সাইফুল ইসলাম,কক্সবাজার জার্নাল ◑
দেশি-বিদেশী পর্যটকে মুখরিত বিশে^র দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন পর্যটন স্পট। সম্প্রতি এখানকার হোটেল-মোটেলগুলোতে থাকার জায়গাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সারাদেশের স্কুল ও মাদ্রাসাগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়া মাত্রই ভ্রমন পিপাসু পর্যটকরা ভ্রমণের স্থান ঠিক করেছে কক্সবাজার। তাই সবদিকেই চাপও বেড়ে গেছে অধিকাংশ।
পর্যটকদের বাড়তি চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউসগুলোতে। এর কারণে বেড়াতে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তায় হার্ডলাইনে রয়েছে জেলা ও ট্যুরিস্ট পুলিশ। একইসঙ্গে কাজ করছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। অন্য বছরের তুলনায় চলতি বছর প্রতিটি পর্যটন স্পটে পর্যাপ্ত পরিমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, মহেশখালী আদিনাথ মন্দির, হিমছড়ি, ইনানী, দরিয়ানগর, সোনাদিয়া, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকাগুলোতে বিপুল পর্যটক সমাগম রয়েছে। এছাড়াও কক্সবাজার শহরের বার্মিজ মার্কেট, রাখাইন পল¬ী, বৌদ্ধ মন্দির ও রামুর বৌদ্ধ মন্দিরেও পর্যটক আনাগোনা প্রচুর।
গতকাল পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে গিয়ে দেখা গেছে , বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের প্রায় ৫/৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মানুষ আর মানুষ। তারা বিভিন্নভাবে আনন্দ উল্লাসে দিন কাটাচ্ছে কেউ হাটঁছেন, কেউ চেয়ারে বসে আড্ডা দিচ্ছেন, কেউ গোসলে মত্ত, আবার কেউ বিচ বাইক ও ওয়াটার বাইকে চড়ে উপভোগ করছেন। এই সৈকতটিতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। পাশাপাশি বানিজ্য মেলাতেও একই অবস্থা।
পর্যটকরা কক্সবাজারে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার না হন সে জন্য সাদা পোশাকধারী পুলিশ ও বীচে ট্যুরিস্ট পুলিশ বেশ সক্রিয় রয়েছে বলে জানান প্রশাসন।
কক্সবাজারের ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টোয়াক বাংলাদেশ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম কিবরিয়া বলেন, এখানকার চার শতাধিক হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউসে বর্তমানে ভরপুর। কিন্তু আমার জানা মতে, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সবকটি হোটেলই বুকিং হয়ে গেছে। যে কারণে যেসব পর্যটক আগে হোটেল বুকিং না করে কক্সবাজারে ভ্রমণে এসেছে, তাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল অফিসারস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ বলেন, সারাদেশের স্কুলগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ায় লোকজন সপরিবারে কক্সবাজার ভ্রমণে আসছে। যে কারণে পর্যটকদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। পাশাপশি রোহিঙ্গা আসার পর এসব হোটেল-মোটেলের বড় একটি অংশ জাতিসংঘভুক্ত সংস্থা, এনজিওসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দখলে চলে গেছে। যে কারণে এবার হোটেলগুলোতে সংকট একটু বেড়েছে।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে ঘুরতে আসা শিক্ষার্থী সোহেনা আক্তার বলেন, আমি হোটেল হিসেবে নিরিবিলি পছন্দ করি। কিন্তু এখানে এতো পর্যটক! চারদিকে অস্বাভাবিক অবস্থা। তবুও বিশাল সমুদ্রের সামনে এলে মনটা জুড়িয়ে যায়। এটাই কক্সবাজার ভ্রমণের আনন্দ।
মো. ইসলাম স্বপরিবারে কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছেন ঢাকা যাত্রাবাড়ি থেকে। তিনি বলেন, ইনানী, হিমছড়ি, রামুর বৌদ্ধবিহার দেখেছি। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো। যে কারণে সৈকত ও আশপাশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটকরা।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাখন চন্দ্র সূত্র ধর বলেন, ‘পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় আমরা খুবই সতর্ক। পর্যটকরা যেন কোনোভাবেই হয়রানি ও প্রতারণার শিকার না হন সেজন্য জেলা প্রশাসনের একাধিক ম্যাজিস্ট্রে পর্যায়ক্রমে সমুদ্র সৈকতসহ আশাপাশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে দায়িত্ব পালন করছেন। সমুদ্র সৈকতের লাবনী, সুগন্ধা, কলাতলীসহ ১১টি পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে তথ্যকেন্দ্র (ইনবক্স)। যেকোনও অভিযোগ এখানে করতে পারবে পর্যটকরা।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ডিসম্বরেই প্রতিবছর পর্যটকদের ভিড় বাড়ে। তবে এ বছর একটু বেশি মনে হচ্ছে। বিশেষ করে শুক্র-শনিবার বাড়তি চাপ থাকে এখানে। তিনি আরও বলেন, শুধু সমুদ্র সৈকত নয়, আশপাশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে রাত-দিন ২৪টি ঘণ্টা নির্দিষ্ট পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছে টুরিস্ট পুলিশ।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-