যে ৩ আমলে মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে জান্নাত

ক্ষণস্থায়ী এ পৃথিবী থেকে প্রত্যেক প্রাণীকে আল্লাহ তায়ালার দেয়া নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর তাঁর কাছে ফিরে যাওয়াই হলো মৃত্যু।
মৃত্যুর অনিবার্যতা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।’ মৃত্যু চির সত্য বিষয়। মৃত্যুকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।

আর তাই মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা মোমিন বান্দাকে মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে জান্নাতের পথে আহ্বান করছেন।

সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদেরকে জান্নাতের ওয়াদা করেছেন এবং জাহান্নামের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন । সুতরাং যে ব্যক্তি জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত হলো এবং জান্নাতে প্রবেশ করলো সে মহা সফলতা অর্জন করলো…।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘অল্প আমলই নাজাতের জন্য যথেষ্ট।’ সুতরাং জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে ডান হাতে আমলনামা নিয়ে জান্নাতে যেতে হলে একনিষ্ঠতার সঙ্গে অল্প আমলের বিকল্প নেই।

হাদিসে এমন ৩টি আমলের ব্যাপারে দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, যারা সহজ ৩টি আমল করবে তাদের জান্নাতে যাওয়া একেবারেই সহজ। বাধা হয়ে থাকবে শুধু মৃত্যু। আর তাহলো-

(১) সকাল-সন্ধ্যায় নিয়মিত ‘সাইয়েদুল ইসতেগফার’ পড়া:

সাইয়েদুল ইসতেগফার আল্লাহর এত চমৎকার প্রশংসায় ভরপুর যে, যদি কেউ নিজের গোনাহ মাফের জন্য অনুতপ্ত হৃদয়ে আল্লাহর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা চায়; আল্লাহ ওই ব্যক্তি ক্ষমা করে দেন। হাদিসে এসেছে-

‘কেউ যদি আন্তরিক বিশ্বাসের সঙ্গে সকাল ও সন্ধ্যায় সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়ে। আর সেদিন সে মারা যায়, আল্লাহর ইচ্ছায় সে জান্নাতে যাবে।’ (বুখারি)

আর তা হলো-

মূল আরবি: ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺃَﻧْﺖَ ﺭَﺑِّﻲ ﻟَﺎ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﺖَ ﺧَﻠَﻘْﺘَﻨِﻲ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﺒْﺪُﻙَ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻬْﺪِﻙَ ﻭَﻭَﻋْﺪِﻙَ ﻣَﺎ ﺍﺳْﺘَﻄَﻌْﺖُ ﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّ ﻣَﺎ ﺻَﻨَﻌْﺖُ ﺃَﺑُﻮﺀُ ﻟَﻚَ ﺑِﻨِﻌْﻤَﺘِﻚَ ﻋَﻠَﻲَّ ﻭَﺃَﺑُﻮﺀُ ﻟَﻚَ ﺑِﺬَﻧْﺒِﻲ ﻓَﺎﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻟَﺎ ﻳَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﺖَ

বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্বতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিং শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বি-নিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউ বিজান্মি ফাগফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া কোনো প্রভু নাই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার বান্দা। আমি সাধ্যমত তোমার কাছে দেয়া ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতি গুলো পালনে সচেষ্ট আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। আমাকে যে নেয়ামত দান করেছ, তা স্বীকার করছি এবং আমি আমার পাপগুলো স্বীকার করছি। অতএব, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কেননা তুমি ছাড়া কেউ ক্ষমাকারী নেই।’

(২) প্রতিদিন ‘সূরা মুলক’ এক বার পড়া:

কোরআনুল কারিমের ২৯তম পারার প্রথম সূরা এটি। এ সূরাটি প্রতিদিন একবার পড়লে মুমিনের জান্নাত সুনিশ্চিত। দৈনন্দিন আমলের সূরাগুলোর মধ্যে এটি একটি। যা প্রতিদিন এশার নামাজের পর পড়া হয়।

