২৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রশস্ত হচ্ছে রামু-মরিচ্যা সড়ক

লোকমান হাকিম ◑

ফাইল ছবি

অবশেষে দীর্ঘদিন পর আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে “রামু-মরিচ্যা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প”। ২৬৬ কোটি ব্যয়ে শীঘ্রই দীর্ঘ ১৬ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন কাজ শুরু হচ্ছে। পাশাপাশি এই সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে জনগণের দূর্ভোগ যেমন কমবে, তেমনি যোগাযোগের আমুল পরিবর্তন ঘটবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্রে জানা যায়, “রামু-ফতেখাঁরকুল-মরিচ্যা জাতীয় মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ” নামে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর এরই মধ্যে প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ করে পরিকল্পনা কমিশন। এরপর গত (১০ ডিসেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটি উপস্থাপন করে পরিকল্পনা কমিশন।

ওই সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কক্সবাজার জেলার “রামু-ফতেখাঁরকুল-মরিচ্যা জাতীয় মহাসড়ক (এন-১০৯ ও ১১৩) যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ” প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ২৬৬ কোটি টাকা। আগামী ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় প্রকল্পটি পাস হয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে এই প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হবে। যথাসম্ভব শীঘ্রই টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। যদি কোন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি না হয় তাহলে আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে এই সড়ক প্রশস্ততা উন্নীতকরণের কাজ শুরু করা হবে।

সওজ সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে, ভূমি অধিগ্রহণ, সড়ক বাঁধে মাটির কাজ, বিদ্যমান পেভমেন্ট প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ, সার্ফেসিং, বাস বে ও ট্রাক বে নির্মাণ, পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ, আরসিসি বক্স কালভার্ট, আরসিসি সসার ড্রেন, সিসি ব্লক উইথ জিও-টেক্সটাইল এবং টো-ওয়াল নির্মাণ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এই মহাসড়কটি অন্যান্য জাতীয় মহাসড়কের সমমান প্রশস্ততায় উন্নীত হবে। পাশাপাশি সড়ক যোগাযোগও আগের চেয়ে নিরাপদ হবে।

জানা গেছে, রামু-মরিচ্যা সড়কের ১৬ কিলোমিটারজুড়ে অসংখ্য গর্ত আর গর্ত। ব্রীজ, কালভার্টগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ। একপর্যায়ে সড়কটি যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। যেখানে মরিচ্যা থেকে রামু চৌমুহনী আসতে সময় লাগতো আধা ঘণ্টা, সেখানে লাগে এক থেকে দুই ঘণ্টা। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাতায়াতকারী মানুষের।

কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রামু-ফতেখাঁরকুল-মরিচ্যা সড়কটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়কের রামু চৌমুহনী হতে ফতেখাঁরকুল হয়ে মরিচ্যা হয়ে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। সড়ক দু’টির দৈর্ঘ্য ১৬ দশমিক ৭২ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৩ দশমিক ৭ মিটার। এর মধ্যে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ১৪ দশমিক ২১৬ কিলোমিটার। সড়কটির পাশে ৮ কিলোমিটারের মধ্যে রামু সেনানিবাস এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ক্যাম্প অবস্থিত।

তাছাড়া সেনাবাহিনীর ভারী যানবাহনসহ প্রচুর মানুষ ও অন্যান্য যানবাহন সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। সড়কের গুরুত্ব অনুধাবন করে সড়কটি জাতীয় মহাসড়কের গেজেটভুক্ত করা হলেও সড়কটি এখন জেলা মহাসড়ক মানে রয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে রামু থেকে মরিচ্যা পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৭২৬ কিলোমিটার মহাসড়ক যথাযথ মান ও উভয় পাশে ১ দশমিক ৫ মিটার হার্ডশোল্ডার ৭ দশমিক ৩ মিটার প্রশস্তে উন্নীতকরণের জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে মোট ২৬৬ কোটি টাকায় প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছে একনেক। ২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট জানিয়েছেন।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে রামু-কক্সবাজার ও উখিয়া উপজেলার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। পাশাপাশি প্রকল্প এলাকার জনগণের আর্থসামাজিক অবস্থাতেও ইতিবাচক প্রভাব রাখবে এই মহাসড়ক।

আরও খবর