বাংলা ট্রিবিউন : কক্সবাজারের ছেলে এলাকার অলি-গলিতে ক্রিকেট নিয়ে মেতে থাকতেন। ২০১১ সালে বিকেএসপিতে ভর্তির জন্য কক্সবাজারে ট্রায়াল হয়। ওখানে ট্রায়াল দিয়ে টিকে যান মুরাদ। তিন মাসের ক্যাম্প থেকে অনূর্ধ্ব-১৪ জেলা দলে সুযোগ হয়ে যায়। ওখান থেকে বিকেএসপিতে সাতদিনের ক্যাম্পে সুযোগ পেয়ে ভর্তি হন বিকেএসপিতে। পর্যায়ক্রমে বয়সভিত্তিক, প্রথম বিভাগ, প্রিমিয়ার লিগে খেলে এখন তিনি বিশ্বকাপ দলে। মুরাদের প্রিয় ক্রিকেটার সাকিব। সাকিবের মতো আর্ম বল তার বোলিংয়ের অন্যতম ‘অস্ত্র’। তবে বল টার্ন করাতে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে মুরাদের। সাকিবের মতো মাঠে ব্যাটসম্যানদের ওপর আধিপত্য করতে চান মুরাদ।
কিছু দিন আগের কথা। প্রথমবার ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ খেলতে নেমে ১৩ ম্যাচে ২২ উইকেট নিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন হাসান মুরাদ। দুর্ভাগ্য তার দল বিকেএসপি সুপার লিগে খেলতে পারেনি, তাতে ব্যক্তিগত সাফল্যটা আরও উঁচুতে নেওয়া হয়নি কক্সবাজার থেকে উঠে আসা এই বাঁহাতি স্পিনারের।
১৮ বছর বয়সী মুরাদের নামের পাশে ২২ উইকেট যতটা না চোখ আটকাবে, কিপ্টে বোলিংয়ের হিসেবটা আরও বেশি আগ্রহী করে তুলবে তাকে নিয়ে। মুরাদের ইকোনোমি রেট মাত্র ৩.৭৫। ১২৪ ওভার বোলিং করে দিয়েছেন ৪৬৬ রান। এবারের লিগে তার চেয়ে কম ইকোনোমিতে বোলিং করেছেন নাসির হোসেন- ১৬ ম্যাচে ৩.৭০ ইকোনোমিতে ৩২৮ রান খরচায় ১০ উইকেট নেন তিনি।
এই বাঁহাতি স্পিনারের অনুপ্রেরণা সাকিব আল হাসান। দুজনার বোলিং কৌশলের মতো নামেও কিছুটা মিল। দুটো নামেই আছে- হাসান। সাকিবের মতোই বিকেএসপির আলো-বাতাসে বেড়ে উঠেছেন মুরাদ। তবে সাকিব অলরাউন্ডার হলেও মুরাদ বাঁহাতি স্পিনেই বেশি দক্ষ। তাইতো স্বপ্ন দেখেন সাকিবের মতো বিশ্বসেরা বাঁহাতি স্পিনার হওয়ার।
পরিবারের সদস্যদের শর্ত ছিল, ক্রিকেটের পাশাপাশি লেখাপড়াও চালিয়ে যেতে হবে। সেই শর্ত মেনেই এগিয়ে যাচ্ছেন মুরাদ। চার ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় তিনি, সবসময় উৎসাহ পান বাবা-মায়ের। ছেলের বিশ্বকাপে যাওয়ার খবর শুনে খুশিতে কেঁদে ফেলেছিলেন তারা। বাবা-মায়ের স্বপ্ন, সাকিবের মতো ক্রিকেটার হবে তাদের ছেলে।
আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ১৫ যোদ্ধাকে নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে বাংলা ট্রিবিউনে। আজ শুক্রবার থাকছে বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদ একান্ত সাক্ষাৎকার:-
বাংলা ট্রিবিউন: বিকেএসপিতে কীভাবে ভর্তি হলেন?
হাসান মুরাদ: ২০১১ সালে বিকেএসপিতে ভর্তির জন্য ট্রায়াল হয়। ট্রায়াল দিয়ে আসি, এরপর বিকেএসপিতে সাতদিনের ক্যাম্পে সুযোগ পাই। ২০১২ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হই। ওখান থেকে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের সবগুলো ধাপ খেলেছি। বিকেএসপি থেকে প্রথম বিভাগ খেলেছি দুইবার, প্রিমিয়ার লিগ খেলেছি। প্রিমিয়ার লিগে ভালো খেলায় অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সুযোগ পেয়ে যাই।
বাংলা ট্রিবিউন: ক্রিকেট খেলতে গিয়ে পরিবার থেকে কোনও প্রতিবন্ধতকার মুখোমুখি হয়েছেন?
