দুটো বিষয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে আলোচনা

রফিকুল ইসলাম :

কার্যত দু’টি বিষয়ের সুরাহা হলেই সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান সহজ। আর এ দু’টি বিষয়ে কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজী নয়। নাগরিকত্ব ও রোহিঙ্গা পরিচিতির মধ্যে বারবার আলোচনা ঘুরপাক খাচ্ছে বলে সূত্র জানান। এর মধ্যেও বাংলাদেশে আশ্রিত হিন্দু রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ফেরত যেতে সম্মত হলেও মুসলিম রোহিঙ্গারা কোনভাবে রাজী হচ্ছে না।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) মিয়ানমারের উচ্চ পর্যায়ের ডেলিগেশন ও আসিয়ানের মানবিক প্রতিনিধি দল-ইরাত এর সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের দফায় দফায় অনুষ্ঠিত  আলোচনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের সাথে মিয়ানমার সরকারের উচ্চ পর্যায়ের তৃতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিনের আলোচনা শেষে রোহিঙ্গারা তাই বলেছেন।

আলোচনা শেষে টেকনাফের ২৭ নং জাদিমোরা ক্যাম্প থেকে আসা রোহিঙ্গা নেতা মুজিবুল্লাহ বলেন,মিয়ানমার আমাদের কোন অধিকার ফিরে দিতে ইচ্ছুক বলে মনে হয় না। নাগরিকত্ব যাচাই বা যে এনভিসির জন্য লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাদের বারংবার একই পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে। ঘুরে ফিরে সেই এনভিসির কথা বলে যাচ্ছে মিয়ানমার। ডেলিগেশন টিমকে ১৯৫৮ সালে মিয়ানমারের দেয়া ন্যাশনাল রেজিস্ট্রেশন কার্ড বা এনআরসি দেখানোর পরও তারা মানতে নারাজ বলে তিনি জানান।

নাগরিকত্বের প্রমাণ পত্র দেখিয়ে মুজিবুল্লাহ বলেন, ১৯৯০ সালে তার বাবা কাদির হোছনকে অং সান সুচি স্বাক্ষরিত এনএলডি সদস্য পদ দিয়েছিলেন। তাদের কাছে ১৮০৫ সালের জায়গা জমির বৈধ দলিলও রয়েছে। কিন্তু এর পরও তাদেরকে এনভিসির জন্য আবেদন করতে হবে।

রোহিঙ্গা রিফুউজি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান সিরাজুল মোস্তফা বলেন, মিয়ানমার আমাদের বিশ্বাস করছে না। যাবতীয় প্রমাণ পত্র অস্বীকার করছে। তাই আমরাও মিয়ানমার সরকারের ওপর কোন আস্হা রাখতে পারছি না। টেকনাফের -২৬ নং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা বদরুল ইসলাম বলেন,আমাদের সব ধরণের ডকুমেন্ট থাকা সত্বেও মিয়ানমার ফিরে গিয়ে আমাদেরকে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ কারী হিসেবে এনভিসি নিতে বলে ডেলিগেশন টিম জানিয়ে দিয়েছে।

সেতারা বেগম বলেন, মিয়ানমার যা করছে সবই বিশ্ববাসীর চোখে ধুলো দেয়ার মত। আইসিজে কোর্টে মামলার চাপে তারা আলোচনার নামে নাটক করতে এসেছেন। আমাদের পক্ষ থেকে শেষ পর্যন্ত নাগরিকত্ব ও চলাফেরার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান করলে আমরা ফেরত যেতে আগ্রহী বলে জানিয়েছি। প্রত্যেুত্তরে কোন আশ্বাস ও নিশ্চয়তা মিয়ানমার দতে পারেনি বলে সে জানান।

