আজিম নিহাদ :
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে চোরাচালান, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো এবং নিরাপত্তা জোরদারে নির্মিত হচ্ছে সীমান্ত সুরক্ষা সড়ক। নানা কারণে নির্মাণ কাজ এতদিন ধীর গতিতে চললেও এবার বেশ গতি পেয়েছে। বর্তমানে তোড়জোড় করে চলছে নির্মাণ কাজ। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর প্রত্যাশা ২০২১ সালের মধ্যেই সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজার কার্যালয়ের তথ্যমতে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম এলাকা থেকে শুরু হয়ে উখিয়ার পালংখালী হয়ে টেকনাফের নাফনদীর কূলঘেঁষে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ৬১ কিলোমিটার সীমান্ত সুরক্ষা বাঁধ তথা সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পে খরচ হচ্ছে ১৪১ কোটি টাকা। সড়কটি নির্মিত হলে মাদক-অস্ত্র চোরাচালান, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশসহ সীমান্তের সকল অপরাধ দমনে বিজিবি জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। বাড়বে সীমান্ত নিরাপত্তাও।
সরেজমিনে শনিবার উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের আঞ্জুমানপাড়া গিয়ে দেখা যায়, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থিত খালের পাড় ঘেঁষে বাংলাদেশ অংশে নির্মিত হচ্ছে সীমান্ত সুরক্ষা সড়ক। মাটি ভরাটসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিক ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরা। তাদেরকে পাহারা দিচ্ছেন বিজিবি সদস্যরা।
স্থানীয় আঞ্জুমানপাড়া এলাকার ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সুলতান আহমেদ বলেন, ডিসেম্বরের শেষের দিকে আঞ্জুমানপাড়া অংশে কাজ শুরু হয়। সড়কটি নির্মিত হলে সীমান্ত নিরাপত্তা অত্যন্ত জোরদার হবে। চোরাচালানও সহজে ঠেকানো যাবে। কারণ যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ না হওয়ার কারণে চোরাচালান ঠেকানো অনেক সময় কঠিন হয়ে উঠে। এই সড়কটি নির্মাণের কারণে সীমান্তবর্তী মানুষ অত্যন্ত খুশি।
হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উনচিপ্রাং সীমান্তে গিয়েও সড়ক নির্মাণ কাজের বেশ তৎপরতা দেখা যায়। এস্কেভেটর দিয়ে মাটি ভরাট ও কালভার্ট সরানোর কাজ চলছে সেখানে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, সীমান্ত সুরক্ষা সড়ক নির্মাণের জন্য সরানো হবে ৪৬ টি কালভার্ট। নতুন করে নির্মাণ ও মেরামত করা হবে ৮টি কালভার্ট। প্রকল্পের চুক্তি অনুযায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড শুধুমাত্র মাটির সড়ক নির্মাণ করবে। এই সড়কের উপরের অংশ হবে ২২ ফুট। নিচের অংশে আরও প্রশস্থ হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সক্ষম করে নির্মাণ করা হচ্ছে সড়কটি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্মামী দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন, “এটি বাঁধ কাম সীমান্ত সড়ক। বাঁধের সেকশন, হাইট এমনভাবে দেওয়া হচ্ছে, যেটা বিজিবির জন্য টহল রাস্তা হিসেবে ব্যবহার হবে। প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, সড়কটি ব্যবহার করে বিজিবি যাতে নিরবিচ্ছিন্ন টহল জোরদার করতে পারে”।
তিনি আরও বলেন, “প্রকল্পের চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছরে কাজ শেষ হওয়ার সময় নির্ধারণ ছিল। কিন্তু প্রকল্প প্রণয়নকালে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বাদ পড়ে। পরে বিজিবির দাবীর প্রেক্ষিতে প্রকল্প সংশোধন করা হয়। একারণে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। তবে এখন দ্রুত গতিতে কাজ চলছে”।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারী) সীমান্ত সুরক্ষা সড়ক নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। পরিদর্শনে গিয়ে সীমান্ত সুরক্ষা বাঁধ তথা সড়কের কাজ ২০২১ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, সীমান্তের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য এই সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্মাণ কাজ সেইভাবে আগায়নি দেখে সময় বাড়ানো হচ্ছে। এখন কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। আগামী বছরের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-