মাহাবুবুর রহমান :
দ্রব্যমূল্যের চাপে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। বাজারে এখন সব কিছুর দাম বাড়তি হওয়াতে আয়ের সাথে ব্যয়ের সঙ্গতি মিলছেনা বলে জানান ক্রেতারা। বিশেষ করে নি¤œ আয়ের মানুষ বাজার পরিস্থিতি নিয়ে খুবই অসহায়। এদিকে বাজার অস্থিতিশীল করতে ব্যবসায়িদের কারসাজিকে দোষলেও সরকার সেটা নিয়ন্ত্রন করতে না পারা চরম ব্যর্থতা বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
শহরের ঘোনারপাড়াতে বসাবাসকারী মোঃ আরিফুল ইসলাম চাকরী করেন একটি আবাসিক হোটেলে তিনি দাবী করেন,গত কয়েক মাসে যেহারে বাজারে বিভিন্ন জিনিস পত্রের দাম বেড়েছে তার বিপরীতে আমাদের একটাকাও বেতন বাড়েনি। ফলে আমরা খুবই অসুবিধায় সংসার চালাতে।
তিনি জানান,সম্প্রতি বাজারে কোন তরকারী ৬০ টাকার নীচে নেই,আরেকটু ভাল তরকারী চাইলে দাম আরো বেশি, এছাড়া মসলার বাজার আরো অস্থির। পেঁয়াজের অবস্থা সবাই জানে ২০০ টাকার নীচে বাজারে পেঁয়াজ নেই, এছাড়া আদা রসুন সহ সব কিছুর দাম বেড়েছে। এছাড়া বাচ্চাদের দুধ থেকে শুরু করে ডাইপার পর্যন্ত এখন দাম বাড়া। তিনি জানান,আজকে কিনেছি একদাম সেই পণ্য কালকে গেলে দাম বাড়তি মনে হয় কেমন দেশে বসবাস করছি। দাম কেন বাড়ছে কেউ জানেনা।
বেসরকারী স্কুলের শিক্ষক আলমগীর মাহমুদ বলেন,আমরা শিক্ষক মানুষ কাউকে বলতে পারিনা সইতেও পারিনা। বেতন যা পাই বাজার খরচেই সব চলে যায়, মাস শেষ হওয়ার আগেই সব টাকা খরচ হয়ে যায় শেষে সংসার চালাতে ধার দেনা করতে হয়। তিনি বলেন, একটু ভাল মাছ কিনতে গেলে ৫০০ টাকা কেজি, ভাল তরকারী ৬০ টাকা নুন মরিচ সহ সব কিছুর দাম অস্বাভাবিক তাহলে কিভাবে চলবো। অথচ বাজারে সব পণ্য দেখা যাচ্ছে প্রচুর সরবরাহ আছে কোন জিনিসের ঘাটতি নেই। আমার জানা মতে সম্প্রতি চালের দামও বেড়েছে কেজি প্রতি ২/৩ টাকা করে।
পেশকার পাড়া এলাকার রিক্সা চালক মনজুর মিয়া বলেন, বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে সব চেয়ে কষ্টে আছে আমাদের মত নি¤œ আয়ের মানুষরা। কারণ সারাদিন রিক্সা চালিয়ে ৮০০ টাকা মত আয় করি। সেখানে থেকে মালিকের ভাড়া, গ্যারেজ ভাড়া দিয়ে ৫০০ টাকার মত থাকে এখন বাজারে গেলে মাছ তরকারি কিনতেই সব টাকা চলে চায় চাল ডালতো দূরের কথা। এখন বলেন বাসা ভাড়া, ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া চিকিৎসা খরচ এগুলো কোথায় পাব। আমি জানিনা সরকার কেন বাজার নিয়ন্ত্রন করতে পারছেনা। আর এখন শীতকালিন সবজি বাজারে এসেছে তারপরও তরি তরকারীর দাম কমেনি এমনকি শাক কিনতে গেলেও ২০টাকার নীচে পাওয়া যায় না।
এদিকে বড় বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ির সাথে কথা বলে জানা গেছে মূলত বাজার নিয়ন্ত্রন করে রাজধানী থেকে। কিছু সিন্ডিকেট আছে যারা নানান ভাবে এই বাজার নিয়ন্ত্রন করে। বাংলাদেশে বর্তমানে যে পরিমান পেঁয়াজ আছে তা আরো ৬ মাস বসে খেতে পারবে তবুও কিছু মানুষের কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়তি। আর তরিতরকারীর বিষয়টি ভিন্ন এগুলো স্থানীয় ভাবে দাম উঠানামা করে।
আলাপকালে রামু কলেজের অধ্যাপক জহির উদ্দিন বলেন, সরকার যেখানে প্রতিদিন ঘোষণা দিচ্ছে দেশের মানুষের আয় বেড়েছে, বেতন বেড়েছে,ব্যবসা ভাল হচ্ছে সেখানে আর্ন্তজাতিক ভাবে কিছুটা প্রভাব পড়ে তাই অনেক সময় বাজারদর বাড়ে। আবার কিছু আছে সিন্ডিকেটের কারণে সংকট তৈরি করে মানুষকে জিম্মি করে দাম বাড়ায়। বিষয়ই যাই হউক আমি মনে করি বর্তমানে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে দেশে সাধারণ মানুষ খুবই বিরক্ত এটা সরকারের বুঝা উচিত। তাই দ্রুত বাজার দর নিয়ন্ত্রনে বিশেষ মনযোগ দিতে হবে।
এ ব্যাপারে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, সাধারণ মানুষ এখন ব্যবসায়িদের হাতে জিম্মি আর সরকার সেখানে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এই চরম দূর্ভোগেও মানুষ রাস্তায় নামছেনা সেটাই সরকারের জন্য মঙ্গল।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-