উখিয়ায় ইয়াবা ব্যবসায়ী পুত্রদের অত্যাচারে ঘরছাড়া বৃদ্ধ পিতা গফুর

শহিদুল ইসলাম, উখিয়া ◑

জীবনের মূল্যবান সময়টুকু প্রবাসে পার করেছেন স্ত্রী, পুত্র – মেয়েদের সুখের আশায়। প্রবাসে যৌবন কাটিয়ে বৃদ্ধ হয়ে শরীর আর না কুলোয় দেশে ফিরে এসেছে গফুর আলম (৫৫)। আজ স্ত্রী ও ছেলে মেয়েরা গ্রাম ছেড়ে শহরে জীবন যাপন করে সুখীও। কিন্তু বয়োবৃদ্ধ গফুর দীর্ঘ ৩০ বছর পর দেশে এসেও ইয়াবা ব্যবসায়ী অবাধ্য দুই সন্তানের অত্যাচারে জীবন হুমকি নিয়ে ঘর ছাড়া ফেরারী জীবন কাটাচ্ছেন।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারী) দুপুরে কথা হয় প্রবাস ফেরত কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী পন্ডিত পাড়ার গফুর আলমের সাথে। প্রতিবেশীদের সামনে আহাজারি করে তিনি বলেন, ১৯৭৮ সালে কিশোর বয়সে সৌদি আরব যাই। ১৯৮৪ সালে এসে পাশ্ববর্তী গৌজঘোনা এলাকা সুলতানা রাজিয়াকে বিয়ে করে কয়েক মাসের মাথায় ফের সৌদি পাড়ি জমাই। প্রায় প্রতি বছর নিয়মিত দেশে যাতায়াত করি।দাম্পত্য জীবনে দুই ছেলে ও এক মেয়ে জন্ম হয়। স্ত্রী ও ছেলে মেয়ের ভবিষ্যৎ ভেবে ও সংসারে অভাব ঘুঁছাতে টানা দীর্ঘ সময় প্রবাসী হয়ে ছেলে মেয়েদের মোটামুটি লেখাপড়া করিয়ে শিক্ষিত করে তুলে গফুর। দেশে ফিরে আসব তাই বিদেশের যাবতীয় আয় রোজগার স্ত্রী ও ছেলেদের কাছে পাঠিয়ে দেন তিনি। কিন্তু স্ত্রী ও ছেলেরা সেই টাকা দিয়ে ইয়াবা ব্যবসা করে।
কয়েকমাস পূর্বে ঢাকা বিমান বন্দরে ছেলে মুবিনসহ ইয়াবা নিয়ে যাওয়ার সময় তার ইয়াবা বাহক গৌজঘোনার জসিম উদ্দীন ১০ হাজার ইয়াবা সহ আটক হলেও মুবিন কৌশলে পালিয়ে যায়। আটক জসিমের স্বীকারোক্তি মতে মবিন ঐ মামলায় পলাতক আসামী হলেও তার সাথে উখিয়া থানা পুলিশের সুসম্পর্ক থাকায় সে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে বলে তার পিতা ও এলাকাবাসী জানান।

স্হানীয় লোকজনের সামনে গফুর আলম জানান,আড়াই বছর পূর্বে দেশে এসে দেখি স্ত্রী ও ছেলে মেয়েরা কেউ ঘরে নেই। তিনি জানান আত্মীয় স্বজনদের মাধ্যমে জেনেছি আমার স্ত্রী ও ছেলে মেয়েরা ৫/৭ বছর ধরে কক্সবাজারে বাসা নিয়ে থাকে। ছেলেরা এলাকায় থেকে ইয়াবা ব্যবসা করে। আমি আসার পর স্ত্রী ও ছেলেরা আমার সাথে একটি দিন থাকেনি।

উপরন্তু তারা আমাকে সহায় সম্পদ তাদের নামে লিখে দিতে চাপ দিতে থাকে। কিন্তু তা না দেওয়ায় ছেলেরা স্বাক্ষী হয়ে স্ত্রী আমার বিরুদ্ধে আদালতে যৌতুক মামলা করে। ছেলে নুরুল আবসার (৩৩) ও কাইছার মুবিন (৩০) গত ১৩ জানুয়ারী সন্ধ্যা ৭ টার দিকে থাইংখালী বাজারে লোকজনের সামনে প্রকাশ্যে মারধর করে। ইতিপূর্বেও স্ত্রীর লেলিয়ে দেয়া ছেলেরা আরও চারবার মারধর করে। গফুর আলম জানান,এব্যাপারে স্হানীয় ভাবে শালিস দরবার হলেও তারা কোন কিছু না মেনে উল্টো মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।

সন্ত্রাসী ছেলেরা তাকে তার পরিশ্রমে গড়া ঘরেও থাকতে দিচ্ছে না। প্রতিনিয়ত হত্যার হুমকি দিচ্ছে সন্ত্রাসী, ইয়াবা ব্যবসায়ী ছেলেরা ও স্ত্রী। এব্যাপারে গফুর আলম উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ জানান। অসহায় গফুরের ভাই ফরিদ আলম বলেন,বৃদ্ধ ভাইকে নিয়ে সর্বদা উদ্বেগে থাকতে হয়। কারণ ইয়াবা কারবারি সন্ত্রাসী ছেলেরা কখন তাকে হত্যা করে এ ভয়ে।

স্হানীয় ইউপি মেম্বার মোজাফ্ফর আহমদ জানান, সন্ত্রাসী ছেলেদের ভয়ে গফুর আলমকে ফেরারী জীবন কাটাতে হচ্ছে। উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন,গফুর আলম দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে এসেও সন্ত্রাসী ছেলেরা তাকে শারিরীক নির্যাতন করে আসছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হার জন্য ইউএনও বরাবরে সুপারিশ করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সন্ত্রাসী ছেলেরা বৃদ্ধ পিতাকে শারিরীক নির্যাতনের অভিযোগ থানায় আইনানুগ ব্যবস্হা নিতে প্রেরণ করা হয়েছে। অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা উখিয়া থানার এসআই মোঃ নুরুল হক জানান,অভিযোগের তদন্ত চলছে। তদন্ত পূর্বক ব্যবস্হা নেয়া হবে।

আরও খবর