যুগান্তর : চাঁদা দাবিসহ নানা অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক থেকে বহিষ্কৃত রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, গোলাম রাব্বানী এবং দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বর্তমানে যুক্তরাজ্য বসবাস করছেন সিদ্দিকী নাজমুল আলম।
আর সেখানে বসেই দুদকের এই অভিযান বিষয়ে মতামত জানালেন নাজমুল।
টেন্ডার, চাঁদাবাজি ও তদবিরের মতো কোনো রকম দুর্নীতিতে জড়িত নন দাবি করে আওয়ামী লীগের ক্ষমতাসীন এমপি- মন্ত্রীদের ওপর আঙুল তুললেন ছাত্রলীগের এই সাবেক শীর্ষ নেতা।
তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালালে অনেক এমপি-মন্ত্রীর যাবজ্জীবন হবে।’ তারা সবাই ধোয়া তুলসিপাতা নয় বলে তীর নিক্ষেপও করলেন। গত ১৮ নভেম্বর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এসব মন্তব্য লেখেন সিদ্দিকী নাজমুল আলম।
পাঠকের উদ্দেশে তার সেই ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো –
‘ছাত্রলীগের দায়িত্ব ছেড়েছি প্রায় চার বছর এতদিন যাবত দেশের বাইরেই থাকি। মাঝখানে ছাত্রলীগের সম্মেলনে এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সব মিলিয়ে তিন-চার মাস দেশে ছিলাম। দায়িত্বে থাকার সময় টেন্ডার, চাঁদা ও তদবির কমিটি বানিজ্য কোনটিই করিনি। তারপরেও দুদক অনুসন্ধান চালাচ্ছেন অবৈধ সম্পদের খোঁজে।
কোনো অন্যায় না করে এত বড় কষ্টের দায় কেন নিতে হচ্ছে জানিনা। কষ্ট পাচ্ছি না। নিজের প্রতি ঘেন্না হচ্ছে। এই চার বছরে ধার করেছি প্রায় অনেক টাকা। আমার পাওনাদারও আছেন আমার ফ্রেন্ডলিস্টে। তাদের কাছ থেকে সময় নিয়েছি ফেরত দিব বলে। তারাও ত্যাক্ত বিরক্ত আমার প্রতি।
তবে কি ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাটের সঙ্গে আমার রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিল এই কারনেই আমার শাস্তি? সম্রাট ভাই আমাকে আদর করতেন, স্নেহ করতেন রাজনীতির মাঠেই তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক হয়েছিল।
সম্রাট ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল এই কারণে দুদক আমার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালালে অনেক এমপি, মন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের তো তাহলে যাবজ্জীবন কারাদন্ড হবে কারন……….
# প্রায় সব্বাই দুধে ধোয়া তুলসিপাতা #’
নাজমুল আলমের সেই স্ট্যাটাসের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় ওঠে। এ নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে গত কয়েকদিন ধরেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে শুদ্ধি অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই অংশহিসেবে ৩০ সেপ্টেম্বর দুদকের মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) সাঈদ মাহবুব খানকে তদারক কর্মকর্তা ও পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে প্রধান করে ৭ সদস্যবিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়।
অনুসন্ধান টিমের প্রাথমিক তদন্তে শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপ্রদর্শিত ও অবৈধ সম্পদের তথ্য হাতে পেয়েছে দুদক। সে অনুযায়ী, এবার অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে সংস্থাটি।
গত ৩০ অক্টোবর প্রভাবশালী ২৩ ব্যক্তি ও তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬শ’ ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয় দুদক। হিসাবগুলো আলোচিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, যুবলীগের সম্রাট, জি কে শামীম, খালেদসহ অন্যান্য ব্যক্তি ও তাদের প্রতিষ্ঠানের। এ তালিকায় আছেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমও।
বিভিন্ন ব্যাংকে এদের আমানতের স্থিতির পরিমাণ ১ হাজার ২৭ কোটি টাকা। বর্তমানে অ্যাকাউন্টগুলোর লেনদেন স্থগিত ও কিছু জব্দ করা হয়েছে। তাদের সম্পদের খোঁজ করতেই বেরিয়ে এসেছে এ তথ্য।
সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে সিদ্দিকী নাজমুল আলম যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ পায়।
সেসব খবরে জানানো হয়, সাবেক এ ছাত্রলীগ নেতা বর্তমানে লন্ডনে অন্তত ৪ টি কোম্পানির মালিক। নাজমুল আলমের প্রতিটি কোম্পানির বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সেসব প্রতিবেদনে।
তবে সে সময় এসব খবরে চটে যান নাজমুল। নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্টে এ ক্ষোভ প্রকাশ করে তার সঙ্গে তামাশা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন।
তার কোম্পানি সম্পর্কে যেসব তথ্য দেয়া হয়েছে তার পুরোটাই ভুয়া বলে দাবি করেন। সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে সাবধানে সংবাদ করতে পরামর্শ দেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-