নিজস্ব প্রতিবেদক : নুরুল হক ভূট্টো (৩৫)। টেকনাফের ইয়াবাপাড়া খ্যাত নাজিরপাড়ার এজাহার মিয়ার ছেলে। তবে মানুষের কাছে তিনি পরিচিত ‘ইয়াবা ভুট্টো’ হিসেবে। কেননা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত একজন শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী এই ভুট্টো।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ইয়াবা ব্যবসার সুবাদে কোটিপতি হয়ে যান ভুট্টো। তবে শুধু ইয়াবা ব্যবসাতেই তার অপরাধ সাম্রাজ্য সীমাবদ্ধ ছিল না। রীতিমতো নিজের নামে বাহিনী গড়ে তুলে অন্যের জমিদখল, লোকজনকে জিম্মি করে টাকা আদায়, ভাড়াটে সন্ত্রাসী লালন ও মানবপাচারসহ বিভিন্ন অপরাধকর্ম চালিয়ে ছিল নির্বিঘ্নে। তার লালিত সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে এসব নিয়ে কেউ মুখ খুলতেও সাহস করতো না।
হত্যা, অপহরণ, অস্ত্র, জমিদখল ও প্রতিপক্ষের লোকজনের ওপর সশস্ত্র হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে টেকনাফ থানায় ডজনখানেকের বেশি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব মামলায় একাধিকবার জেলে গেলেও জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও জড়িয়ে পড়ে ছিলেন পুরনো অপরাধ জগতে। প্রভাবশালীদের সঙ্গে তার ছিল গভীর সখ্যতা। ফলে দিনের পর দিন অপরাধের মাত্রা বেড়েই চলছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৫ সালে টেকনাফ সদরের শিলবুনিয়া পাড়ায় বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজনকে কুপিয়ে জখম করে শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান নুরুল হক ভূট্টো। এছাড়া একই এলাকার কালু নামের এক ব্যক্তির বসতবাড়ি-মোটর ভাংচুর এবং হাতের এক আঙ্গুল কেটে নেন তিনি। সাবরাং এলাকার এক ব্যক্তির হাতের কব্জি কেটে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে তার দ্বারা। একই এলাকার জাফর নামের দু’ব্যক্তির একজনের মাথার চুল ন্যাড়া করে দেয়া এবং আরেকজনের কান কেটে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে ভূট্টোর বিরুদ্ধে।
গত ২০১৫ বছরের সেপ্টেম্বরে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা দুই পর্যটক অপহরণের শিকার হন ভূট্টোর সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে। ওইবছর ২৪ সেপ্টেম্বর ভূট্টোর আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয় দুই পর্যটক ঢাকার আশুলিয়ার হাসান আলীর ছেলে মোহাম্মদ আকিব ও সিরাজগঞ্জ জেলার শাহদাতপুর থানার তৈয়ুজাল মোল্লার ছেলে মোহাম্মদ মজনুকে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় অপহরণ মামলা রয়েছে।
এছাড়া ২০১৪ সালে তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে টেকনাফের দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার মো. পুতুইন্যার ছেলে মো. ইসমাইলকে মাথায় ছুরিকাঘাত করে গুরুতর জখম করার ঘটনা ঘটে। ২০১৫ সালের ২১ মার্চ জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে হুমকির ঘটনায় তার বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় জিডি করা হয়।
টেকনাফ থানা সূত্র জানায়, গত ২০১৫ সালের ঈদের নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে ভূট্টো বাহিনীর সন্ত্রাসীদের ছোড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে আহত হয় টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়ার দুদু মিয়ার কন্যা নিহা মনি (৪)। এতে শিশুটির একটি চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনায় টেকনাফ থানায় ১৯/৪২৫ নং মামলা, ২০ হাজারের বেশি ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় বিজিবির দায়ের করা ১৩১/৪২ নং মামলা করা হয়। নাজিরপাড়ার মৃত শেখ আহমদ সিকদারের ছেলে নজির আহমদকে হত্যার উদ্দ্যেশে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে হামলার ঘটনায় ২০১৫ সালের ২১মে ৫৩/৩৬০ নং মামলা, অপহরণের অভিযোগে ২০১৩ সালের ৬ নভেম্বর ১৩নং মামলাসহ অসংখ্য মামলা ও অভিযোগসহ প্রায় ২৮ টি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়ায় খবর সংগ্রহ করতে গেলে ভূট্টোর নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে ৬ সাংবাদিককে কুপিয়ে জখম করে সন্ত্রাসীরা।
এদিকে, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বিশেষ অভিযান শুরুর পর তার সকল সম্পত্তি আদালতের নিদের্শে ক্রোক করে নেয়া হয়। সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারী) আলোচিত নুরুল হক ভুট্টোর আত্মসমর্পণের আলোচনা চলছিল পুরো কক্সবাজারজুড়ে। কিন্তু আত্মসমর্পণস্তলে তাকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও সন্ধ্যায় কক্সবাজার সদর থানা পুলিশের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তাকে আটক করার বিষয়টি জানানো হয়। তবে তাকে কিভাবে কোথায় থেকে আটক করা হয়েছে সে বিষয়ে কিছুই লেখা ছিল ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-