রোহিঙ্গাদের সাথে দ্বিতীয় দিনের আলোচনার শেষে বৃহস্পতিবার দুপুর ২ টার দিকে সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলেন মিয়ানমারের ৯ সদস্যের ডেলিগেশন নেতা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইন্টারন্যাশনাল অর্গনাইজেশন অ্যান্ড ইকোনমিক ডিপার্টমেন্টের মহা- পরিচালক চ্যান আইয়ে। তিনি বলেন, মুসলিম উদ্বাস্তু নেতারা বেশ কিছু দাবী পেশ করেছেন। যা আমাদের পক্ষে কিছু বলার ছিল না।তাদের দাবী গুলো সরকারের আরও উপর মহলে উপস্হাপন করা হবে।

তিনি বলেন,বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পাদিত দ্বি পাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী দুটি অভ্যর্থনা সেন্টারের মাধ্যমে উদ্বাস্তএদের ফিরে যাওয়ার আহবান করা হয়েছে। মিয়ানমারের বিদ্যমান ১৯৮২ সনের নাগরিকত্ব আইনানুযায়ী প্রত্যেককে এনভিসি কার্ড পূরণ পূর্বক নাগরিকত্বের আবেদন করতে হবে। ট্রানজিট ক্যাম্পে কিছুদিন অবস্হানের পর ফেরত যাওয়া উদ্বাস্তুরা নিজ নিজ পাড়া গ্রামের যেতে পারবে। কিন্তু এতে তারা রাজী হচ্ছে না বলে তিনি জানান।

রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার ৪৪ জন রোহিঙ্গা আলোচনায় অংশ নেন। বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি কুতুপালংয়ের হিন্দু রোহিঙ্গাদের সাথেও পৃথক আলোচনায় অংশ নেন মিয়ানমার ডেলিগেশন টিমের সদস্যগণ। হিন্দু রোহিঙ্গাদের ১৫ নেতা আলোচনায় আলাদা একটি কক্ষে অংশ নেন। হিন্দু উদ্বাস্তু পরিমল ধর বলেন,আমরা ফির যেতে চাই। তবে আমাদেরকে মংডু শহরের আশপাশে রাখার দাবী জানিয়েছি।
মিয়ানমারের পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশ নেন,মিয়ানমার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইন্টারন্যাশনাল অর্গনাইজেশন অ্যান্ড ইকোনমিক ডিপার্টমেন্টের মহা- পরিচালক চ্যান আইয়ে,সামাজিক কল্যাণ ত্রাণ এবং পূণঃবাসন মন্ত্রণালয়ের দূর্যোগ ব্যবস্হাপনা বিভাগের মহা পরিচালক ড. কো কো নাইং,পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক বিভাগের উপ মহা পরিচালক থেট উইন,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের পুলিশ কর্ণেল জ থী হ, শ্রম,অভিবাসন এবং জনসংখ্যা মন্ত্রণালয়ের পরিচালক ইন তোয়ে,রাখাইন প্রদেশের জেলা প্রশাসক সোয়ে অং,পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক বিভাগের উপ পরিচালক ওয়ে উই মিন, তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাংবাদিক নে লিন ও ল লিন অং।

দক্ষিণ -পূর্ব এশিয়ান দশ রাষ্ট্র ভিত্তিক জোট আসিয়ানের সামাজিক ও  মানবিক সংস্হা – ইরাতে প্রতিনিধি দলের সদস্য নাগুইন কি আন,আবদুল আলিম সিদ্দিক বিন আবদুল হাদি,আমেল কপেল কপিলি,গ্যারেক ইনদিনা,নুরা মোঃ ইউসুফ, মিয়াস রাসমি ও মেথাউই থে চুন উয়ান।

আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোঃ মাহবুব আলম তালুকদার, অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও  প্রত্যাবাসন কমিশনার মোঃ শামসুজ দৌহা,উখিয়া থানার ওসি মোঃ আবুল মনসুর  সহ সরকারী বিভিন্ন কর্মকর্তাগণ।

আরও খবর