ডেস্ক রিপোর্ট ◑ সপরিবারে বান্দরবানে বেড়ানোর মধুর স্মৃতি নিয়ে স্বামী ও সন্তানদের সাথে শ^শুর বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের কচুয়ায় ফিরছিলেন কণিকা আক্তার। কিন্তু তার সে সুখের স্মৃতি যে কয়েক মিনিটেই তছনছ হয়ে যাবে তা ভাবতেও পারেননি তিনি। কিন্তু অভাবনীয়, অকল্পনীয় ঘটনাই ঘটে গেছে কণিকার জীবনে।
শনিবার (গতকাল) সকালে সীতাকু-ের ফৌজদারহাট বাংলাবাজার এলাকায় মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিজের চোখের সামনে দুই কন্যা সন্তানকে ছটফট করে মরতে এবং স্বামীকে রক্তাক্ত হতে দেখেছেন। পরে মারা যান স্বামীও। এদিকে দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন কণিকা আক্তার এবং তার অপর শিশুপুত্রও। তাদের মাথায় গুরুতর আঘাত লেগেছে। ফলে তারাও এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। টএভাবে গতকাল (শনিবার) সংঘটিত এ দুর্ঘটনায় তছনছ হয়ে গেছে একটি সুন্দর সাজানো পরিবার।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল আনুমানিক পৌনে ৮টার দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক মো. সাইফুজ্জামান মিন্টু (৪৫) তার পরিবারকে নিয়ে ব্যক্তিগত কারযোগে ঢাকা অভিমুখে যাবার পথে সীতাকু- উপজেলার ফৌজদারহাট বাংলাবাজার এলাকায় বন্দর সংযোগ সড়কে ঢাকা থেকে আসা বিপরীতমুখী একটি লরি বন্দর রোডে প্রবেশকালে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে কারটির একপাশ দুমড়ে গিয়ে সেটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলে ঘটনাস্থলেই সাইফুজ্জামান মন্টুর দুই মেয়ে আশরা আনম খান তাসফিয়া (১৩) ও তাসনিন জামান খান (১১) নিহত হয়। এছাড়া রক্তাক্ত ও গুরুতর আহত হয় তাদের বাবা সাইফুজ্জামান মিন্টু, তার স্ত্রী কণিকা আক্তার ও ছেলে মন্টু (৮)। একই সময় তাদের পাশে থাকা অপর একটি কারকেও ধাক্কা দেয় লরিটি। তবে ঐ কারের কেউ মারা যায়নি।
এসময় স্থানীয় বাসিন্দারা ও পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে হতাহতদের উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা ১১টায় মারা যান ব্যাংক কর্মকর্তা সাইফুজ্জামান মিন্টুও। এছাড়া মাথায় চোট নিয়ে আশংকাজনক অবস্থায় চমেকের ২৮নং ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন কনিকা আক্তার ও তার ছেলে মন্টু। নিহত ব্যাংক কর্মকর্তা সাইফুজ্জামানের বাড়ি চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জের কচুয়া এলাকায় বলে জানা গেছে।
এদিকে ঘটনার পরপর বারআউলিয়া হাইওয়ে থানার এস.আই কাউছার ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঘাতক লরিটি আটক করে। স্থানীয়রা জানান, এস আই কাউছার লরি চালককেও আটক করেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তাকে নিয়ে গিয়ে বন্দর রোডে বেশ কিছুক্ষণ দর কষাকষির পর ছেড়ে দেওয়া হয়। এতে ৫০ হাজার টাকা লেনদেন হয় বলেও শোনা যায়। এদিকে তিনটি প্রাণের ঘাতক লরি চালককে আটক করেও ছেড়ে দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে এস.আই কাউছারের কাছে দুই বার ফোন করলেও তিনি নানান অজুহাত দেখিয়ে কথা বলেননি। অন্যদিকে বার আউলিয়া হাইওয়ে থানার ওসি আবদুল আওয়াল বলেন, চট্টগ্রামমুখী একটি দ্রুতগামী লরি চট্টগ্রামমুখী রোড থেকে ঢাকামুখী রোড হয়ে বন্দর সড়কে প্রবেশকালে নিয়ন্ত্র হারিয়ে দুটি কারকে চাপা দেয়। এর মধ্যে একটি কারে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক ও তার পরিবারবর্গ ছিলেন। ঘটনাস্থলে তাদের কারটি দুমড়েমুচড়ে গিয়ে প্রথমে তার দুই মেয়ে ও পরে হাসপাতালে তিনি মারা যান।
চমেক পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত অফিসার এএসআই আলাউদ্দিন জানান, এ ঘটনায় ব্যাংক কর্মকর্তা সাইফুজ্জামান ও তার দুই মেয়ে মারা গেছে। এছাড়া আহত অবস্থায় ২৮ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তার স্ত্রী কনিকা আক্তার ও ছেলে মন্টু। তাদের দু’জনেরই মাথায় আঘাত লেগেছে। তাই তাদের অবস্থাও সংকটাপন্ন বলে মনে করছেন ডাক্তাররা।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-