জাগো নিউজ রিপোর্ট ◑ নানা ঘটনা-দুর্ঘটনার সাক্ষী ২০১৯ সাল বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে। দুর্নীতি-অনিয়ম-অবিচারের সাজায় এ বছর ব্যস্ত ছিল আদালতপাড়া। ২০১৯ সাল সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল ফেনীর নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলা, গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলা মামলা এবং স্কুলশিক্ষার্থী রাজীব ও দিয়াকে জাবালে নূর বাসের চাপায় হত্যা মামলার রায়।
বিদায়ী বছরে আদালতে যেসব আলোচিত মামলার রায় হয়েছে, তা নিয়ে তিন পর্বের সালতামামির আজ পড়ুন প্রথম পর্ব।
নুসরাতের ভিডিও, ওসি মোয়াজ্জেমের ৮ বছর কারাদণ্ড
ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির বক্তব্য ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় সোনাগাজী মডেল থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনকে গত ২৮ নভেম্বর আট বছরের কারাদণ্ড দেন বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনাল। পাশাপাশি তাকে ১৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডও দেন আদালত।
বিদায়ী বছরের ২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফিকে শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলা। এমন অভিযোগ উঠলে দু’জনকে থানায় নিয়ে যান ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। এ সময় ওসি নিয়ম ভেঙে নুসরাতকে জেরা করেন এবং তার বর্ণনার ভিডিও ধারণ করেন।
মৌখিক অভিযোগ নেয়ার সময় দুই পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না। ভিডিওটি প্রকাশ হলে অধ্যক্ষ ও তার সহযোগীদের সঙ্গে ওসির সখ্য থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হয়।
এর মধ্যে অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারে থাকা অধ্যক্ষ সিরাজের নির্দেশে তার অনুসারীরা ৬ এপ্রিল নুসরাতকে মাদরাসার ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। ১০ এপ্রিল নুসরাত মারা যান। ওই ঘটনায় হত্যা মামলা হয়। মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলাসহ ১৬ আসামির ফাঁসির আদেশ দেন আদালতে।
ওই ভিডিও ছড়ানোয় ১৫ এপ্রিল ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
বিচার প্রক্রিয়ার পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুটি ধারায় ওসি মোয়াজ্জেমের সাজা ঘোষণা করেন বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস-শামস জগলুল হোসেন। দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার প্রথম রায় ছিল এটি।
অবৈধ সম্পদ অর্জনে গোয়ালন্দের সাবেক ওসির কারাদণ্ড
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের দুই মামলায় গত ২১ আগস্ট রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম ও তার স্ত্রী জাকিয়া ইসলাম অনুকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত- ৪।
ওই অভিযোগে সাইফুল ইসলাম ও তার স্ত্রী জাকিয়া ইসলাম অনুকে আসামি করে ২০১০ সালের ২২ জুন রমনা থানায় মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মোজাহার আলী সরদার। সম্পদের যথার্থ উৎস না থাকায় এবং বিপুল অংকের জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ নিজ দখলে রাখার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা দায়ের হয়। এরপর আরেকটি মামলা হয়।
বিচার প্রক্রিয়া শেষে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত- ৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম সাজা ঘোষণা করেন।
দুই মামলায়ই সাইফুলের সাত বছর করে কারাদণ্ড হয়। তার স্ত্রী অনুকে দুই বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। প্রথম মামলায় কারাদণ্ডের পাশাপাশি সাইফুলকে তিন লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়। তার স্ত্রী অনুকে এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাস কারাদণ্ড দেয়া হয়। তবে দুই মামলায় সাইফুলের সাত বছর কারাদণ্ড একসঙ্গে কার্যকর হবে বলে জানা যায়।
ডলার ছিনতাইয়ে এএসআই আলমগীরের কারাদণ্ড
রাজধানীর উত্তরার রাজলক্ষ্মী মার্কেট এলাকায় একটি মানি এক্সচেঞ্জের মালিকের কাছ থেকে ফিল্মি কায়দায় ডলার ছিনতাইয়ের অভিযোগের মামলায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর উত্তরা পূর্ব থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আলমগীর হোসেনকে (পরে সাময়িক বরখাস্ত) দুই বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার দ্রুত বিচার আদালত- ৩। পাশাপাশি পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয় তাকে।
১৫ লক্ষাধিক টাকার সমপরিমাণ মার্কিন ডলার ছিনতাইয়ের অভিযোগে নড়াইল জেলার নড়াগাতি থানার খাসিয়াল মধ্যপাড়ার বাসিন্দা ইলিয়াস ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে মামলাটি দায়ের করেছিলেন।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, লতিফ ইম্পেরিয়াল মার্কেটের এইচএস মানি এক্সচেঞ্জের মালিক ইলিয়াসকে ২০১৭ সালের ৪ এপ্রিল বিকেলে উত্তরার রাজলক্ষ্মী মার্কেটের সামনে থেকে ডিবি পরিচয়ে সাদা একটি প্রাইভেটকারে তুলে নেয় কয়েকজন। একপর্যায়ে কালো কাপড় দিয়ে তার চোখ বেঁধে ইলিয়াসের কাছে থাকা মানি এক্সচেঞ্জের ১৮ হাজার ৮০০ মার্কিন ডলার (১৫ লাখ চার হাজার টাকা) ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। ওই সময় ইলিয়াসের চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হলে আসামিরা তাদের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু উপস্থিত জনতা গাড়ি আটকে মাসুম বিল্লাহকে ধরে ফেলে। অন্য চারজন পালিয়ে যায়।
পরে পুলিশ মাসুম বিল্লাহকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তারই সূত্র ধরে ওই ঘটনায় এএসআই আলমগীর হোসেনের সংশ্লিষ্টতা পায় পুলিশ। তদন্তের ধারাবাহিকতায় এএসআই আলমগীর ও মাসুম বিল্লাহর বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়। সে বছরের ১৯ জুন আদালতে অভিযোগ গঠন হয়। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার পর ঢাকার দ্রুত বিচার আদালত- ৩ এর বিচারক দেবদাস চন্দ্র অধিকারী রায় ঘোষণা করেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-