ডাকটিকিট ছুঁয়ে শোনা যাবে ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম…’

বাংলা ট্রিবিউন ◑ মুজিব বর্ষ উপলক্ষে বছরব্যাপী বিশেষ আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। প্রস্তাবিত কর্মপরিকল্পনা অনুসারে টেলিযোযোগ বিভাগ ২০২০ সালের প্রথম দিন থেকেই মুজিব বর্ষ পালন করবে এবং তা শেষ করবে ১৬ ডিসেম্বর বা তার কাছাকাছি সময়ে।

বছরব্যাপী আয়োজনের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো জানুয়ারির ১ তারিখে দেশের সব মোবাইল ফোনে ভয়েস রেকর্ডের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের উল্লেখযোগ্য অংশ সম্প্রচার। এছাড়া বিশেষায়িত ডাকটিকিট প্রকাশ যাতে স্পর্শ করলেই বঙ্গবন্ধুর ভাষণের উল্লেখযোগ্য অংশ শোনা যাবে। এছাড়া এ যাবত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যত ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়েছে তা নিয়ে একটি অ্যালবামও প্রকাশ করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমাদের আয়োজন থাকবে বছরব্যাপী। মুজিব বর্ষকে ঘিরে পরিকল্পনায় অনেক কিছুই আছে। আরও কিছু যুক্ত হতে পারে। যাই করি না কেন সবকিছুতেই বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রাষ্ট্রীয় আয়োজনের পাশাপাশি আমরা ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকেও পৃথকভাবে আয়োজন রেখেছি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ খাতে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদান রয়েছে। আমরা তা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করবো।’

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ মুজিব বর্ষ উদযাপন উপলক্ষে যে প্রস্তাবিত কর্মপরিকল্পনা করেছে তা থেকে জানা গেছে, জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে মুজিব বর্ষ পালন করতে চায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। এদিন রাত ১২টা ১ মিনিটে মোবাইল ফোনে ভয়েস রেকর্ডের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের উল্লেখযোগ্য অংশ সম্প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

একই দিন ‘মেহনতি মানুষের বন্ধু’ শিরোনামে বিশেষ ভয়েস ও ডাটা প্যাকেজ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে। বাস্তবায়ন করবে রাষ্ট্রায়ত্ব মোবাইল অপারেটর টেলিটক। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ কোটি টাকা।

একই দিন বঙ্গবন্ধুর সচিত্র আত্মজীবনীমূলক ই-বুক প্রস্তুতকরণ শুরু হবে এবং তা দোয়েল ল্যাপটপে বিনামূল্যে সংযোজন করা হবে। এ জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ লাখ টাকা।

৭ মার্চ ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ‘টকিং স্ট্যাম্প’ প্রকাশ করবে। এটি হবে একটি বিশেষায়িত ডাকটিকিট যাতে স্পর্শ করলে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের উল্লেখযোগ্য অংশ শোনা যাবে। সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা।

১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীর দিনে স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোল্ড ফয়েল যুক্ত এই ডাকটিকিট অবমুক্ত করবেন। এজন্য বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে ২ কোটি টাকা।

একই দিন পোস্ট কার্ডের মাধ্যমে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠানো হবে। এতে থাকবে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বার্তা ও স্বাক্ষর। দেশের ৯ হাজার ৮৮৬টি ডাকঘরের মাধ্যমে দেশের ৪ কোটি পরিবারে পাঠানো হবে। এর জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি টাকা।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ টেলিগ্রাফের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর পাঠানো স্বাধীনতার বার্তাটি পাথরে মুদ্রিত ভাস্কর্য তৈরি করে শেরে বাংলা নগরে বিটিসিএল’র কার্যালয় প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হবে ২৬ মার্চ। ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা।

১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখে দেশের সব মোবাইল অপারেটরদের অংশগ্রহণে ঢাকা শহরসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরে গ্র্যান্ড র‌্যালি আয়োজন করা হবে। বিষয়: বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নের সমন্বয়। সম্ভাব্য ব্যয় ১০ লাখ টাকা।

১২ মে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর উৎক্ষেপণ দিবসে আয়োজন করা হয়েছে ‘নক্ষত্রের দেশে বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। এদিন গাজীপুরের সজীব ওয়াজেদ জয় উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাতব্যাপী অনুষ্ঠান আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা।

১৭ মে টেলিযোগাযোগ উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যসংঘ দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে। এ অনুষ্ঠানের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ টাকা।

১৪ জুন মহাকাশ যাত্রা শীর্ষক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বেতবুনিয়ায় বাংলাদেশের প্রথম উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র স্থাপন উপলক্ষে জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ জনগণের উপস্থিতিতে রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় স্থানীয় উপজাতিদের অংশগ্রহণে রাতব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

২৯ থেকে ৩১ জুলাই বিশ্ব ডাক দিবস উপলক্ষে ডাকটিকিট প্রদর্শনী করা হবে তিন দিনব্যাপী ‘মুজিব পেক্স-২০২০’ শীর্ষক আয়োজনে। এ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর ওপর প্রকাশিত সব ডাক টিকিটি নিয়ে একটি অ্যালবাম প্রকাশ করা হবে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি টাকা।

১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে খুলনায় নির্মিতব্য বঙ্গবন্ধু পোস্টাল মিউজিয়াম উদ্বোধন করা হবে। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকিটও প্রকাশ করা হবে। সম্ভাব্য ব্যয় ৬ কোটি টাকা।

২৩ সেপ্টেম্বর ‘বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে আমরা’ শীর্ষক স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ টাকা।

১৮ থেকে ২১ অক্টোবর স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ -এর ওপর নির্মিত বিশেষ তথ্যচিত্রের প্রদর্শনী করা হবে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ লাখ টাকা।

৩ নভেম্বর বাংলাদেশ ক্যাবল শিল্প সংস্থা খুলনার প্রধান কার্যালয় প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর পূর্ণ অবয়বের ভাস্কর্য স্থাপন করা হবে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা।

২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর অথবা কাছাকাছি সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশের অভ্যুদয় শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে। এ আয়োজনে থাকবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতি। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ টাকা।

আরও খবর