ডেস্ক রিপোর্ট ◑ শুক্রবার রাত আটটা। খুরুশকুল রাস্তার মাথা থেকে টমটম যোগে মায়ের ওষুধ কিনতে পুরাতন পান বাজারের উদ্দেশ্যে আসছিল শফিক নামের এক যুবক। সেই টমটমেরই আগে থেকে আরো ৪ কিশোর ছিল। টমটমটি সিকদার মহল অতিক্রম করে আসার পরপরই সেই ৪ কিশোর ছুরি ধরে শফিককে ভয় দেখিয়ে নগদ ২ হাজার ও ১ টি মোবাইল সেট কেড়ে নেয়। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৬ টা।
কক্সবাজার সিটি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সিজান টমটমযোগে শহর থেকে তার কর্মস্থল হোটেল সায়মন বীচে যাচ্ছিল। সেই টমটমেই বাজারঘাটা থেকে উঠে আরো এক এনজিও কর্মী।
পথিমধ্যে ভোলাবাবুর পেট্রোল পাম্পের সামনে থেকে উঠে আরো তিন যুবক। এদের একজন বসে চালকের পাশেই। টমটমটি পৌরসভার সামনে আসতেই গাড়ি ঘোরানোর নির্দেশ চালকের পাশে বসা থাকা যুবকটি। এসময় সায়মন বীচের কর্মী ও এনজিও কর্মী বাধা দিলে অন্য দুই যুবক তাদেরকে ধারালো ছুরি দেখায়। পরে টমটম ঘুরে পুনরায় পূর্ব দিকে যাত্রা করে। কিন্তু লালদিঘীর পাড় পৌছার আগেই সায়মন বীচের কর্মী সিজান ও এনজিওকর্মীর কাছ থেকে ১ টি ল্যাপটপ , তিনটি মোবাইল ও নগদ ১০ হাজার টাকা কেড়ে নেয় যাত্রীবেশি ছিনতাইকারীরা। পরে ভিকটিমদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে টমটম নিয়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীকারী দলটি। এর আগের দিন সন্ধ্যায় লাইট হাউজ এলাকায় সায়মন বীচের আরেক কর্মী হরিদাসের কাছ থেকে একই কায়দায় বিকাশ থেকে তোলা ২২ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল সেট ছিনিয়ে নেয় স্বশস্ত্র ছিনতাইকারীরা। এভাবেই প্রতিনিয়ত যাত্রীবেশি সশস্ত্র ছিনতাইকারীদের হাতে সর্বস্ব হারাচ্ছে অনেকেই। কিন্তু সদর থানা পুলিশ বলছে দু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায়ই সময় শহরের বাসটার্মিনাল, বিডিআর ক্যাম্প, সাবমেরিন ক্যাবল গেইট, গরুর হালদা রাস্তার মাথা, রুমলিয়ারছড়া, তারাবনিয়ার ছড়া কবরস্থান রোড়, চকরিয়া ষ্টিল সংলগ্ন রোড়, বড় পুকুর রোড়, ম্যালেরিয়া অফিস রোড়, টেকপাড়া নূর ম্যানশনের সামনের গলি, বড় বাজার রাখাইন পাড়ার গলির মুখ, আইবিপি রোড়, ভোলা বাবুর পেট্রোল পা¤্প, পৌরসভা গেইট, হাসপাতাল সড়ক, জলিলের দোকানের মোড়, জাম্বুর মোড়, কবিতা চত্বর, হোটেল প্রবালের মোড়, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র সংলগ্ন গলি, পুলিশ লাইন, চন্দ্রিমা উদ্যানের মুখ সহ আরো কয়েকটি স্পটে ছিনতাইকারীদের কাছে সর্বস্ব হারাচ্ছে জনগন।
সরকারের একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, শহরের বেশিরভাগ ছিনতাইকারীর ১৪ থেকে ২৪/২৫ বছর বয়সী। এদের অনেকেই মাদকাসক্ত। এরা দেশিয় ছুরি চাকু সহ নানা ধারালো অস্ত্র বহন করে। এদের একাংশ মোটর সাইকেলে চড়ে, একাংশ সিএনজি কিংবা টমটম ভাড়া নিয়ে বাকিরা বিভিন্ন গলির মুখে অবস্থান করে ছিনতাই করে। তবে ছিনতাইয়ের আগে এরা টার্গেট নির্ধারণ করে। এজন্য রয়েছে এদের রেকি টিম। ওই টিমের নির্দেশনা অনুযায়ী টার্গেটের উপর হামলা পড়ে ছিনতাইকারীরা। সর্ব্বোচ্চ ২/৩ মিনিটের মধ্যেই ছিনতাইকারীরা তাদের কাজ সেরে সটকে পড়ে ঘটনাস্থল থেকে। পরে আশেপাশের লোকজন ছিনতাইকারীদের চিনতে পারলেও পুলিশের কাছে তাদের পরিচয় দেয় না। এই কারণে ছিনতাইকারীরা বেশিরভাগ সময় আইনের হাত থেকে বেঁচে যায়।
‘আমরা কক্সবাজারবাসীর’ সমন্বয়ক নাজিম উদ্দিন বলেন, পুলিশ ব্যস্ত সালিশি বৈঠক ও অভিযোগ নিয়ে। এই সুযোগে উঠতি তরুনরা বিপদগামী হচ্ছে। তাদের হাতে নিঃস্ব হচ্ছে স্থানীয়রা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত মেহমানগন। এথেকে পরিত্রান না পেলে পর্যটন শহরের সম্মান ক্ষুন্ন হবে।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি (তদন্ত) খায়রুরজাম্মান বলেন, প্রায়ই প্রতিনিদনই ছিনতাইকারী আটক করা হচ্ছে। নিয়মিত অভিযানে শহরের অনেক চিহ্নিত ছিনতাইকারী আটক হয়েছে। দু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, দেখেন ছিনতাইয়ের অধিকাংশ ঘটনায় পুলিশ পর্যন্ত আসেনা। ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করতে আসে না। এছাড়া ছিনতাইকারীরা তো কোন না কোন এলাকায় বসবাস করে। সেসব এলাকা পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা হয় না। জনগনের এমন মনোভাব পরিবর্তণ হওয়া জরুরী।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-