রফিকুল ইসলাম, উখিয়া ◑
আবদুল মাজেদ(৫৫) পেশায় একজন দিন মজুর। উখিয়ার থাইংখালী বাজারে এ দোকান ওদোকান খালি ঘুরছে, আর শাক-সবজি, মাছের দাম দেখছে। কিন্তু এসব পণ্য কেনার মত সামর্থ তার নেই। ঘরে স্ত্রী সহ পাঁচ ছেলে মেয়ে। জানালেন, যেভাবে হোক অন্তত কিছু তো নিতে হবে। এদিকে রোহিঙ্গাদের কারণে আগের মত নিয়মিত কাজ কর্মও মিলছে না, আয় রোজগারও তেমন নেই বলে জানালো সে।
ভরা মৌসুমেও আশ্রিত রোহিঙ্গার ভারে ভারাক্রান্ত উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন খোলা ও পাইকারী বাজারে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহার্য তরি তরকারী ও শীতকালীন সবজির দাম আকাশচুম্বী। পেঁয়াজের সাথে পাল্লা দিয়ে শীতকালীন সবজির দামেও চলছে কমা-বাড়ার খেলা। গত কিছুদিন ধরে দাম বাড়তে থাকা পেয়াঁজের মূল্য নির্ধারণে সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার আশ্বস্ত করা হলেও তা সম্ভব হযনি। অনেক পরিবারে পিয়াজ ছাড়াই ছলছে রান্না।
এখানকার বিভিন্ন স্থায়ী এবং অস্থায়ী হাট – বাজারগুলোতে নিত্যপণ্যের দামে বিস্তর তারতম্য লক্ষ্য করা গেছে। হাট বাজার মনিটরিং এর ব্যবস্হা না থাকায় দোকান গুলোতে সরকার প্রদত্ত নিত্যপণ্যের দামের তালিকাও টাঙানো হয়নি। এক শ্রেণির অধিক মুনাফাখোর ও মজুদদার ব্যবসায়ীরা পিয়াজ, আদা, রসুন,প্রয়োজনীয় তরি তরকারি সবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। সরেজমিনে পাইকারী ও খুচরা মার্কেটে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহে পেয়াজ, আদা, রসুন, মাছ, ও কাঁচা শাকসবজির দাম ১০ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে। মাছের বাজারে যেন আকাল চলছে।
তবে কিছু কিছু পন্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মাছ, মাংস, পেয়াঁজ, রসুন, আদা ও সবজির দাম সাধারন ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বাজারে আসা সাধারণ ক্রেতাদের ক্ষোভ ঝাঁড়ছে মুখের ভাষায়। এ যেন মগের মুল্লুক, দেখার মত কেউ নেই। কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, উখিয়ায় পিয়াজের (বার্মিজ) কেজি ১৭০ থেকে ২০০ টাকা,বড় পিয়াজ ১২০ – ১৩৫, আদা প্রতি ১৮০ টাকা, ছোলা ৭০ টাকা, মসুরডাল ১২০ টাকা, ডিম প্রতি হালি ৩২ টাকা থেকে বেড়ে ৪০ টাকায় দাড়িয়েছে।
এছাড়া অপরিবর্তিত রয়েছে চাল, চিনি, আটা, ময়দা, গুড়ো দুধ ও তরল দুধের দাম। অন্যদিকে কাঁচা শাকসবজির দাম বেড়েছে কয়েকগুন হারে। কাঁচা মরিচ কেজি ৪০-৫০ টাকা, প্রতি কেজি শসা ৫০ টাকা, ঝিঙে ৫৫-৬০ টাকা , চিচিঙ্গা ৫০ টাকা , ফুলকপি ৬০-৭০ টাকা,বাধা কপি ৩৫-৪০ টাকা, ধনে পাতা ১৫০-১৬০ টাকা কেজি, তিত করলা ৬০ টাকা, বরবটি ৫০০ টাকা , মুলা ৩০-৩৫ টাকা, নতুন আলু ৬০-৭০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০ -৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে বেগুন স্হানীয় ৬০ টাকা,ফার্ম বেগুন ৩৫-৪০ টাকা, টমেটো ৮০-১০০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য সবজির বাজারমূল্য বেড়েছে প্রায় সমানতালে।
স্হানীয় নিন্ম ও নিন্ম মধ্য বিত্তের লোকজনের খুব দুরাবস্থা যাচ্ছে বলে লোকজন জানায়। তাদের স্হানীয় ভাবে উৎপাদিত উল্লেখিত পণ্য মৌসুমের এসময়ে বিক্রেতারা কেনার লোক পেত না। অগ্রহায়ণ মাসে কার মুলা,বেগুন কে খায় সে অবস্থা হওয়ার কথা। কিন্তু একদিকে ১২ লক্ষ অতিরিক্ত রোহিঙ্গার চাপ,বহিরাগত দেশী বিদেশী বিভিন্ন এনজিওতে চাকরিরত বর্ধিত কয়েক হাজার লোক।
অন্যদিকে সমাজে ইয়াবা ব্যবসায়ী সহ অসৎ পথে আয়কারী ও দূর্ণীতির কালো টাকার কাছে সাধারণ লোকজন পেরে উঠছে না বলে লোকজনের ক্ষোভ। সরকারী ভাবে নিয়মিত বাজার নজরদারির কথা থাকলেও কারো মাথা ব্যথা নেই। ফলে এসব নিত্যপণ্যের বাজারে চলছে নৈরাজ্যে ও সাধারণ মানুষের বাড়ছে দীর্ঘঃশ্বাস।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-