শাহীন মাহমুদ রাসেল ◑
শীতের কুয়াশা ভেদ করে পূর্ব দিগন্তে হালকা উঁকি দিচ্ছে নতুন দিনের সূর্য। মিঠেকড়া নরম রোদে অল্প অল্প বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে চারদিক। আর এ বৃষ্টি গায়ে মেখে নতুন বইয়ের গন্ধে উচ্ছল-মতোয়ারা লাল-সবুজ নীল কাপড় পরা শিশু শিক্ষার্থীরা। নতুন বছরে নতুন ক্লাসের হাতছানির সঙ্গে হাতে নতুন বই পেয়ে বাঁধভাঙা উল্লাসে মেতে ওঠে তারা। পাঠ্যবই বুকে চেপে, কাঁচা গন্ধ শুঁকে বিদ্যালয় আঙিনায় সহপাঠীদের সঙ্গে শিশুরা ভাগ করে নেয় নির্মল আনন্দ।
বছরের প্রথম দিনে কক্সবাজারের ৭ লাখ ৯৫ হাজার ৭২৬ জন শিশু শিক্ষার্থী এভাবেই মেতে উঠেছিল পাঠ্যপুস্তক উৎসবে। গোটা বিশ্বের শিক্ষার্থীরা যখন ইংরেজি নববর্ষে ছুটির আমেজে নানা বিনোদন উপভোগে ব্যস্ত ঠিক সেই মুহূর্তে বাংলাদেশের কোটি কোটি শিশু নতুন ক্লাসের বই হাতে নির্মল উৎসবে মেতে ওঠে। পাঠ্যপুস্তক বিতরণের এই উৎসব সারা বিশ্বের শিক্ষাক্ষেত্রে একেবারেই বিরল।
গ্রামীণ জনপদে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে দৃশ্যমান কোনো উৎসবের আয়োজন না থাকলেও সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনগুলোতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বলে দিয়েছে নতুন কিছু পাওয়ার আনন্দ কতোটা। একইসঙ্গে অভিভাবকদেরও যেন আনন্দের কোনো কমতি ছিলো না।
কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সাইফা শাহারিয়া মাহীর বাবা আনছার বলেন, সরকারের এই উদ্যোগের ফলে যারা বিত্তবান, মধ্যবিত্ত, হতদরিদ্র সবাই এককাতারে এসেছে। অনেকে বছরের এই সময় হয়তো সব বই কিনতে পারতো না, কিন্তু এখন সবাই বিনামূল্যে সরকারের পক্ষ থেকে বই পাচ্ছে। বছরের প্রথম দিনে বই পেয়ে পড়ালেখায় আগ্রহ বাড়ছে সকলের সন্তানদের, বাড়ছে ভালো ফলাফল ও বৃত্তির সংখ্যা। তাই অভিভাবকরাও নিশ্চিন্তে সন্তানদের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারছেন।
চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী নাদিয়া আক্তার জানায়, নতুন দিনে নতুন বই পাওয়াটা কতোটা আনন্দের তা বলে বোঝানো যাবে না। নতুন বই হাতে পাওয়ার জন্য কয়েকদিন আগে থেকেই মনের ভেতর আলাদা একটি আনন্দ কাজ করছিলো। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠেই বিদ্যালয়ের আসার জন্য তৈরি হয়েছি। এখন বই পেলাম। তাই আজ থেকেই বইগুলো উল্টেপাল্টে দেখা শুরু হবে, ২/১ দিনের মধ্যেই পড়াশুনাও শুরু হয়ে যাবে।
পূর্ব খরুলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী আঁখি আক্তারের মা নিলোফা বেগম বলেন, নতুন বছরে নতুন ক্লাসে উঠেই নতুন বই পাবে মেয়ে। শহুরে কোন আয়োজন না থাকলেও স্কুলের পক্ষ থেকে অভিভাবকদের মিষ্টি খাওয়ানো হয়েছে।
একই ইউনিয়নের দক্ষিণ খরুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্যারেড গ্রাউন্ডে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসমিনা, দ্বিতীয় শ্রেণির আঁখি, সাবিহা, চতুর্থ শ্রেণির শ্রাবনীসহ অনেকেই সকাল ৯টার দিকে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলো বই পাওয়ার জন্য। বই পাওয়ার পর বড়দের মতো তারা মুখ ফুটে আনন্দের কথা বলতে না পারলেও, একচিলতে হাসি বলে দেয় তাদের আনন্দের কথা।
খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হক বলেন, গ্রামীণ জনপদে বই উৎসবটা মনের ভেতরের আনন্দেই আলোকিত হয়। এখানে সন্তানদের সঙ্গে অভিভাবকরাও আসেন বই নিতে। কথা আর আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে হাস্যোজ্জল হয়ে ওঠে বিদ্যালয় প্রাঙ্গন।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ৭ লাখ ৯৫ হাজার ৭২৬ জন শিক্ষার্থী বছরের প্রথম দিনে বই উৎসবের আনন্দে ভাসবে। জেলা মোট নতুন বই বিতরণের লক্ষ্য মাত্রা হচ্ছে ৭২ লাখ ৮ হাজার ২২৮টি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-