শাহীন মাহমুদ রাসেল ◑
বাংলাদেশের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে নান্দনিক সৌন্দর্য। পাহাড়, নদী, ঝর্না ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সারাদেশে। সবুজ শ্যামল বাংলার সৌন্দর্যের এক বিশাল অংশ রয়েছে তিন পার্বত্য জেলায়।
এবারে কক্সবাজার অনলাইন প্রেসক্লাব অনায়াসে বেঁছে নিয়েছে রাঙ্গামাটি জেলাকে। এখানে একইসঙ্গে হৃদয় আর পাহাড়ের অপূর্ব মিতালি। আদিবাসী সংস্কৃতি। আছে ঝর্ণা, ঝুলন্ত সেতু, রাতের ঝিঝি পোকার ডাক। রাঙ্গামাটির অপরূপ প্রাকৃতিক নৈস্বর্গ শুধু মোহিত করবে না, আনমনেই হয়ত কণ্ঠে বেজে উঠবে গান- রাঙ্গামাটির রঙে চোখ জুড়ালো অথবা গ্রাম ছাড়া ওই রাঙ্গামাটির পথ…।
তাই যান্ত্রিক নগরীর ব্যস্ততাকে দুরে ঠেলে ছুট দিলাম রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে। ৪২ জনের এক ঝাক সাংবাদিক নিয়ে কক্সবাজারের হাশিমিয়া মাদ্রাসার সামনে থেকে পূরবী পরিবহনের একটি বাস নিয়ে সকালের নাশতা সেরে বান্দরবান হয়ে রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।
বান্দরবান থেকে রাঙ্গামাটি যাবার পথে পাড় ঘেঁষে একেবেঁকে চলে যাওয়া পাহাড়ি রাস্তাটি এক অনিন্দসুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
গল্প ও মোবাইলে গান শুনতে শুনতে কখন যে পৌঁছে গেলাম টেরই পাইনি। দুপুরে পৌঁছে যাই রাঙ্গামাটি। নেমেই বুক ভরে স্নিগ্ধ বাতাসে নিঃশ্বাস নেই। শহরের মতো সিসাযুক্ত ভারী বাতাস রাঙ্গামাটিতে নেই।হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার।
রাঙ্গামাটিতে আসবো আর ঝুলন্ত ব্রীজ দেখা হবেনা তা তো হয় না। এরপরই বেরিয়ে গেলাম ঝুলন্ত ব্রীজের উদ্দেশ্যে। ব্রীজটি পারাপারের সময় সৃষ্ট কাঁপুনি যেনো এক অসাধারণ অনুভূতি। এখানে দাঁড়িয়েই দেখলাম রাঙ্গামাটির হৃদয়ের মনোরম দৃশ্য। বর্ষায় জলে টইটুম্বুর থাকলেও এই শীতেও অটুট রয়েছে তার সৌন্দর্য। ঘন্টাখানেক ঘোরাঘুরি করে সময় স্বল্পতার জন্য আক্ষেপ নিয়ে ফিরে আসতে হলো।
পরের দিন সকালে সবুজ পাহাড়গুলো ঢেকে আছে সাদা কুয়াশার চাঁদরে। নাস্তা সেরে আবারো নৌভ্রমণ। ইঞ্জিনচালিত নৌকাতে করে একদিকে পাহাড়, আরেক দিকে লেকের বিস্তীর্ণ জলরাশি। সেই লেকের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে ছোট-মাঝারি পাহাড়। শুভলং ঝর্ণা, শুভলং বাজার, বরকল উপজেলা ঘুরে দেখা যায়। লেকের ভিতরে একেকটা ছোট দ্বীপের মতো খাবারের দোকান।
দ্বীপগুলোর নামেও বেশ পাহাড়ি ভাব আছে- টুক টুক ইকো ভিলেজ, গরবা, চাংপাং, পেদা টিং টিং। তার আশেপাশেই কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখতে যাওয়ার কথা শুভলং ঝর্না। এখনো শুষ্ক মৌসুমের রেশ থেকে যাওয়ায় নিষ্প্রাণ ঝর্না দেখতে অনেকের কাছে খারাপ লাগতে পারে। তাই যাওয়া হয়নি। ওপারেই রয়েছে আদিবাসী গ্রাম। সেখানে কিছুটা সময় কাটিয়ে শুভলংয়ের সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতেই চলে গেলাম বিভিন্ন আদিবাসী গ্রামে। সেখানে অবস্থিত এক রেস্তোরা খাবারের দায়িত্ব নিয়ে নিলো। সেখানে দুপুরের খাবার শেষে আবার হোটেলে ফিরে এলাম।
আমাদের হাতে সময় ছিল কম। আসতে মন চাইছিল না, তবুও ফেরার পথ ধরতে হলো। আমরা রাঙ্গামাটি থেকে একই গাড়িতে করে চট্টগ্রাম শহরে চলে আসি। মাঝ পথে মাঝে মাঝে কিছুক্ষণ কাটিয়ে রাত সাড়ে ১২টায় পা রাখি যানজট, ধোঁয়া-ধুলোর কর্মব্যস্ত সেই প্রিয় কক্সবাজারে। স্মৃতিতে নিয়ে আসি একগাদা পাহাড়ি স্বপ্ন। আপনারাও চাইলে কর্মব্যস্ত জীবনকে পেছনে ফেলে দু’টো দিন কাটিয়ে আসতে পারেন প্রকৃতির প্রেমময় পাহাড়ি জনপদ রাঙ্গামাটিতে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-