বিশেষ করে ক্যাম্পে রোহিঙ্গা ডাকাত দল সক্রিয় রয়েছে। এতে অভিযানের সময় আমাদের সদস্যরাও গুলিবিদ্ধ হচ্ছে। তাছাড়া ডাতাদের সহযোগিতাকারি কিছু মাঝিদের নাম পাওয়া গেছে, তদের শনাক্ত করা হয়েছে। গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।’
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-