রোহিঙ্গা নিয়ে পরিকল্পনার যেন শেষ নেই। একের পর এক পরিকল্পনা নিয়ে এগুনো হচ্ছে। পরিকল্পনা নানা কৌশলে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। নানা অজুহাতে বাস্তবায়নও করা হচ্ছে সেই সব পরিকল্পনা। অভিযোগ উঠেছে যে, সবগুলোর ‘মাষ্টার মাইন্ড’ এর ভুমিকায় রয়েছে কতিপয় বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) লোকজন। রোহিঙ্গাদের এদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ সৃষ্টির কাজেও কতিপয় এনজিও নেপথ্যে ষড়যন্ত্র করছে বলেও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এমনকি এরকম দেশবিরোধী কাজে জড়িত থাকারও অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ভাবে এনজিও সহ নানা সংগটনের সাথে জড়িত চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের কয়েক ব্যক্তির বিরুদ্ধেও।
রোহিঙ্গা নিয়ে ধারাবাহিক এসব কাজের সর্বশেষ একটি পরিকল্পনা নিয়ে শনিবার কক্সবাজারে একটি কর্মশালার অনুষ্টিত হয়েছে। ‘লোকালাইজেশন রোডম্যাপ’ অর্থাৎ স্থানীয়করণ সড়ক পরিক্রমা শিরোনামের পরিকল্পনাটি নিয়ে স্থানীয় মহলে উদ্বেগ-উৎকন্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। লোকালাইজেশন অর্থাৎ স্থানীয়করণ শব্দটি নিয়ে হোষ্ট কমিউনিটির (স্থানীয় বাসিন্দা) বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে রোহিঙ্গাদের স্থানীয়করণ করার এক ‘মহা ষড়যন্ত্র’ বলে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা যাতে বুঝতে না পারে ঠিক সেভাবেই এনজিওগুলো ধীরে ধীরে একের পর এক পরিকল্পনা নিয়ে এলাকায় খুঁটি গেঁড়ে হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে উঠেপড়ে লেগেছে বলেও মনে করছেন এলাকার লোকজন।
শনিবার শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) এর অফিসে অনুষ্টিত হয়েছে লোকালাইজেশন রোডম্যাপ শিরোনামের কর্মশালাটি। ব্র্যাক এনজিও পরিচালিত বাংলাদেশের খ্যাতনামা উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্টান ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্মশালাটির আয়োজন করে। এতে আরআরআরসি অফিসের কর্মকর্তা সহ আন্তর্জাতিক ও দেশীয় এনজিও’র প্রতিনিধিগণ অংশ গ্রহণ করেন। সবচেয়ে গুরুত্বের বিষয়টি হচ্ছে যে, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মশালায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কোন কর্মকর্তা বা প্রতিনিধি অংশ গ্রহন করেননি। এ বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা ও পুলিশ প্রশাসনের অপর একজন কর্মকর্তা বলেছেন রোহিঙ্গা নিয়ে এরকম কর্মশালা নিয়ে তাঁরা আগে থেকেই জানতেন না। এমনকি এ জাতীয় কর্মশালার উদ্দেশ্য নিয়েও তারা কোনভাবেই অবহিত ছিলেন না। দুই প্রশাসনের কর্মকর্তাদ্বয় বলেন, এখন রোহিঙ্গা ইস্যুটি আমাদের জন্য বড় ধরণের সমস্যা। তাই না জেনে এবং না বুঝে যেনতেন ভাবে সবকিছুতে অংশ গ্রহণ করা তাঁর উচিত মনে করেননি।
কর্মশালাটির বিষয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ কোঅর্ডিনেটর মোহাম্মদ বদিউজ্জামান গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় বলেন-এটা নিয়ে ভুলবুঝাবুঝির কোন অবকাশ নেই। গত ডিসেম্বর মাসেও তারা এটি নিয়ে কক্সবাজারের সুশিল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে আলাপ করেছেন। এ পরিকল্পনা কোন খারাপ কিছু নয়। তিনি বলেন, আমরা চাই রোহিঙ্গার সাথে স্থানীয় কমিউনিটির আরো ব্যাপক সম্পর্ক গড়ে উঠুক। অর্থাৎ স্থানীয় কমিউনিটির লোকজন যাতে রোহিঙ্গাদের মানবতার কাজে আরো ব্যাপকভাবে অংশ নিতে পারে সেটিউ কেবল এখানে করা হচ্ছে। তিনি রোহিঙ্গাদের স্থানীয়করণের পরিকল্পনার কথাও অস্বীকার করেছেন।
