ডেস্ক রিপোর্ট • দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদন কেন্দ্র কক্সবাজারের উপকূলীয় মাঠে চাষীরা যে মুহূর্তেই নতুন মৌসুমের উৎপাদন কাজে নেমেছে তখনই বাজারে গুজব ছড়ানো হচ্ছে- এবার লবণ সংকট দেখা দিয়েছে। বাস্তবে দেশে লবণের কোন সংকট নেই জানিয়ে কক্সবাজারের লবণ চাষী, ব্যবসায়ী ও মিল মালিকগণ গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানিয়েছেন, এখনো পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টন লবণ মাঠে ও গুদামে মওজুদ রয়েছে। যা দিয়ে আগামী তিন মাস দেশের মানুষের চাহিদা মিটবে অবাধে।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্টিত দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে মতবিনিময় সভায় লবণ চাষী, ব্যবসায়ী ও মিল মালিকগণ এসব জানান। তারা অভিযোগের সুরে বলেন, পেঁয়াজের পর দেশের গুজব রটনাকারি চক্র উদ্দেশ্যমূলকভাবে লবণের নতুন মৌসুম শুরুর প্রাক্কালে এমন গুজব ছড়িয়ে লবণ শিল্পটিকে ধ্বংশ করার চক্রান্তে নেমে পড়েছে। মোবাইলে যারা লবণ সংকটের গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে তাদের চিহ্নিত করার দাবিও জানানো হয়েছে।
কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আফসারের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত মতবিনিময় সভায় স্থানীয় লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি শামশুল আলম লবণ পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিয়ে জানান-‘আমাদের মাঠ ও গুদামে যে পরিমাণ লবণ মওজুদ রয়েছে তা বিক্রি করতে পারছি না। লবণের খুচরা মূল্য নেমে এসেছে কেজিতে ৪/৫ টাকা। ন্যায্য মূল্য না পেয়ে হতাশ চাষীরা নতুন উৎপাদনেই মাঠে নামতে পর্যন্ত রাজি হচ্ছে না। সেখানে কিনা লবণের ‘সংকট গুজব’ ছড়ালে কি আমাদের বিশ্বাস করতে হবে ?’
লবণ মিল মালিক শামশুল আরো বলেন, গেল মৌসুম যখন শুরু হয় তখনও মাঠে মওজুদ ছিল তিন লাখ সাতাশ হাজার মেট্রিক টন লবণ। গেল মৌসুমে উৎপাদন হয় ১৮ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন লবণ অর্থাৎ সর্বসাকুল্যে ২১ লাখ ৫১ হাজার মেট্রিক টন মওজুদে এসে দাঁড়ায়। অথচ দেশে লবণের বার্ষিক চাহিদা রয়েছে ১৬ লাখ ২১ হাজার মেটিক টন। সেই হিসাবে দেশে কেবল মাত্র গেল মৌসুমের উৎপাদিত লবণেই আরো উদ¦ৃত্ত রয়েছে ৪ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন। তবুও কেন দেশে লবণ সংকটের গুজব ছড়ানো হয় তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন তিনি।
অপরদিকে বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির সভায় নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন-‘দেশে লবণের বাজার স্বাভাবিক রয়েছে, কোন ধরনের ঘাটতি নাই। একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী লবণের সংকট দেখিয়ে দাম বৃদ্ধির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। ইতিমধ্যে একটা কুচক্রিমহল লবণের কেজি ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তারা মূলত এ শিল্পকে ধ্বংস করতে চাচ্ছে। অপপ্রচারকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।’
কক্সবাজারের ইসলামপুর লবণ মিল এলাকার মিল মালিক অছিয়র রহমান জানান- গুজবটি এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে, দেশের নানা প্রান্তের লবণ ব্যবসায়ীরা সকাল থেকেই মোবাইলে গুদাম মালিকদের নিকট লবণ কিনতে চাচ্ছেন। এমনকি অনেক ক্রেতা আরো বেশী দামেও লবন কিনতে ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করেছেন। লবণ ব্যবসায়ীরা জানান, আয়োডিন মিশ্রিত প্যাকেটজাত লবণ কেজি প্রতি ১১ টাকা করে বিক্রি হলেও মাঠ পর্যায়ে পাইকারি মূল্য রয়েছে কেজি প্রতি ৪/৫ টাকা মাত্র।
এদিকে কক্সবাজারের চাল ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন ও কাজল কান্তি পাল জানান, বাজারে চালের কেজি প্রতি ৩/৪ টাকা বৃদ্ধি হলেও তা স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে। কেননা অগ্রহায়ণ মাসে নতুন চাল বাজারে আসা মাত্রই দাম আরো নেমে যাবে বলেও জানান তারা।
সভায় কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার বলেন, লবণের সংকট নিয়ে কেউ গুজব রটানোর প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কক্সবাজার জেলার উপকুলীয় মাঠে এখনো প্রচুর পরিমাণের লবণ মওজুদ রয়েছে বলেও তিনি জানান।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-