চলমান মাদক পাচার প্রতিরোধে সফলতা ও ব্যর্থতায় বিদায় নিচ্ছে ২০১৯ সাল

টেকনাফে নিহত ১৪২ জন মাদক কারবারী: ৯৫ লাখ ইয়াবা উদ্ধার

ফিরে দেখা: সীমান্ত এলাকা টেকনাফ’

গিয়াস উদ্দিন ভুলু,কক্সবাজার জার্নাল ◑
দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে টেকনাফ উপজেলার প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মানুষ মাদক আর মানব পাচার নিয়ে সারাদেশে আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় মাদক,মানব পাচার ও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের অপরাধ মুলক কার্যক্রম নিয়ে এই উপজেলার মানুষ হয়েছে অনেক দূর্নামের অংশীদার।

এই দুর্নামের কিছু অংশ মুছে দিয়ে অবশেষে বিদায় নিচ্ছে ২০১৯ সাল। আলোচনার মধ্যে রয়েছে মাদক ও গহীন পাহাড়ে লুকিয়ে থাকা রোহিঙ্গা ডাকাত দল। এই পর্যটন নগরীর মানুষ যখন দিনের পর দিন মাদক পাচার নিয়ে দুর্নাম আর বদনামের আলোচনা ও সমালোচনায় খ্যতি লাভ করে ঠিক তখনি ২০১৯ সালের পহেলা জানুয়ারী থেকে বিজিবি-পুলিশ ও র‍্যাব সদস্যরা মাদক পাচার ও সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করতে কঠোর পদক্ষেপ হাতে নেয়। এই কঠোর পদক্ষেপের মধ্যেও প্রশাসনের চোখকে ফাাঁকি দিয়ে ২০১৯ সালে পাচার হয়েছে লক্ষ লক্ষ ইয়াবা।

আবার অবৈধ টাকার গরম, জায়গা জমি সংক্রান্ত ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে খুন হয়েছে প্রায় ২০/৩০ জন। পাশাপাশি এই সমস্ত খুনের সাথে সক্রিয় ভাবে জড়িত রয়েছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। অত্র এলাকায় মাদক পাচারসহ এমন কোন অপরাধ নেই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা জড়িত নেই। আবার মাদক পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িত ব্যাক্তিদের আশ্রয় পশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে অত্র উপজেলার ভদ্রতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা মুখোশধারী স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীরা।

তারা অভিমত প্রকাশ করে আরো বলেন গত এক বছর ধরে চলমান মাদক বিরোধী অভিযান থেকে নিজেকে রক্ষা করতে মাদক পাচারে জড়িত ব্যাক্তিরা অন্ধকার জগৎ ছেড়ে আলোর পথে ফিরে আসলেও মাদক পাচার অব্যাহত রেখেছে রোহিঙ্গারা। তারা প্রতিনিয়ত মিয়ানমার থেকে নিয়ে আসছে বস্তা বস্তা ইয়াবা।

তথ্য সূত্রে জানা যায়,সরকারের ঘোষনা অনুযায়ী মাদক পাচার ও সন্ত্রাস প্রতিরোধ করার জন্য ২০১৯ সালে টেকনাফ উপজেলায় কর্মরত বিজিবি, পুলিশ, র‍্যাব সদস্যরা মাদক পাচার ও সন্ত্রাসী,ডাকাতি ও বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িত অপরাধীদের নির্মুল করার জন্য সাঁড়াশী অভিযান শুরু করে।

সেই অভিযানের সফলতা অর্জন করতে গিয়ে টেকনাফ ২ বিজিবির হাতে ২০১৯ সালের শুরু থেকে এই পর্যন্ত ২১৪ কোটি, ২১ লক্ষ,৫৭ হাজার ১৩৩ টাকা মুল্যের ৭০ লাখ,৪৫ হাজার,৩৯১পিস ইয়াবা, দেশী-বিদেশী ৩০টি অবৈধ অস্ত্রসহ বিভিন্ন প্রকার বিদেশী মদ ও বিয়ার উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে বিজিবি।

এই অবৈধ মালামালের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে ৩০৩ জন অপরাধীকে আটক করতে সক্ষম হয় বিজিবি।

এদিকে মাদক বিরোধী চলমান অভিযানে ২০১৯ সালে সর্ববৃহৎ মরণ নেশা ইয়াবা আটকের সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন টেকনাফ বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল ফয়সাল হাসান খান।

এই সমস্ত ঘটনা গুলোর সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি আরো বলেন, মাদক বিরোধী অভিযান চলাকালীন সময়ে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ৩৬ জন মাদক কারবারী।

টেকনাফ মডেল থানার (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস জানান, মাদক পাচার প্রতিরোধ করার জন্য সরকার যখন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করে ঠিক তখনি এ থানায় আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী সেই কঠোর পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে চলমান মাদক বিরোধী এই অভিযানটি আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহন করি। এরপর শুরু হয় মাদক কারবারীদের নির্মুল করার জন্য সাঁড়াশী অভিযান। উক্ত অভিযান পরিচালনা করার সময় ২০১৯ সালের শুরু থেকে এই পর্যন্ত ৯৪ জন মাদক কারবারী পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। পাশাপাশি চলমান অভিযান থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য অন্ধকার জগৎ অত্র ছেড়ে আলোর পথে ফিরে আসার জন্য ১০২ মাদক কারবারী আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত এক বছরে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা রাতদিন পরিশ্রম করে ২০১৯ সালের জানুয়ারী থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১১ লাখ,৯৭ হাজার,৭১৯ পিস ইয়াবা,১২ বোতল বিদেশী মদ,৩২৭ লিটার চোলাই মদ, দেশী-বিদেশী ৩০৪টি অস্ত্র, ৯৭১ রাউন্ড তাজা গুলি,মাদক বিক্রির ১৪ লক্ষ,৭৯ হাজার নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়।

এ সমস্ত অভিযানে মাদক কারবারীসহ ৯৭৫জন অপরাধীকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।
আটক আসামীদের বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে ৫৬২টি।

অপরদিকে র‍্যাব-১৫ টেকনাফ শাখার দায়িত্বরত সদস্যরা ২০১৯ সালের শুরু থেকে এই পর্যন্ত সাঁড়াশী অভিযান পরিচালনা করে ১২ লাখ ইয়াবা,২৪ বোতল বিদেশী মদ,২৫৪ ক্যান বিয়ার, দেশী-বিদেশী অস্ত্র ১৫টি,৪৮ রাউন্ড তাজা গুলি,১৪৩ লিটার চোলাই মদ,৩০ লক্ষ মাদক বিক্রির নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এ সমস্ত ঘটনায় মামলার রুজু হয়েছে ৮১টি,১২৩জন আসামীকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮১ বাঙ্গালী,৪২ জন রোহিঙ্গা।
আবার মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করার সময় বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে মাদক ও ডাকাত দলের ১২জন সক্রিয় অপরাধী।

এই সমস্ত অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ র‍্যাব-১৫ (সিপিসি-১) কোম্পানী কমান্ডার মির্জা শাহেদ মাহতাব (এক্স পিপিএম, বিএন)।

আরও খবর