এ ছাড়াও যাদের সূরাটি মুখস্থ আছে, তারা চাইলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজেই এ সূরাটি তেলাওয়াত করতে পারে। নামাজে সূরা মুলক এর আয়াতগুলো বুঝে বুঝে তেলাওয়াত করলে অন্যরকম আবহ তৈরি হয়। নামাজে একনিষ্ঠতা তৈরি হয়।

এ সূরায় মহান আল্লাহর স্মরণ ও তার প্রতি ভয় সৃষ্টি হয় এবং নেক কাজের আগ্রহ বেড়ে যায়। সূরা মুলক পড়ার মাধ্যমে নামাজ আদায় করলে দিনব্যাপী অগণিত খারাপ কাজের মাঝে একটি ভালো কাজ করার অন্যরকম অনুভূতি পাওয়া যায়।

সূরাটির নিয়মিত পাঠকারীকে কবরের আজাব থেকে সুরক্ষা করবেন আল্লাহ তায়ালা। কেয়ামতের দিন সূরা মুলক তার তেলাওয়াতকারীকে সুপারিশ করে জান্নাতে নিয়ে যাবে।

(৩) প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ‘আয়াতুল কুরসি’ পড়া:

প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর কোরআনুল কারিমের মর্যাদাপূর্ণ আয়াত ‘আয়াতুল কুরসি’ পাঠ করা। এ আয়াতে বান্দা তাওহিদের শ্রেষ্ঠ ঘোষণাগুলো তেলাওয়াত করে।

আর তা হলো-

মূল আরবি : اَللهُ لآ إِلهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ، لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَّلاَ نَوْمٌ، لَهُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ، مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيْطُوْنَ بِشَيْئٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَآءَ، وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ، وَلاَ يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَ هُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ-

বাংলা উচ্চারণ : আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম। লা তা’খুযুহু সিনাতুঁ ওয়ালা নাঊম। লাহূ মা ফিস্ সামা-ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্বি। মান যাল্লাযী ইয়াশফাউ’ ই’ন্দাহূ ইল্লা বিইজনিহি। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউহিতূনা বিশাইয়্যিম্ মিন ‘ইলমিহি ইল্লা বিমা শা-আ’ ওয়াসিআ’ কুরসিইয়্যুহুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বি, ওয়ালা ইয়াউ’দুহূ হিফযুহুমা ওয়া হুওয়াল ‘আলিইয়্যুল আ’জিম। (সূরা আল-বাক্বারা আয়াত-২৫৫)

অর্থ : আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। কোনো তন্দ্রা বা নিদ্রা তাঁকে পাকড়াও করতে পারে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই মালিকানাধীন। তাঁর হুকুম ব্যতিত এমন কে আছে যে, তাঁর নিকটে সুফারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পিছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসমুদ্র হতে তারা কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, কেবল যতুটুকু তিনি দিতে ইচ্ছা করেন তা ব্যতিত। তাঁর কুরসি সমগ্র আসমান ও জমিন পরিবেষ্টন করে আছে। আর সেগুলোর তত্ত্বাবধান তাঁকে মোটেই শ্রান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও মহান’।

যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ‘আয়াতুল কুরসি’ পড়ে, ওই ব্যক্তি ও জান্নাতের মাঝে এতোটুকু দূরত্ব থাকে যে, সে যেন শুধুমাত্র মৃত্যুবরণ করছে না বলেই (কবরে) জান্নাতের নেয়ামতগুলো উপভোগ করতে পারছে না।

সুতরাং মুমিন বান্দার উচিত, সকাল-সন্ধ্যায় সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়া। দিনের যে কোনো সময় সূরা মুলক পড়া এবং প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়া।

আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে সুনিশ্চিত জান্নাত লাভে উল্লেখিত আমলগুলো যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

আরও খবর