হাসান মুরাদ: না। ওইরকম কোনও বাধা-বিপত্তি আসেনি। আল্লাহর রহমতে বাসা থেকে সবাই সহযোগিতা করেছে। পরিবারের শর্ত ছিল খেলাপড়াটাও ঠিক মতো করতে হবে। সেটা করায় কোনও সমস্যা হয়নি।
বাংলা ট্রিবিউন: বাবা-মা কীভাবে অনুপ্রেরণা দেন?
হাসান মুরাদ: মা-বাবা আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। তারা আমাকে অনেক বড় ক্রিকেটার হিসেবে দেখতে চায়। তারা স্বপ্ন দেখে আমি একদিন জাতীয় দলে খেলবো। আমিও চাই তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে।
বাংলা ট্রিবিউন: দক্ষিণ আফ্রিকায় শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ, দলের প্রস্তুতি কেমন?
হাসান মুরাদ: দল হিসেবে আমরা অনেকেদিন ধরেই একসঙ্গে আছি। ফলে সবার সঙ্গে সবার বোঝা-পড়াটা ভালো। টিম কম্বিনেশন খুবই ভালো। শেষ কতগুলো সিরিজ আমরা দাপট দেখিয়ে জিতেছি। আমি মনে করি দলে প্রস্তুতির কোনও ঘাটতি নেই। আমরা ভালো করতে আশাবাদী।
বাংলা ট্রিবিউন: দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেট পেসারদের জন্য স্বর্গরাজ্য, ওখানে স্পিনারদের ভালো করা কতটা চ্যালেঞ্জের?
হাসান মুরাদ: দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটের কথা চিন্তা করে আমরা বগুড়ায় অনুশীলন করেছি। সেখানে সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। আশা করি কোনও সমস্যা হবে না। এর বাইরে বিশ্বকাপ শুরুর আগে আমরা কিছুদিন অনুশীলন করার সুযোগ পাবো। ফলে আমাদের উইকেট ও কন্ডিশন সম্পর্কে ধারণা নিতে সুবিধা হবে। নিউজিল্যান্ডে সিরিজ খেলেছি, তখন এমন পরিস্থিতিতে বল করার অভিজ্ঞতা আছে আমার।
বাংলা ট্রিবিউন: প্রিমিয়ার লিগ ভালো গেছে, ওই পারফরম্যান্স আপনাকে কতটা আত্মবিশ্বাসী করে তুলছে?
হাসান মুরাদ: বিকেএসপি থেকে প্রিমিয়ার লিগ খেলে দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে। ওখানে অনেক সিনিয়র ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে বোলিং করেছি। সবমিলিয়ে অভিজ্ঞতাটা দারুণ। গত কিছুদিন ধরে আমার বোলিংটা অনেক ভালো হচ্ছে। কোচরা আমাকে নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করছেন। আশা করি আগামী দুই সপ্তাহ দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারবো।
বাংলা ট্রিবিউন: সাকিব কেন আপনার প্রিয় ক্রিকেটার?
হাসান মুরাদ: সাকিব ভাইয়ের বোলিংটা ভালো লাগে। তার মতো বিশ্বসেরা বাঁহাতি স্পিনার আমি হতে চাই। মাঠে যার আত্মবিশ্বাস সবাইকে ছাড়িয়ে যায়। এসব দেখতেও খুব ভালো লাগে। সাকিব ভাই ছাড়াও রবীন্দ্র জাদেজা ও নাথান লায়নের খেলাও আমার ভালো লাগে।
প্রোফাইল
নাম: হাসান মুরাদ
ডাক নাম: মুরাদ
জন্ম: ১ জুলাই ২০০১
জন্মস্থান: কক্সবাজার
উচ্চতা: ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি
পড়াশোনা: এইচএসসি
প্রথম ক্লাব: বিকেএসপি
বর্তমান ক্লাব: বিকেএসপি
ব্যাটিং স্টাইল: ডানহাতি
বোলিং স্টাইল: বাঁহাতি
প্রিয় ডেলিভারি: বল টার্ন করাতে বেশি পছন্দ করি
প্রিয় মানুষ: বাবা-মা
প্রিয় ক্রিকেটার: সাকিব আল হাসান, রবীন্দ্র জাদেজা ও নাথান লায়ন
প্রিয় বন্ধু: হুমায়ন আহমেদ
ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্ত: গত বছরের প্রিমিয়ার লিগের পারফরম্যান্স
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-