তবুও এনজিওদের পরিকল্পনা নিয়ে স্থানীয় সুশিল সমাজের সন্দেহ এবং ষড়যন্ত্রের কথা থেকেই যাচ্ছে। এ বিষয়ে কক্সবাজারের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেছেন-‘ রোহিঙ্গা নিয়ে ষড়যন্ত্রের শেষ নেই। রোহিঙ্গারা একেত মৌলবাদী আদর্শকে লালন করে চলে তাই তাদের নানাভাবে এনজিওগুলো কাজে লাগাতে চায়। যে কাজে লাগাতে চায় সেটি হচ্ছে দেশবিরোধী। তাই এনজিওগুলোর লাগাম টেনে ধরা দরকার।’ তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের এদেশে দীর্ঘমেয়াদী রাখার পরিকল্পনা চলে আসছে অনেক দিন আগে থেকেই। ‘লোকলাইজেশন রোডম্যাপ’ সেই পরিকল্পনারই একটি অন্যতম অংশ বলে তার ধারণা।
কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সভাপতি এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক জনাব আবু তাহের এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন-‘আমি এধরণের একটি কর্মশালার শিরোনাম নিয়েইতো উদ্বিগ্ন হয়ে গেলাম। কেন রোহিঙ্গাদের নিয়ে লোকালাইজেশন শব্দটি ব্যবহার হবে সেটাই বুঝতে পারছি না। তাই আমার সন্দেহ হচ্ছে-এরকম পরিকল্পনা একটি মহাষড়যন্ত্রও হতে পারে। আমি সরকারের উচ্চ মহলে বিষয়টি তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটিজ ফোরামের সভাপতি আলহাজ্ব ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন-‘ রোহিঙ্গাদের নিয়ে এনজিও কর্মীরাই সবচেয়ে বেশী ষড়যন্ত্র করছেন। এমনকি কক্সবাজারের স্বাধীনতা বিরোধী চিহ্নিত পরিবারের কতিপয় সন্তানও একাজে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছেন। তার প্রমাণ স¦রুপ আমি সবার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, দীর্ঘদিন ধরেই এমন লোকগুলো দাবি জানিয়ে আসছে রোহিঙ্গারা যাতে আমাদের স্থানীয় হাটে বাজারে এবং গ্রামে গঞ্জে এসে আমাদের লোকজনের সাথে কাজ কর্ম করুক।’ তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের যাবতীয় সামাজিক কাজের জন্য সরকারের সহযোগিতা চেয়ে এমন লোকগুলো দাবি জানিয়ে আসছেন-যা কিনা অত্যন্ত লজ্জাজনক। জনাব চৌধুরী রোহিঙ্গাদের নিয়ে ষড়যন্ত্রে মেতে থাকা কক্সবাজারের স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের এমন লোকগুলোকে চিহ্নিত করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ সরওয়ার সোহেল বিষয়টি নিয়ে বলেন ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের দিক দিয়ে কক্সবাজার এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান কেননা কক্সবাজারেই আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের ১১লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। একারণে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অস্থিত্ব সু-রক্ষা করার জন্য এখনই যদি পরিকল্পনা করা হয় তাহলে এই জনপদ হয়ে উঠতে পারে এক অশান্তির এলাকা। আর এর সুযোগ নিতে পারে বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো। আমার মনে হয় এই পরিকল্পনা নিয়ে নানা এনজিও গুলো রোহিঙ্গাদের মানবিক সহযোগিতার নামে এখানে নানাপন্ধী আঁটছে। তাই এসব বিষয়ে আমাদের সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তদারকির দাবী রাখছি।
উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন-‘ রোহিঙ্গাদের নিয়ে অনেক খেলা খেলছে এনজিওগুলো। খেলতে খেলতেই রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে আজ দীর্ঘ করা হয়েছে। তারা আরো দীর্ঘ করতে চায়। এরকম লোকালাইজেশন বিষয়টির নেপথ্যে বাস্তবে কি রয়েছে তার প্রকৃত চিত্র খতিয়ে দেখার দাবি জানাচ্ছি।’ তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সাইট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে থাকা এনজিওগুলোর কাজকারবারও অত্যন্ত রহস্য জনক। উখিয়া উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী কাওসার জাহান চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন-‘ রোহিঙ্গাদের মানবিক কারনেই আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সাময়িক কালের জন্য আশ্রয় দিয়েছিলেন। তার মানে এ নয় যে, তাদের দীর্ঘকালের জন্য এখানে রাখা হবে। রোহিঙ্গাদের অবিলম্বে ফিরিয়ে নিতে আমি মিয়ানমারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।’ /আজকের দেশ-বিদেশ
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-