বস্তিতে আগুন, পুড়ল ১৫০ ঘর

  • আহত ২০, নিঃস্ব ৩ শতাধিক পরিবার

ঘড়ির কাটা তখন প্রায় সাড়ে দশটা। কাপড় ধুতে যাব, ঠিক তখনই একটা আওয়াজ কানে আসে। মুহূর্তেই চারদিকে আগুন আগুন করে চিৎকারের শব্দ। বেরিয়ে দেখি তিন নম্বর লাইনের শেষ দিকের ঘরে দাউ দাউ করে আগুন জ¦লছে।

গতকাল শুক্রবার সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন এলাকার ডেল্টা হাসপাতাল সংলগ্ন নওশা মিয়া গলির ডেকোরেটার্স কলোনিতে অগ্নিকা-ের বর্ণনা জানালেন প্রত্যক্ষদর্শী জেসমিন আক্তার। আগুনে পুড়ে গেল জেসমিন আক্তারের ঘরও। শুধু জেসমিন আক্তর নয়, অজানা এই আগুনের পুড়েছে নিম্ম আয়ের মানুষের প্রায় তিন’শ পরিবারের দেড়শতাধিক কাঁচা পাকা সেমি ঘর। আহত হয়েছে ফায়ারকর্মীসহ ২০ জন।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, ১০টা ৪০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সর্ভিসের পাঁচটি ইউনিটের ১৫টি গাড়ি প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ফায়ার সার্ভিস ৯৮টি ঘর পুড়ে যাওয়ার তথ্য দিলেও স্থানীয়রা জানায় আট মালিকের প্রায় দেড়শতাধিক ঘর রয়েছে এই কলোনিতে। যাতে ছোট-বড় মিলে প্রায় তিনশতাধিক পরিবার বসাবাস করেন। যারা নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসা-বাড়িতে, পোশাক কারখানা ও দিনমজুরের কাজ করেন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে চট্টগ্রামের উপ-সহকারী পরিচালক ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘প্রথমে আমাদের তিনটি ইউনিট কাজ শুরু করলেও পরে আরও দু’টি ইউনিট যোগ দেয়। পাঁচটি ইউনিট দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ আনতে সক্ষম হয়। তবে এতে কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি কিংবা কত ঘর পুড়েছে, তা তদন্ত সাপেক্ষে’।

সরু রাস্তায় বিড়ম্বার শিকার ফায়ার সার্ভিস : ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণ আনতে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ ইউনিটের ১৫টি গাড়ি কাজ করলেও, ঘটনাস্থলে ঘেঁষতে পারেনি তারা। সরু গলি আর সড়কের মাঝে বিদ্যুতের খুঁটি এবং সড়কের মধ্যখানেই থাকা একটি অবৈধ দোকানে বাধা পড়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো। যদিও দূর থেকে হুস পাইপের সাহায্যে পানি ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ আনার কাজ করেন ফায়ার কর্মীরা।

ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সরু গলি হওয়ায় গাড়ি প্রবেশ করতে না পারায় আমাদের কাজে বেগ পেতে হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সঠিক সময়েই উপস্থিত হয়েছে। কিন্তু বাধাটা ছিল সরু গলি। তারমধ্যে গলি ভেতরে মধ্যখানেই ছিল দোকান। যা স্পট পর্যন্ত আমাদের গাড়ি যেতে পারেনি। তা না হলে আরও দ্রুত সময়েই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হতো’।

ডোবার পানিই ভরসা হয় ফায়ার সার্ভিসের : একেতো সরু গলি, তারমধ্যে ফায়ার সার্ভিসের রির্জাভ পানির সংকটও ছিল। তবে ঘটনাস্থলের পাশেই ছিল পরিত্যক্ত ডোবা। যা আগুন নিয়ন্ত্রণ আনতে কাজে দেয় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের। পানির জন্য এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করতে হয়নি তাদের। আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগেই নিয়ন্ত্রণ আনতে সক্ষম হয় দমকল বাহিনী। পরিত্যক্ত ডোবা থেকেই দুটি মেশিন দিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে পানি সংগ্রহ করেন তারা।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা ফরিদ বলেন, ‘ভাগ্য ভাল পাশেই ডোবাটি ছিল। তা না হলে পানির জন্যও আমাদের বেগ পেতে হতো। আর মাঝখানে আগুন আরও ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভবানও দেখা দিত। পাশে ডোবা থাকায় সেখানেই মেশিন বসিয়ে পানি সংগ্রহ করি। যা দ্রুত সময়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ আনতে কাজে দিয়েছে’।

আহত : আগুনে বড় ধরনে হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করতে গিয়ে আহত হয় ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী। এছাড়া স্থানীয় বাসিন্দদের মধ্যেও প্রায় ২০জনের মতো আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।
তিনি বলেন, ‘ছোট-খাটসহ প্রায় ২০জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন ধোঁয়ায় শ^াস কষ্টের মধ্যে পড়ে। পরে উপস্থিত রেডক্রিসেন্ট কর্মীরা তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে পাঠান’।

তদন্ত কমিটি গঠন : আগুন লাগার সূত্রপাত জানতে জেলা প্রশাসন থেকে একটি তদন্ত কমিটি ঘটন করা হয়েছে। তিন সদস্যের এ কমিটিকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামাল হোসেন। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘ঘটনার পর পরই তিন সদস্যের একটি কমিটি ঘটন করা হয়েছে’।

ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ : অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার ও বিভিন্ন ত্রাণ বিতরণ করেছে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠন। এরমধ্যে প্রতি পরিবারের মাঝে দশ কেজি চালসহ ১৬ কেজির ত্রাণ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া প্রতিটি পরিবারের মাঝে কম্বলও বিতরণ করেছেন প্রশাসন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘ঘটনার পরপরই ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে রান্না করে তাদের খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বিকেলে প্রতিটি পরিবারকে ১৬ কেজি করে ত্রাণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া সন্ধ্যায় প্রতি পরিবারের মাঝে দুটি করে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এর বাইরেও তাদের সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে’।

আরও খবর