সমকাল ◑
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েছে মিয়ানমারের মোবাইল নেটওয়ার্ক। কক্সবাজারে ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে মোবাইল ফোনের প্রায় পুরো সুবিধাই ভোগ করছে। কক্সবাজার এলাকায় মিয়ানমারের একাধিক অপারেটরের সিমকার্ডও বিক্রি হচ্ছে। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, এ অবস্থা বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। সম্প্রতি টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির পর্যবেক্ষণে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের শরণার্থীবিষয়ক সেল থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মিয়ানমারের মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে বলে জানানো হয়। বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর সেখানে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে মিয়ানমারের বেতার তরঙ্গের কাভারেজ বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতরে ঢুকে পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয় বিটিআরসি। এরপর সেখানে একটি কারিগরি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই তাদের সেখানে যাওয়ার কথা রয়েছে।
মিয়ানমারে ব্যবহূত বেতার তরঙ্গ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের বিষয়টি আন্তর্জাতিক টেলিকম ইউনিয়নের নীতিমালার সরাসরি লঙ্ঘন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সর্বশেষ গত ২ জানুয়ারি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নেটওয়ার্ক কাভারেজ বন্ধ করতে মিয়ানমারকে বার্তা দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, মিয়ানমার থেকে আগত মোবাইল নেটওয়ার্কের সিগন্যাল এখন বাংলাদেশের ১০ কিলোমিটারের বেশি এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে এ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশি মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা আরোপ করা হলেও মিয়ানমারের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সব ধরনের মোবাইল যোগাযোগ চালিয়ে যেতে পারছে রোহিঙ্গারা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের শরণার্থীবিষয়ক সেল থেকে জানানো হয়, কক্সবাজারের উখিয়া এলাকায় মিয়ানমারের একাধিক মোবাইল অপারেটরের সিমকার্ড কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। গোপনে এই সিমকার্ড বিক্রি হচ্ছে ক্যাম্প এলাকায়।
সূত্র আরও জানায়, বিষয়টি বিটিআরসি থেকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি সত্য। মিয়ানমারের মোবাইল নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতর থেকে ব্যবহার করা যাচ্ছে। কারণ তাদের বেতার তরঙ্গের কাভারেজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিস্তৃত হয়েছে। এটা আন্তর্জাতিক টেলিকম ইউনিয়নের নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কিন্তু বাংলাদেশের এ ব্যাপারে কারিগরিভাবে তেমন কিছু করার নেই। কেবল নেটওয়ার্ক জ্যামার বসানো যেতে পারে, কিন্তু এর জন্য কয়েক হাজার জ্যামার কিনতে হবে, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং একই সঙ্গে স্বাস্থ্যঝুঁকিও সৃষ্টি করবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। মিয়ানমারের নেটওয়ার্ক যাতে বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতরে আসতে না পারে, সে ব্যাপারে কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে পারাটাই হবে সবচেয়ে ভালো সমাধান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। গত ২ জানুয়ারি মিয়ানমারকে পাঠানো বার্তায় বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক টেলিকম ইউনিয়নের নীতিমালা অনুযায়ী এক দেশের জন্য বিভাজিত বেতার তরঙ্গের কাভারেজ কোনোভাবেই অন্য দেশের সীমান্তের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ যেন এ ব্যাপারে দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ নেয়।
এর আগে গত সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় দেশের সব মোবাইল ফোন অপারেটরকে নেটওয়ার্ক বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। ফলে এখন বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটরদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কেবল সরাসরি চ্যানেল পদ্ধতিতে কথা বলা ছাড়া অন্য কোনো সুবিধা ব্যবহার করতে পারে না রোহিঙ্গারা। সূত্র জানায়, সেপ্টেম্বর মাসের পর থেকেই কক্সবাজারের উখিয়াসহ আশপাশের এলাকায় মিয়ানমারের মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে। একপর্যায়ে গোপনে মিয়ানমারের একাধিক অপারেটরের সিমকার্ডও বিক্রি হতে থাকে। এই সিমকার্ড ব্যবহার করে মোবাইল ইন্টারনেটসহ সব ধরনের স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশনও ব্যবহার করা যাচ্ছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-