বাংলা ট্রিবিউন • মিয়ানমার সরকারের প্রতি রোহিঙ্গাদের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানে নতুন ফর্মুলা দিয়েছেন চীনের রাষ্ট্রদূত এইচ ই লি জিমিং। তিনি বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরাতে ‘১+১+২’ ধারণা নিয়ে এসেছি।’’ রবিবার (২৪ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত ‘রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসনের উপায় সন্ধান’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এই ফর্মুলার কথা জানান।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘যেসব রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা হয়েছে, মিয়ানমারে ফেরার বিষয়ে তাদের কাছ থেকে ইতিবাচক বক্তব্য পেয়েছি। এক্ষেত্রে একটি রোহিঙ্গা পরিবার মিয়ানমারে ফিরতে পারবে, এমন একজনকে প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচন করা হবে। চীন এই রোহিঙ্গাদের দু’টি মোবাইল ফোন দেবে। এর একটি নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে থাকবে। অন্যটি থাকবে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা তার পরিবারের কাছে।’
‘১+১+২’ ফর্মুলার বাস্তবায়নের উপায় প্রসঙ্গে লি জিমিং বলেন, ‘প্রতিনিধিরা মিয়ানমারে গিয়ে পরিস্থিতি দেখবেন। রাখাইনের পরিস্থিতি ভালো ও নিরাপদ কিনা, তা দেখবেন। একইসঙ্গে পরিবারের সঙ্গে তাৎক্ষণিক তথ্য ভাগাভাগি করবেন। এরই আলোকে রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আগানো যাবে কিনা, সে বিষয়ে ভাবতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই স্বেচ্ছাসেবক প্রতিনিধিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে মিয়ানমার সরকারকেই।’
বাংলাদেশ ও মিয়ানমার—দু’টি রাষ্ট্রই সার্বভৌম দেশ উল্লেখ করে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মিয়ানমারের কী করতে হবে, সে বিষয়ে কিছু বলার অধিকার চীনের নেই। মিয়ানমারের সব বৈদেশিক নীতি সমতা ও পারস্পরিক সম্মানের ওপর নির্ভর করে। আমি ও ইয়াঙ্গুনে থাকা আমার সহকর্মী, আমরা কেবল বার্তা পৌঁছে দেই। একইসঙ্গে সাজেশন তৈরিতে সহায়তা করি। আমরা কোনও দেশকে বাধ্য করি না—এমন কোনও কাজ করতে, যেটা তারা করতে চায় না।’
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি তিনটি আহ্বান জানিয়ে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘প্রথমত, রোহিঙ্গাসহ কক্সবাজারের স্থানীয়দের ওপর বেশি করে আলো ফেলতে হবে। কারণ, তারাও ভুগছে। দ্বিতীয়ত, অর্থ সহায়তার ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা বজায় রাখাসহ যথাযথ তদারকি করতে হবে। যেন অর্থটা ঠিকমতো রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের জন্য খরচ করা যায়। তৃতীয়ত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ সংলাপ বজায় থাকে।’
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)-এর স্থানীয় প্রতিনিধি স্টিভেন করলিস বলেন, ‘আমার দীর্ঘ কর্মজীবনে এমন অবর্ণনীয় শরণার্থী শিবির দেখিনি, যেটি দেখেছি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে। বাধ্য হয়েই তারা সেখানে বসবাস করছে। আমি যাদের সঙ্গে কথা বলেছি, মিয়ানমারে নিরাপত্তা পেলে তাদের শতকরা ৯৭ জনই স্বদেশে ফিরে যেতে চান। তাদের এ নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন।’
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ, বাংলাদেশ পোস্টের প্রধান সম্পাদক শরীফ শাহাব উদ্দিন, বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডিয়ান হাইকমিশনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সাবিনা ইয়াসমিন সিদ্দিক প্রমুখ।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-