সরকারের এক বছর : সাফল্যের পাশাপাশি বিব্রত হওয়ার ঘটনাও ছিল

ডেস্ক রিপোর্ট ◑ আজ ৭ জানুয়ারি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের প্রথম বর্ষ। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিজয়ী হওয়ার পর ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি সরকার গঠন করে। গত ১০ বছরের ধারাবাহিকতায় এগিয়ে চলছে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি। বাংলাদেশের আজ সব সূচকে অগ্রগতি। মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। তবে গত এক বছরে বিভিন্ন কাজে সরকারের যেমন সাফল্য আছে তেমনি কিছু ঘটনা সরকারকে বিব্রতও করেছে।

সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের প্রথম বছর সাফল্যসহ গত ১১ বছরে দেশকে বদলে দেয়ার চিত্র এবং আগামী চার বছরে দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের পরিকল্পনার কথা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরবেন।

গত এক বছরে পূর্বে গ্রহণ করা সরকারের ১০ মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- পদ্মা বহুমুখী সেতু, মেট্রোরেল, পায়রা সমুদ্রবন্দর, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং এলএনজি টার্মিনাল পদ্মা রেলসেতু সংযোগ ও কক্সবাজার-দোহাজারী-গুনদুম রেলপথ প্রকল্প।

দুর্নীতি সন্ত্রাস জঙ্গিবাদের কালো তকমা মুছে ফেলে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবিরোধী ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি শুধু দেশেই নয়, সারাবিশ্বেও প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বিশেষ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং নিজ ঘর থেকে শুদ্ধি অভিযানের সাহসী পদক্ষেপ বঙ্গবন্ধুর কন্যার প্রতি দেশের মানুষের আস্থা-বিশ্বাসকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা বর্তমান সরকারের সাফল্যের মধ্যে কৃষি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে রীতিমতো বিপ্লব ঘটেছে। সর্বজনীন শিক্ষানীতি প্রণয়ন, প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে বছরের শুরুতেই বিনামূল্যে বই বিতরণ, প্রাথমিক ও জুনিয়র সমাপনী পরীক্ষার প্রবর্তন, দীর্ঘদিন পর শিল্পনীতি প্রণয়ন, সন্ত্রাস-ধর্মীয় জঙ্গিবাদ দমন, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল এবং কৃষিতে রীতিমতো বিপ্লবের সূচনা সরকারের বড় দাগের সাফল্য হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

বর্তমান সরকার নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। যার ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে, প্রায় তিন কিলোমিটার পদ্মাসেতু এখন দৃশ্যমান। রাজধানীর যানজট কমাতে মেট্টোরেলের কাজও অধিকাংশ প্রায় সম্পন্ন। দারিদ্র্যের হার বর্তমান সরকার মাত্র এক দশকেই ২০ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেশের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১৫ ভাগে দাঁড়িয়েছে।

রেকর্ড সংখ্যক রিজার্ভ আর মাথাপিছু আয় আতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে প্রায় ২ হাজার মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বিচার বিভাগে নুসরাত হত্যা মামলাসহ চাঞ্চল্যকর কয়েকটি হত্যা মামলার দ্রুত রায় জনগণকে খুশি করেছে।

এছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন, মানব সম্পদের উন্নয়ন, সামাজিক উন্নয়ন, বৈশ্বিক উন্নয়নের লক্ষমাত্রা অর্জন, সারাদেশে সড়ক অবকাঠামোর উন্নয়ন, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু, পরিবেশের উন্নয়ন ও দুর্যোগ মেকাবিলা, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন, বিদ্যুতের উৎপাদন প্রায় ২৪ হাজার মেগাওয়াট, স্বাস্থ্যখাতে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যের প্রশংসা করছেন বিশ্লেষকরা।

hasina

আবার একই বিশ্লেষকদের মতে, প্রথম বছরের রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারের কিছু ব্যর্থতাও রয়েছে। যেমন- দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে না পারা, পেঁয়াজ সংকট নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড়, বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যাকাণ্ডসহ বেশ কিছু চরম বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর একটি দুষ্টচক্র জড়িত হয়ে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।

এছাড়া কৃষকের ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়া, ধানের দামের তুলনায় চলের দাম বেশি হওয়া, কৃষকের গুদামে ধান সরবরাহের নামে সরকারদলীয় লোকের হাতে কার্ড চলে যাওয়া, এবারও লটারির মাধ্যমে গুদামে কৃষকের ধান সরবরাহের নামে অকৃষকদের নাম উঠা, সর্বশেষ রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ এবং তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম থাকায় সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠে। এতে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার অনেকটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়।

এদিকে সরকার ও দলকে শক্তিশালী ও আলাদা করতে প্রধানমন্ত্রী তার দলের কাউন্সিলে ৯ মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী উপমন্ত্রীকে কোনো পদে রাখেননি। দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষও এটি ভালোভাবে নিয়েছে। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দল গুছিয়ে সহযোগী সংগঠনসমূহ এবং কেন্দ্রীয় কাউন্সিল ভালোভাবে সম্পন্ন করার কাজটাও সরকারের একটি বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এছাড়া সরকার প্রধান শেখ হাসিনা গত এক বছরে দেশের উন্নয়নে এবং বিভিন্ন সরকারি কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন, যা সরকারের সাফল্য এবং দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ২০১৯ সালের ৭ মার্চ বার্লিনে নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদান রাখায় ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান উইমেন ‘লাইফটাইম কনট্রিবিউশন ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট’ অ্যাওয়ার্ড। ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য অসামান্য অবদান, জনকল্যাণ বিশেষত নারী ও শিশুদের কল্যাণে বিশেষ অবদান রাখা এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতার জন্য শেখ হাসিনাকে ভারতের ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৯ প্রদান করা হয়।

২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের সমন্বিত টিকাদান কর্মসূচিতে ব্যাপক সফলতার জন্য গ্লোবাল এলায়েন্স ফর ভ্যাকসিন্স অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই-গ্যাতি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ সম্মাননায় ভূষিত করে। ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে বাংলাদেশের অসামান্য সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ‘চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ’ সম্মাননায় ভূষিত করেছে। ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর আঞ্চলিক শান্তি ও সমৃদ্ধিতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য কলকাতা এশিয়াটিক সোসাইটি ‘ঠাকুর শান্তি পুরস্কার-২০১৮’ প্রদান করে।

আরও খবর